Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিতেও বামেদের দুষছে শাসক দল

রাজ্য কোষাগারে মা ভবানী। এই অবস্থায় ভোটের মুখে শুরু হল দোষারোপের পালা। এবং সে জন্য শাসকদলের কর্মী সংগঠনের নেতারা বেছে নিতে শুরু করলেন ‘বাম মনোভাবাপন্ন কিছু অফিসার’কে। ওই অফিসারদের ‘ভূমিকার’ দিকে আঙুল তুলে বোঝাতে চাইলেন, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত এঁরাই!

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৭
Share: Save:

রাজ্য কোষাগারে মা ভবানী। এই অবস্থায় ভোটের মুখে শুরু হল দোষারোপের পালা। এবং সে জন্য শাসকদলের কর্মী সংগঠনের নেতারা বেছে নিতে শুরু করলেন ‘বাম মনোভাবাপন্ন কিছু অফিসার’কে। ওই অফিসারদের ‘ভূমিকার’ দিকে আঙুল তুলে বোঝাতে চাইলেন, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত এঁরাই!

ঠিক যেমন হল রবিবার, শিলিগুড়িতে। তৃণমূল প্রভাবিত স্টেট রেভিনিউ এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, ‘‘রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকেছে শুধুমাত্র কয়েক জন অফিসারের জন্য। এঁরা সবাই বাম মনোভাবাপন্ন। সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করছেন।’’

নেপালবাবুদের অভিযোগ, এই অফিসারদের কার্যকলাপের দরুণ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় গত বারের চেয়ে কম হয়েছে। ‘‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দূরের কথা। আদায় আগের বছরের মতো হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়।’’— মন্তব্য তাঁর। ওঁর কথায়, ‘‘রাজস্ব কমিশনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছু অফিসার কাজ করছেন না। এমন চললে সরকার দেউলিয়া হয়ে যাবে।’’ এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে দরবার করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

২০১১-য় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে প্রফেশনাল ট্যাক্স ও কমার্শিয়াল ট্যাক্সকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হয়। দু’বিভাগের বিভিন্ন তৃণমূল সংগঠন এক হয়ে গড়েছে রেভেনিউ এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। যার নেতারা জানাচ্ছেন, গত অর্থবর্ষে রাজ্যের রাজস্ব খাতে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষে ৫০ হাজার কোটির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। ‘‘কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায়ের যা ছবি, তাতে এ বার ৪৪ হাজার কোটিও আসা শক্ত।’’— বলছেন তাঁরা। ওঁদের হিসেবে, ডিসেম্বরেই রাজস্ব আয় গত বারের তুলনায় ১.৫% কম।

রাজ্যে আগে রাজস্ব আদায়ের সমস্ত কাজকর্ম কলকাতা থেকে পরিচালিত হতো। এখন কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে তিনটি জোন। এতে রাজস্ব আয় আরও বেশি হওয়ার কথা বলে মনে করেন ওই নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘তা তো হয়ইনি, উল্টে ওই বাম ঘেঁষা অফিসারেরা শুধু অন্তর্ঘাত আর পছন্দের অফিসারদের বদলি নিয়ে ব্যস্ত।’’ এমনকী, জমে থাকা আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা আসত বলে তাঁদের দাবি।

ঘটনা হল, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সরকারি উদ্যোগে উৎসব, মেলা-খয়রাতির অন্ত নেই। বিভিন্ন ভাতা, ক্লাবে ক্লাবে বিপুল অনুদান দিব্যি চলছে। সরকারের শীর্ষ মহল বারবার অনুযোগ করছে, বাম জমানার দেনা শুধতেই কোষাগার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও দানছত্রের হিড়িকে রাশ টানার কোনও লক্ষণ চোখে পড়ছে না।

বিরোধীরা কিন্তু এ দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের কর্মী সংগঠনের নেতারা যে এই আঙুল তোলা শুরু করলেন, সেটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই। কারণ, গত সাড়ে চার বছরে খেলা-মেলা-উৎসবের সঙ্গে শাসকঘনিষ্ঠদের ছাড় দিতে গিয়েও রাজস্ব আদায় মার খেয়েছে। এই সূত্রে শাসকঘনিষ্ঠ এক প্রযোজকের কথা উল্লেখ করেছেন বিরোধীরা। বছরখানেক আগে সেই প্রযোজকের অফিসে হানা দিয়েও শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল অফিসারদের। আর সেটা খোদ নবান্নের নির্দেশে, অভিযোগ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের।

রবীনবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘এক দিকে অকারণ খরচ। অন্য দিকে নিজেদের আয় নেই। ওঁরা শুধু চৌত্রিশ বছর আর সিপিএমের ভূত দেখতে জানেন!’’ রবীনবাবুর যুক্তি, ‘‘সরকারি কর্মীদের সরকারি দায়িত্বই পালন করতে হয়। সেখানে কাউকে বামপন্থী বলে আলাদা দোষ দেওয়া যায় কি?’’

বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই রাজ্য জুড়ে এই জাতীয় তত্ত্ব আরও জোরদার করা হবে বলে বিরোধী মহলের অনুমান। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতির অঙ্ক কী রকম, সে সম্পর্কে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্বতন্ত্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরাও মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের অন্দরে থাকা বামপন্থী বহু কর্মী ও আধিকারিক রাজ্য সরকারকে পিছিয়ে ফেলতে সচেষ্ট! তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘দলীয় দায়বদ্ধতা থেকে এক শ্রেণির কর্মী-অফিসার এমন করছেন। সরকারে আসা ইস্তক এটা আমরা বলে আসছি।’’

যা শুনে রবীনবাবুদের বক্তব্য, ‘‘স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যেখানে কো-অর্ডিনেশন কমিটি বা অন্য বামপন্থীদের যখন-তখন দোষ দেন, সেখানে নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায় আর আলাদা কী বলবেন!’’

একে সরকারের ‘ব্যর্থতা আড়ালের অপচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করে বাম নেতাদের বড় অংশের দাবি, বাজার থেকে দফায় দফায় দেনা করে এবং মেলা-খেলায় টাকা উড়িয়ে এই সরকার এমনিতেই দেউলিয়া। অন্য কোনও যুক্তিতেই তা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE