—ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে ‘আমপান’ ছিল গত বছরের চ্যালেঞ্জ। এ বার ভোটে জেতার পরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে ‘ইয়াস’ আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। সেটা ধরে নিয়েই সাংগঠনিক ভাবে আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
‘আমপান’-এর আগে সময়মতো উদ্ধারের কাজ হওয়ায় প্রাণহানি কম হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে প্রচুর অভিযোগের মুখে পড়েছিল শাসক দল। এ বার সে কথা মাথায় রেখেই জেলায় জেলায় উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ নিয়ে আগে থেকেই তৃণমূল পরিকল্পনা করেছে। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমানের একাংশে দলের বিধায়কদের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। প্রশাসন ও স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছে সিপিএমও।
কলকাতা পুর এলাকাতেও তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। ‘আমপান’-এ কলকাতায়ও ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষ করে, জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পরে বেশ কয়েক দিন সমস্যায় ছিলেন বহু মানুষ। অল্প কিছুদিন পরেই কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া-সহ রাজ্যের একাধিক জেলার পুরসভার ভোট। ফলে, দুর্যোগ পরিস্থিতি শাসক দলের কাছে আরও বড় পরীক্ষা হয়ে দেখা দিতে পারে। সে ব্যাপারেও দলের তরফে সব রকম প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাত সোমবার রাতে বলেন, ‘‘আমপানের সময়ের মতো এ বারেও বহু মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবারও এই কাজ চলবে। খাবার, জল মজুত করা হয়েছে। তবে এ বার সাইক্লোন শেল্টারে মানুষকে রাখার আগে করোনা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ রক্ষায় স্বাস্থ্য দফতর আরও বেশি জোর দিয়েছে।’’
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, কয়েক লক্ষ মানুষকে এই রকম ‘শেল্টারে’ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই কাজে শাসক দলের বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের তিন স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। সাগরের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে দুর্বল বাঁধ মেরামতির কাজ করা হয়েছে। রবিবার ও সোমবার সাগরের দ্বীপগুলিতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ একই রকম তৎপরতা চালাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘করোনার মতো এই প্রাকৃতিক দুর্যোগেও দল প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে মানুষের পাশে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে গত কয়েক দিন ধরেই ঝড়ের গতিপ্রকৃতির উপরে ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছেন। সকলের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করেই প্রশাসন এগোচ্ছে।’’
বিরোধী দল হিসেবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘দলের সমস্ত কর্মী, অনুরাগী ও মহামারি পরিস্থিতিতে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করছি এই দুর্যোগে যথাসম্ভব আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের পাশে থাকার জন্য। দলমত নির্বিশেষে সকলকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচিত সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য সব রকম ভাবে উদ্যোগী হতে হবে।’’
অন্য দিকে, দুর্যোগের আগে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে প্রাণ রক্ষা করার পাশাপাশি পরে ত্রাণ, আলো, জলের ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের পরিপূরক হিসেবে সংগঠনকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। ‘আমপান’-এর পরে বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তা এড়াতে সমন্বয় ও সংযোগে জোর দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা দলের নেতৃত্বকে। তৃণমূল মনে করে, ‘আমপান’-এর সময় যে কোনও কিছু হলেই তা নিয়ে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়েছিল। এ বার যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা দেখতে দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy