Advertisement
০৪ মে ২০২৪
আমার পড়াশোনা: মাধ্যমিকের আর ৬ মাস, কী করে নম্বর বাড়বে ভূগোলে

ম্যাপ পয়েন্টিং-এ পুরো নম্বর চাই

• মাধ্যমিকে ভূগোলের প্রশ্নপত্রে প্রথমেই যেটি থাকে, সেই ম্যাপ পয়েন্টিং দিয়ে শুরু করা ভাল। ছাঁকা নম্বর পাওয়া গেলেও এর প্রস্তুতিতে অবহেলা সবচেয়ে বেশি। ভাল নম্বর পেতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে ম্যাপ পয়েন্টিং অভ্যাস করাটা জরুরি। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, ঠিক জায়গায় পয়েন্ট করছ কিনা। অনেক সময় নির্দিষ্ট নদী বা পর্বত দেখাতে গিয়ে সামান্য উপর-নীচ হয়ে যায়।

অনিন্দিতা ঘোষ
বিদ্যাসাগর কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং প্রাক্তন হেড এগজামিনার শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

মাধ্যমিকে ভূগোলের প্রশ্নপত্রে প্রথমেই যেটি থাকে, সেই ম্যাপ পয়েন্টিং দিয়ে শুরু করা ভাল। ছাঁকা নম্বর পাওয়া গেলেও এর প্রস্তুতিতে অবহেলা সবচেয়ে বেশি। ভাল নম্বর পেতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে ম্যাপ পয়েন্টিং অভ্যাস করাটা জরুরি। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, ঠিক জায়গায় পয়েন্ট করছ কিনা। অনেক সময় নির্দিষ্ট নদী বা পর্বত দেখাতে গিয়ে সামান্য উপর-নীচ হয়ে যায়। কোনও কোনও পরীক্ষক হয়তো এতে নম্বর দিয়ে দেবেন, কিন্তু ভাগ্যে কড়া পরীক্ষক পরলে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কেটেও দিতে পারেন। তাই অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ দেখে পয়েন্টিং প্র্যাক্টিস করাটা ভাল। মাধ্যমিকে এটা লাগে না। কিন্তু বাড়িতে এই ভাবে অভ্যাস করলে ভারতের ম্যাপ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যায়। নির্ভুল পয়েন্টিং করাটা আয়ত্তে আসে।

দুই নম্বর বিষয়টি হল স্কেল সম্বন্ধে একটা প্রাথমিক জ্ঞান থাকা দরকার। দেখাতে বলেছে বিন্ধ্য পর্বত। তুমি এমন বড় বড় পাহাড় আঁকলে যে পুরো দক্ষিণ ভারতটাই ঢেকে গেল। এমন করলে চলবে না।

তৃতীয়ত, পয়েন্টিং করার সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকের সাহায্য নেওয়া ভাল। এবং সেটিও যেন অর্থব্যঞ্জক হয়। ডট দিয়ে শহর চিহ্নিত করো, লৌহ আকরিক উৎপাদক অঞ্চলের অবস্থান দেখাতে গিয়ে Fe চিহ্ন ব্যবহার করো। প্রতীক ব্যবহার করলে তার অর্থ বোঝানোর জন্য ‘ইনডেক্স’ উল্লেখ করতেই হবে।

আলাদা করে প্রতিটি বিষয়ে ম্যাপ পয়েন্টিং অভ্যাস করা ভাল। মানে, ভারতের নদনদীগুলো একটা ম্যাপে অভ্যাস করো, আর একটায় পর্বতমালা, আর একটা খনিজ উৎপাদক অঞ্চল ইত্যাদি। পরে টেস্ট পেপার বা পুরনো প্রশ্নপত্র দেখে যখন অভ্যাস করবে, তখন একটা ম্যাপে যা -যা চাওয়া হয়েছে পয়েন্ট করো।

এর পরেই যেটা খেয়ালে রাখতে হবে, সেটি হল প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যথাযথ ছবি আঁকা হচ্ছে কিনা। বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাতের বর্ণনা দেওয়ার সময় পাশে পরিচালন বৃষ্টি, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টির ছবিগুলো যেন থাকে। শুধু ছবি আঁকলেই আবার হবে না। সঙ্গে ঠিকঠাক ‘লেবেলিং’ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি থাকলে কিন্তু নম্বর কাটা যাবে। তাই প্রস্তুতির সময় ছবি আঁকাটা আলাদা ভাবে অভ্যাস করো।

অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক ভূগোলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আবার পাশে ম্যাপটা এঁকে দিতে পারলে ভাল হয়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মৎস্যচাষ বা উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার সময় আনুষঙ্গিক ম্যাপ আঁকতে পারলে পুরো নম্বর পাওয়া যায়। বা ভারতের কার্পাস শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে প্রশ্ন এলে আগে ও পরের ছবি পৃথক ভাবে এঁকে বুঝিয়ে দিতে পারলে খুবই ভাল হয়। তবে, এগুলি আবশ্যক নয়।
না আঁকলেও নম্বর পাবে।

মানচিত্র আঁকাতে চাইলে তার অভ্যাসটা আগে থেকে করতে হবে। ক্লােস যখন পড়ানো হচ্ছে, তখন থেকেই। কারণ পরীক্ষার আগে হুড়োহুড়ি করে এই মানচিত্র আঁকার অভ্যাস করা যায় না। অন্য দেশের মানচিত্র আঁকাতে পারো-না পারো, ভারতের মানচিত্র আঁকাটা অভ্যাস করো। এর একটা কৌশল আছে। বাজারে প্রচলিত কয়েকটি বইয়ে এই কৌশলের উল্লেখও আছে।

বড় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সঙ্গে যে ছোট প্রশ্নগুলো থাকে, সেগুলোর উত্তর দিতে ভুল হয় না যেন। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ভাল ছাত্রছাত্রীরাও তাড়াহুড়োয় এক-আধটা ছোট প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে চলে আসে। আবার কোনও একটি বিভাগে হয়তো দশটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে, পরীক্ষার্থী ন’টি লিখে এসেছে। তার আগে সে যে ভাবে উত্তর দিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে দশটি প্রশ্নের উত্তরই সে দিতে পারত। তখন পরীক্ষক হিসাবে আমারই আক্ষেপ হচ্ছে, যথার্থ মূল্যায়ন করার
সুযোগ দিল না বলে। এই জন্য খাতা জমা দেওয়ার আগে ভাল করে মিলিয়ে নিও সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছো কি না।

আর একটা ভুলও খুব হয়। সেটি হল প্রশ্নটি ভাল ভাবে না-পড়েই উত্তর লিখতে বসে যাওয়া। যেমন, প্রশ্ন এসেছে পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রগুলির কেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন? আর পরীক্ষার্থী ভারতের বিভিন্ন লৌহ ইস্পাত কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে লিখে চলে গেল। সে হয়তো জানে কারণটা। উত্তরের মধ্যে সেই ছোঁওয়াও রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন না পড়ায় যথার্থ উত্তরটা লিখতে পারল না।

আবার যথার্থ উত্তর লিখলেও সেটা যেন একটানা না হয়। একটানা উত্তরে সমস্ত পয়েন্টগুলো খুঁজতে গিয়ে হয়রান হন পরীক্ষক। কিছু পয়েন্ট নজর এড়িয়ে যায়। তখন একটা মাঝারি নম্বর মেলে। পুরো নম্বর চাইলে পয়েন্ট, সাব-পয়েন্টে উত্তর তৈরি করা ভাল। ভারতের লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রের কেন্দ্রীভবনের উত্তরে কাঁচামাল, জলের সুবিধা, পরিবহণ—প্রতিটা পয়েন্ট আলাদা ভাবে লিখলে এক নজরেই মূল্যায়ন করে পুরো নম্বর দিয়ে দেবেন পরীক্ষক। উত্তরে যে জায়গায় জোর দিতে চাইছ, সেখানে ‘আন্ডারলাইন’ টানতে পারো। যা-ই করো, বেশি লিখো না। প্রশ্নে যা জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটুকুই লিখো। একগাদা লিখে নিজের আর পরীক্ষকের সময় নষ্ট করাটা বোকামি।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

বিশেষ করে টিকা অথবা দুই-তিন নম্বরের প্রশ্নের উত্তরে সংজ্ঞা, উদাহরণ বা যেটুকু জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটিই লিখো। এক নম্বরের প্রশ্নে উত্তর লিখছো যখন, বানান ভুল যেন না হয়।

কোনও কিছুর উদাহরণ দেওয়ার সময় চেষ্টা করো দেশীয় উদাহরণ দিতে। মানে স্তূপ পর্বত আর গ্রস্ত উপত্যকার উদাহরণ দেওয়ার সময় বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে নর্মদা নদীর উল্লেখ করাটাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Tips student geography
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE