Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কোন মিছিলে ভিড় বেশি, জল্পনা জেলায়

তৃণমূল না বিজেপি— ভিড়ের হিসেবে কে, কাকে টক্কর দিয়েছে তা নিয়েই জেলায় চলল জল্পনা। শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, রামপুরহাট শহরে ধারেভারে তৃণমূলের মিছিলকে পিছনে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির দাবি, প্রায় ২০ হাজার মানুষ সামিল ছিলেন গেরুয়া শিবিরের মিছিলে।

ভক্তবৃন্দ: থাকল শুধু গৈরিক পতাকা। অস্ত্র ছাড়াই রাজপথে রামনবমীর মিছিল। রবিবার কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

ভক্তবৃন্দ: থাকল শুধু গৈরিক পতাকা। অস্ত্র ছাড়াই রাজপথে রামনবমীর মিছিল। রবিবার কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৩
Share: Save:

রামনবমীর মিছিলে কার্যত রাজনীতিরই লড়াই দেখল রামপুরহাট থেকে দুবরাজপুর, সিউড়ি থেকে সাঁইথিয়া।

তৃণমূল না বিজেপি— ভিড়ের হিসেবে কে, কাকে টক্কর দিয়েছে তা নিয়েই জেলায় চলল জল্পনা। শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, রামপুরহাট শহরে ধারেভারে তৃণমূলের মিছিলকে পিছনে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির দাবি, প্রায় ২০ হাজার মানুষ সামিল ছিলেন গেরুয়া শিবিরের মিছিলে। সকালে প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে ওই মিছিল। তৃণমূলের মিছিলে ছিলেন ৪-৫ হাজার মানুষ। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তা মানতে চাননি। দলের অন্দরমহলের খবর, এ দিন জেলায় গেরুয়া শিবিরের মিছিলে ভিড় দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। তা নিয়ে আলোচনার জন্য ৮ এপ্রিল জেলার নেতাদের জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তৃণমূলের কেউ-ই।

দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বড় কোনও গোলমাল এ দিন হয়নি জেলার কোথাও। কিন্তু রামনবমী নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল অনেকটাই।

দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দির থেকে পাহাড়েশ্বর, পোদ্দার বাঁধ, থানামোড়, কামাড়শাল মোড়, বাজার, স্টেশন মোড়, রঞ্জনবাজার পর্যন্ত দু’টি রামনবমী মিছিল বের হয়। এ দিন সকাল সাড়ে আটটায় মিছিল হয় তৃণমূলের ব্যানারে। বেলা এগারোটা নাগাদ একই পথে রামনবমীর মিছিল করে গেরুয়া শিবির। মাথায় ‘জয় শ্রী রাম’ ফেট্টি বেঁধে, একই স্লোগান তুলে, রামনবমীর গেরুয়া পতাকা হাতে শয়ে শয়ে মোটরবাইক, টোটো, মিনিট্রাকে রামভক্তদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। ওই মিছিলে ছিল ডি জে বক্স, বাজনা।

বোলপুর ও ইলামবাজারে নির্বিঘ্নেই পালিত হয় রামনবমী। রবিবার সকালে ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। পদযাত্রার সাথে ছিল রাম ও হনুমানের ট্যাবলোও।

এ দিন বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ বোলপুরের রেল ময়দান থেকে শ্রী শ্রী রামনবমী উৎসব উদযাপন সমিতির একটি শোভাযাত্রা বের হয়। রেল ময়দান থেকে বেরিয়ে চিত্রার মোড় পর্যন্ত গিয়ে শোভাযাত্রা ঘুরে যায়। এরপর স্কুলবাগানের ভিতর দিয়ে গিয়ে মূল রাস্তায় ওঠে। সেখান থেকে চৌরাস্তা পেরিয়ে বোলপুর স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার রেল ময়দানে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়। বিকেলে বোলপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। হিন্দু, মুসলিম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে শুরু করে আদিবাসী মানুষ সেই শোভাযাত্রায় সামিল হন। নেতৃত্ব দেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। রামনবমীতে এলাকাবাসী ও পথচারীদের লাড্ডু, খিচুড়ি খাওয়াল লাভপুরের একটি ক্লাব। রবিবার ক্লাবের সদস্যেরা রেল স্টেশন চত্বর থেকে ফুল্লরাতলা মন্দির পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেন।

গত বছর রামপুরহাট শহরে একই ভাবে ভিড় জমেছিল গেরুয়া শিবিরের মিছিলে। পালের হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে তৃণমূল নেতৃত্ব জেলা জুড়ে রামনবমী উদযাপন কমিটি গঠন করেন। দলীয় সূত্রে খবর, শোভাযাত্রায় ভিড় জমাতে অংশগ্রহণ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বৈঠকও করা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, সাংস্কৃতিক কর্মী, তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্যদের মিছিলে হাজির হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পুরুলিয়ার ছৌ-শিল্পী, আদিবাসী নাচের দল, কীর্তনিয়া, ঢাকি, ডিজে বক্স, রাম-সীতা-লক্ষ্ণণের বড় বড় মূর্তি ছিল তৃণমূলের মিছিলে। ১০ হাজার মানুষ মিছিলে সামিল হবে বলে আশা করে দলীয় নেতৃত্ব ১০ হাজার লাড্ডু তৈরির বরাতও দিয়েছিলেন। রামপুরহাট পুরসভার মাঠে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থাও ছিল। রামপুরহাট হাইস্কুলের মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বেরনোর কথা ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়। দলের অন্দরমহলের খবর, পরে ঘণ্টাখানেক পিছিয়ে দেওয়া হয় শোভাযাত্রার সময়। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট শহরের তৃণমূলের অন্য নেতারা। শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, কীর্তন দল, আদিবাসী নাচ, পুরুলিয়ার ছৌ-শিল্পীদের নিয়ে মিছিলে রং এনেছিল শাসক দল।

বিজেপি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রামনবমী উৎসব সমিতি। গত বছরের চেয়ে বেশি লোক মিছিলে সামিল করাই ওই সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু শোভাযাত্রার পুলিশি অনুমোদন মেলে গত কাল সকালে। সমিতি সূত্রে খবর, এ দিন ওই মিছিলে রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লকের পাশাপাশি ময়ূরেশ্বর, মল্লারপুরের বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বজরঙ দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরাও সামিল ছিলেন। শোভাযাত্রায় ছিল ১০-১২ ফুটের রামের মূর্তিও। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনিতে মাতে আট থেকে আশি। বেলা সাড়ে ১১টায় রামপুরহাট রেলওয়ে চ্যম্পিয়ন গ্রাউন্ড থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, জেলায় দলের দুই পর্যবেক্ষক সমীরণ সাহা, লাল্টু ঘোষ। রামপুরহাট শহর ঘুরে সেই শোভাযাত্রা শেষ হয় দুপুর তিনটেয়।

ওই শোভাযাত্রা থেকে অস্ত্র আটক করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় মিছিলে সামিল লোকেদের। পুলিশ জানায়, ওই মিছিল থেকে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

রামনবমীর মিছিল ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিবাদ হয় সাঁইথিয়াতেও। এ দিন নন্দীকেশ্বরীতলা থেকে মুড়াডিহি কলোনি পর্যন্ত তৃণমূলের এবং ইউনিয়ন বোর্ড মোড় থেকে সন্ধানী মোড় পর্যন্ত আরএসএস-কে মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগ, আরএসএস কর্মীরা সন্ধানী মোড় পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দেয়। দু’পক্ষের বচসা হয় তখনই। পুলিশের দাবি, তৃণমূলের মিছিলে হাজার পাঁচেক ও আরএসএস-এর মিছিলে দু’হাজার লোক হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ram Navami Crowd BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE