Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ধূপগুড়ি নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট শাসক দলের অন্দরেই

ধূপগুড়ি-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে। মঙ্গলবার ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেন, ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করে তৃণমূলের তরফে যে ধিক্কার মিছিল হয়েছে, তা দল বা সরকার অনুমোদন করে না। এর আগে সোমবার কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছিলেন, ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রীটিকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

নিহত ছাত্রীর মামার বাড়িতে গৌতম দেব। ধূপগুড়িতে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

নিহত ছাত্রীর মামার বাড়িতে গৌতম দেব। ধূপগুড়িতে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

ধূপগুড়ি-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে। মঙ্গলবার ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেন, ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করে তৃণমূলের তরফে যে ধিক্কার মিছিল হয়েছে, তা দল বা সরকার অনুমোদন করে না। এর আগে সোমবার কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছিলেন, ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রীটিকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। স্পষ্ট না বললেও, দুই নেতারই সমালোচনার অভিমুখ দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর দিকে। কারণ ওই ছাত্রীর দেহ মেলার পরেই ওই মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন সৌরভবাবু।

দলের দুই নেতার চাপের মুখে আগের অবস্থান থেকে এ দিন সরে এসেছেন সৌরভবাবু। তাঁর দাবি, “প্রথমে পুলিশ আত্মহত্যা সন্দেহ করে। ধর্ষণ, খুন নাকি আত্মহত্যা, তা বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট বলবে।” সৌরভবাবুর দাবি, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়েই ধূপগুড়ি কাণ্ডে ধিক্কার মিছিল হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ধূপগুড়িতে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর ও তার স্বামীর ডাকা সালিশি সভার জেরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে যে ভাবে তা ‘আত্মহত্যা’ প্রতিপন্ন করতে জলপাইগুড়ির নেতা-কর্মীদের একাংশ পথে নেমেছেন, তা নিয়ে গৌতমবাবু দলের একাংশের কাছে অসন্তোষ জানান। যে সময়ে ঘটনাটি ঘটে, তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কালিম্পঙে। তিনিও খোঁজখবর নেন বলে দল সূত্রের খবর। কিন্তু, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি তখন এককভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছিলেন।

ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে হইচই হয়। ধূপগুড়িতে গিয়ে সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভবাবু তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যান বাম মনোভাবাপন্ন বিদ্বজ্জনেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল গিয়ে ছাত্রীর বাবাকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

এই পরিস্থিতিতে মহালয়ার দিন সকালে ধূপগুড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। নিহত ছাত্রীর মামা প্রশ্ন তোলেন, “আপনাদের দল থেকে শহরে ধিক্কার মিছিল করে বলা হয়েছে, আমার ভাগ্নী আত্মহত্যা করেছে। এটা কি আত্মহত্যা হতে পারে?” ছাত্রীর বাবা চোখ মুছতে মুছতে মন্ত্রীকে বলেন, “কেউ কি জামাকাপড় খুলে আত্মহত্যা করে?” মন্ত্রী বলেন, “দয়া করে মনে করবেন না, এ সব দল অনুমোদন করে। দলের দু-চারটে লোক ভুল কাজ করলে দলের অনুমোদন থাকে না। এটা সরকার সমর্থন করে না। আমি লজ্জিত। মুখ্যমন্ত্রীও মর্মাহত।” ঘটনায় জড়িতদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দেন তিনি। তবে এই মৃত্যুর ঘটনার ২১ দিন পরে কেন মন্ত্রী ‘সান্ত্বনা’ দিতে এসেছেন, সেই প্রশ্নও শুনতে হয়েছে তাঁকে। উত্তরে গৌতমবাবু বলেন, “আমি চাইনি, এটা নিয়ে রাজনীতি হোক।”

ছাত্রীর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, একটি পাওয়ার টিলারের বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ধূপগুড়ি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর নমিতা রায়ের স্বামী চন্দ্রকান্তবাবু সালিশি সভা ডাকেন। সেখানে চন্দ্রকান্তের উস্কানিতে দশম শ্রেণির ছাত্রীটি তার বাবাকে মোটা টাকা জরিমানা দেওয়ার প্রতিবাদ করে। তখন তাকে মারধর করে থুতু চাটার ফতোয়া দেওয়া হলে ওই ছাত্রী ছুটে পালায়। পর দিন রেললাইনে তার নগ্ন ও ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে।

নিহত ছাত্রীর বাবা-মা-র অভিযোগ মূল অভিযুক্তদের কয়েকজন এলাকায় ঘুরলেও পুলিশ ‘খুঁজে পাচ্ছে না’ বলে দাবি করছে। মন্ত্রী তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দেন। ছাত্রীর বাবা-মা চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি। ছাত্রীর পরিবার বলে, তাঁরা ভেবে দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam deb dhupguri student death tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE