কেন্দ্র নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পণ্য পরিষেবা কর নীতি তথা জিএসটি-র বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু শুক্রবার, বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন— জিএসটি কার্যকর করার পথে আর বাধা হবে না তাঁর দল। তাঁর বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যের প্রাপ্য ঠিকমতো দিলে জিএসটি-তে আপত্তি নেই রাজ্যের।
আপাত দৃষ্টিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত একেবারে প্রশাসনিক। কর সংগ্রহ ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগকে সমর্থন জানানো। কিন্তু এর মধ্যে আবার রাজনীতিও দেখছেন অনেকে। কেন না এর আগে সংসদে পণ্য পরিষেবা কর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন বিল পাশে তৃণমূল সমর্থন জানালেও পরবর্তী কালে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের কারণে রাজ্য বিধানসভায় ওই বিল পাশ করায়নি বাংলার শাসক দল। এমনকী সম্প্রতি মোদী সরকারের নোট-সিদ্ধান্তের পর এখনই জিএসটি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর যুক্তি ছিল, নোট বাতিলের ফলে এমনিতেই দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সেই পরিবেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই জিএসটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে নতুন অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। মাস খানেকের ব্যবধানে জিএসটি নিয়ে তৃণমূলের অবস্থানের এই ফারাক নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তবে কি ফের কেন্দ্রকে সহযোগিতার বার্তা দিতে চাইছেন মমতা?
রাজ্য সরকার যে জিএসটি সমর্থন করছে, তা এ দিন বাজেটেও উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে এই পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও, জিএসটি কাউন্সিলে ৪টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে। এক, জিএসটি চালু হলে সাধারণ মানুষ যেন উপকৃত হয়। দুই, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও যেন উপকৃত হয়। তিন, জিএসটি-র জন্য রাজ্যের রাজস্বে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়লে কেন্দ্র যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়। এবং চার, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রেখেই যেন জিএসটি চালু করা হয়।’’
বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার পর জিএসটি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘আমরা জিএসটি-র পক্ষে।’’ মমতা বুঝিয়ে দেন, অমিতবাবু যে বিষয়গুলির দিকে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তা মোদী সরকার বিবেচনায় রাখলে তৃণমূল আর আপত্তি জানাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে লঙ্ঘন না করে এবং আমাদের প্রাপ্য ঠিক মতো দিয়ে যদি জিএসটি চালু করা হয়, তা হলে আমাদের আপত্তি নেই।’’ রসিকতার সুরে এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খেতেও হবে দিতেও তো হবে!’’
অমিত বাবু যে চারটি বিষয়ের কথা বলছে তা অতি সাধারণ। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলি কেন্দ্রকে গোড়া থেকেই নজর দিতে বলছে। এবং কেন্দ্রও সদর্থক সাড়া দিয়েছে। ফলে ওঁর কথা থেকেই পরিষ্কার যে জিএসটি নিয়ে মোদী-মমতা টানাপড়েনের অবসান হতে চলেছে। পণ্য পরিষেবা কর নীতি বাস্তবায়ন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। প্রসঙ্গত, এ মাসের ১৮ তারিখ উদয়পুরে জিএসটি কাউন্সিলের ফের বৈঠক রয়েছে। পণ্য পরিষেবা কর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর এই কর নীতি বাস্তবায়নের জন্য আরও ৪টি বিল সংসদে পাশ করাতে হবে। সেগুলি হল, কেন্দ্রীয় জিএসটি বিল, রাজ্য মডেল জিএসটি বিল, আন্তঃরাজ্য জিএসটি বিল, এবং রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত বিল। উদয়পুরের বৈঠকে ওই বিলগুলির খসড়া চূড়ান্ত করার কথা।
স্বাভাবিক ভাবেই জিএসটি নিয়ে মমতার বার্তায় বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতাই দেখছেন অধীর চৌধুরী-মহম্মদ সেলিমরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জিএসটি বিল তো আগেই কেন্দ্রে সর্বসম্মতি ক্রমে পাশ হয়েছে। এখন আবার নতুন করে তাতে কোনও দলের সমর্থনের প্রশ্ন আসছে কেন? পশ্চিমবঙ্গ যাতে বঞ্চিত না হয়, তা দেখার দায়িত্ব তো কেবল তৃণমূলের নয়, আমাদেরও রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy