বেপরোয়া: জঙ্গলে বাঘ, রাস্তায় হাতি। তবু এরই মধ্যে চলছে নিজস্বী তোলার হিড়িক। রবিবার লালগড়ে ঝিটকার জঙ্গলে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
বাঘের দেখা নেই। উল্টে লালগড়ে দাপাচ্ছে বুনো হাতির দল। তাদের তাণ্ডবে বাঘ খুঁজতে বসানো ক্যামেরাও ভেঙেছে। দাঁতালের দাপাদাপিতে বাঘের খোঁজ আপাতত শিকেয়।
বন দফতর সূত্রের খবর, লালগড়ের মেলখেরিয়ার জঙ্গলের যে এলাকায় বাঘ ধরতে শনিবার দু’টি ফাঁদ-খাঁচা বসানো হয়েছিল, সেখানেই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি হাতি। লাগোয়া আমলিয়ার জঙ্গলেই গাছে বাঁধা দু’টি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে হাতি। ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “আমলিয়ার জঙ্গলে দু’টি ট্র্যাপ ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে হাতিরা। লালগড়ের একটি আশ্রমের পাঁচিলও ভেঙেছে। আগে হাতির দলকে এলাকা থেকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
লালগড়ের জঙ্গল এলাকায় মোট সাতটি ক্যামেরা বসিয়েছিল বন দফতর। মেলখেরিয়া-মধুপুরের জঙ্গলে বসানো তারই একটিতে গত শুক্রবার ধরা পড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে। লালগড়ে কোথা থেকে বাঘ এল তা নিয়ে চর্চার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম ও উৎসাহীদের আনাগোনা শুরু হয় জঙ্গলে। বনকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, অত্যুৎসাহীরা জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় বাঘ খোঁজার প্রক্রিয়া ধাক্কা খেয়েছে। তার উপর একই জঙ্গলে হাতি থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে। এমন অবস্থায় বাঘের খোঁজ কবে মিলবে, তা নিয়ে সংশয়ে বন দফতর। তবে দফতরেরই এক সূত্রের খবর, মধুপুরের কাছে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। এ দিন রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ধেড়ুয়ায় বাঘের দেখা মিলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাই, আপাতত ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা থাকছে।
শনিবার দিনভর ফাঁদ পেতে আড়ালে অপেক্ষায় ছিলেন বনকর্মীরা। রাতে ফাঁদ-খাঁচায় বাঁধা ছাগলের আর্ত চিৎকারে তাঁরা ভেবেছিলেন, বাঘ ধারেপাশেই রয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে ভুল ভাঙে। মেলখেরিয়ার জঙ্গলে তখন ঢুকেছে ১৫-২০টি হাতি। বাঘের আশা ছেড়ে হুলাপার্টি নিয়ে হাতি তাড়াতে নামেন বনকর্মীরা। তারই মাঝে হাতি লোকালয়ে ঢুকে মাটির বাড়ি, আশ্রমের পাঁচিল ভাঙে। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ৮-৯টি পূর্ণবয়স্ক হাতি মেলখেরিয়ার জঙ্গলে রয়েছে। শাবক সমেত বাকি হাতিগুলি শনিবার রাতে আমলিয়া, কৃষ্ণকুমারী, আমডাঙা হয়ে লালগড় ব্লক সদরে হাজির হয়। মাঠে নেমে আলু খেয়েছে তারা। কৃষ্ণকুমারী গ্রামে কেচন সিংহের মাটির বাড়িও ভেঙেছে।
গভীর রাতে লালগড় ব্লক সদর হয়ে শাবক সমেত ১১ টি হাতি পডিহার জঙ্গলে চলে যায়। তবে পূর্ণবয়স্ক দু’টি হাতি লালগড় ব্লক অফিসের কাছে বনমালী আশ্রমের পাঁচিল ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আশ্রমের সন্ন্যাসী স্বামী দেবানন্দ বলেন, “হাতি দু’টি মনের সুখে আনাজ এবং কলাগাছ খেয়ে ঘণ্টাখানেক দাপিয়ে বেড়ায়।” শেষে আশ্রমের আবাসিকেরা হাতি দু’টিকে কোনওমতে খেদিয়ে দেন। বিকেলে ফের ঝিটকার জঙ্গলরাস্তায় দাপিয়েছে একটি দাঁতাল।
বাঘ আর হাতি, জোড়া ভয়ে আপাতত ঘুম উড়েছে লালগড়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy