Advertisement
E-Paper

প্রসবের পরেই মৃত্যু স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের

গত দু’মাসে কেন ১১ জন প্রসূতির মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখতে শনিবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের দুই স্বাস্থ্যকর্তা। তাঁদেরই উপস্থিতিতেই ওই হাসপাতালে ফের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
সদ্যোজাতকে সামলাচ্ছেন এক আত্মীয়া।

সদ্যোজাতকে সামলাচ্ছেন এক আত্মীয়া।

গত দু’মাসে কেন ১১ জন প্রসূতির মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখতে শনিবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের দুই স্বাস্থ্যকর্তা। তাঁদেরই উপস্থিতিতেই ওই হাসপাতালে ফের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল।

যাঁর মৃত্যু হয়েছে, রেহেনা বিবি (৩৬) নামে ওই প্রসূতি বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের স্বাস্থ্য-কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। শ্বশুরবাড়ি পাণ্ডবেশ্বরেরই কেন্দ্রায়। ওই ঘটনায় সিউড়ি হাসপাতালের থেকেও দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালকেই বেশি করে দায়ী করছেন মৃতের আত্মীয়-পরিজনেরা। কারণ, শনিবার ভোর ৪টে নাগাদ বাপের বাড়ি, দুবরাজপুরের খণ্ডগ্রাম থেকে ওই প্রসূতিকে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সকাল ৭টা নাগাদ সেখানেই স্বাভাবিক প্রসব হয়ে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু, প্রসবের পরেই রেহেনার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁকে সিউড়িতে রেফার করা হয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই সাড়ে ৮টা নাগাদ মারা যান রেহেনা।

এই ঘটনায় ক্ষোভ দানা বাঁধছিলই। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ যখন রাজ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর অফ হেল্থ (ফ্যামিলি প্ল্যানিং) অজয় চক্রবর্তী এবং অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (ম্যাটার্নাল হেল্থ) সন্তোষ রায় বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি, সিউড়ি হাসপাতালের সুপার শোভন দে-কে নিয়ে পরপর প্রসূতি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে বৈঠক করছেন, তখনই বেড়ে যায় উত্তেজনা। মৃতের পরিজনেরা বৈঠকের ঘরের দরজা বাইরে থেকে ধাক্কা দিতে শুরু করেন। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। রেহেনার ভাই বকুল মোল্লার দাবি, ‘‘ভোরে দিদিকে দুবরাজপুরে যখন ভর্তি করি, তখনই চিকিৎসকেরা জানান, অবস্থা ভাল নয়। আমরা ওকে সিউড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের কথা শোনা হয়নি। দু’ঘণ্টা বাদে প্রসব হওয়ার পরে দ্রুত সিউড়ি নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক।’’

রেহেনা বিবি

এই অভিযোগ মানেননি দুবরাজপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাহুল মিশ্র। সিউড়ির বৈঠকে তিনিও ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, এটি রেহানার তৃতীয় সন্তান। রক্তাল্পতার সঙ্গে আরও শারীরিক জটিলতা ছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক সে কথা জানানো সত্ত্বেও পরিজনেরা ওই প্রসূতিকে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাননি। রাহুলবাবুর কথায়, ‘‘সন্তান প্রসবের পরে ওই প্রসূতির প্লাসেন্টা বের করা যায়নি। তখন সব রকম পদক্ষেপ করেই ওঁকে সিউড়ি পাঠানো হয়েছিল।’’ ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ রেহানার মৃত্যুর কারণেও ‘প্লাসেন্টা’ সংক্রান্ত জটিলতার কথা লেখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোগী এলেই রেফার করে দেওয়া প্রবণতা কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার হাসপাতালগুলিকে। সেই নির্দেশের জেরে অনেক ক্ষেত্রেই জটিলতা থাকা সত্ত্বেও রোগীকে সঠিক সময়ে রেফার করা হচ্ছে না বলে মত চিকিৎসক মহলের একাংশেরই। সিউড়ি হাসপাতালে গত দু’মাসে ১১ প্রসূতির মৃত্যুর পিছনে রেফার করতে দেরি করা অন্যতম কারণ বলে দাবি তাঁদের। অজয়বাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পরপর এ ভাবে প্রসূতির মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে, এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখছি। এখানে কেন এমন বারবার ঘটছে, তার কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি বলেন, ‘‘পরপর প্রসূত মৃত্যু নিয়ে এখনও বিস্তারিত রিপোর্ট হাতে পাইনি। যে টিম ওখানে গিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরেই কিছু বলতে পারব।’’

ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

tmc Health Karmadhyaksha Died
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy