Advertisement
১৬ মে ২০২৪
CV Ananda Bose

মেলালেন তিনি মেলালেন! বোসের বিচার বিভাগীয় তদন্ত-নির্দেশে এক সুর বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের

বোসের ‘রিপোর্ট কার্ডে’র জবাব দিয়ে শুক্রবার ন’পাতার চিঠি দিয়েছিল রাজ্য। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতি, হিংসার অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৩
Share: Save:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের একটি নির্দেশই ‘মিলিয়ে দিল’ বঙ্গ-রাজনীতির যুযুধান পক্ষদের। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতি, হিংসার অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। বোসের এই নির্দেশের নিন্দায় এক সুর শোনা গেল বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের গলায়। মোটের উপর তিন দলের বক্তব্য, রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন। অন্য দিকে, বিজেপির বক্তব্য, রাজ্যপাল হিসাবে নন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে যাবতীয় নির্দেশ দিয়েছেন বোস। আর তৃণমূল যদি কিছু না করে থাকে, তা হলে তো তদন্তে তাদের ভয় পাওয়ার কথা নয়।

বোসের ‘রিপোর্ট কার্ডে’র জবাব দিয়ে শুক্রবার ন’পাতার চিঠি রাজভবনে গিয়েছিল নবান্ন থেকে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতি, হিংসার অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, সব অভিযোগের সত্যাসত্য খতিয়ে দেখবে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্ট কিংবা কলকাতা হাই কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। রাজ্যপালের ওই নির্দেশ নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মুখ খুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি লেখেন, “আমরা জানি সরকার এক্স, ফেসবুকের মতো সমাজমাধ্যমের দ্বারা পরিচালিত হয় না। তাই নির্দেশের সংবাদটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের কাছেও পৌঁছনো প্রয়োজন।’’ একই সঙ্গে নির্দেশের একটি অংশ তুলে ধরে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেন ব্রাত্য। লেখেন, “আচার্য এবং রাজ্যপাল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যপালের ক্ষমতা কি আচার্য প্রয়োগ করতে পারেন?”

রাজ্যপালের নির্দেশ সমালোচনায় সরব হয়েছে শাসকদল তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘রাজ্যপাল আর সাংবিধানিক প্রধান নেই। রাজ্যপাল বিজেপির মুখপাত্র হয়ে বিজেপির তল্পিবাহকতা করতে গিয়ে প্রথা বহির্ভূত, নিয়ম বহির্ভূত, এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের সময় তিনি যে ভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিজেপিকে খুশি করার জন্য কাজ করছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। উনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে বিব্রত করতে চাইছেন। উনি তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়কে অনুকরণ করার চেষ্টা করছেন।’’

বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বেরও একই বক্তব্য। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা রাজ্যপালের কাজের মধ্যে পড়ে বলে তো শুনিনি। রাজ্যপাল তো পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখেছেন, কী ভাবে ভোট লুট করা হয়েছে। তখন তো ওঁকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখিনি। উনি শুধু এই ধরনের কথাবার্তা বলে সংবাদের শিরোনামে থাকতে চান। রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপাল-শিক্ষমন্ত্রীর সংঘাত ভাল নয়। তৃণমূল সর্বনাশ করেছে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওঁর কোনও বক্তব্য থাকলে রিপোর্ট পাঠাতে পারতেন। উনি এক বার শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসা করেন, তার পর তাঁর সমালোচনা করেন। উনি এক বার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন, তার পর তাঁর সমালোচনা করেন। ছেলেমানুষি চলছে!’’ বোসকে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কথা বলছেন। এটাই আমার মনে হচ্ছে। রাজ্যপালের এ ধরনের কথা বলা উচিত নয় এবং পারেনও না। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সরাসরি প্রতিনিধি হয়ে গেলে তো মুশকিল। রাজ্যপালের এ ধরনের ছেলেমানুষি মন্তব্যের বিরোধিতা করছি।’’

বিজেপি অবশ্য রাজ্যপালের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত যে সব বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে। সেই ঘুঘুর বাসা ভাঙার কাজ আচার্য করছেন। রাজ্যপাল নন, উনি আচার্য হিসাবে তাঁর যাবতীয় নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তৃণমূলের এত ভয় পাওয়ার কী আছে? যদি কোনও অপরাধ না করে থাকে, তা হলে ভয়ের কোনও কারণ নেই। তদন্ত হলেই তৃণমূল ভয় পায়, কারণ তদন্ত হলেই চোরেদের নাম বেরিয়ে আসবে। সেই টাকা যে কালীঘাট পর্যন্ত গিয়েছে, তার সূত্রও বেরিয়ে যাবে।’’

সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানো নিয়ে আবার প্রকাশ্যে আসে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত। সেই আবহে গত বুধবার ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয় ‘‘রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের বেআইনি আদেশে যে সকল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ স্তব্ধ করে রেখেছেন, আচার্য তাঁদের সতর্ক করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত’ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করা হয় সেখানে। রাজভবনের বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে আচার্যের ক্ষমতাও স্মরণ করানো হয়। শুক্রবার সেই রিপোর্ট কার্ডেরই জবাব দেয় রাজ্য। রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পরিচালিত করতে চাইছেন রাজ্যপাল বোস। সুপ্রিম কোর্টের পুরনো নির্দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্যের চিঠিতে বলা হয়, রাজ্যপাল নিয়ম মেনে চলছেন না। তিনি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘ধ্বংস করে’ রাজ্যের পড়ুয়াদের ‘অনিয়শ্চতা’র মুখে ফেলতে চাইছেন। রাজ্যের আরও অভিযোগ, যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করছেন না রাজ্যপাল। এর ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এর পরেই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর জন্য নবান্নের সুপারিশ করেছিলেন বোস। তাঁকে পাল্টা বিঁধেছিলেন ব্রাত্যও। বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যপাল শুধু নিজের আসল রংই দেখালেন না, নিজের সাংবিধানিক সীমাও লঙ্ঘন করলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CV Ananda Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE