Advertisement
E-Paper

অন্য গোষ্ঠীর নেতার নামে নালিশ টিএমসিপি নেত্রীর

ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এত দিন মারপিট, ভাঙচুর, স্লোগান, পাল্টা স্লোগান চলছিল। এ বার সেটা গড়াল খুন-ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ এবং তা নিয়ে থানায় এফআইআর পর্যন্ত।অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারিণী দু’জনেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির নেতা ও নেত্রী।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩

ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এত দিন মারপিট, ভাঙচুর, স্লোগান, পাল্টা স্লোগান চলছিল। এ বার সেটা গড়াল খুন-ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ এবং তা নিয়ে থানায় এফআইআর পর্যন্ত।

অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারিণী দু’জনেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির নেতা ও নেত্রী। তবে তাঁদের অবস্থান দুই যুযুধান গোষ্ঠীতে। একটি গোষ্ঠীর নেতা তাঁকে খুন ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছেন বলে অন্য গোষ্ঠীর এক ছাত্রনেত্রীর অভিযোগ।

অভিযোগকারিণী রুমানা আখতার জেনেটিক্স ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের গবেষক এবং স্প্যানিশ সার্টিফিকেট বিভাগের ছাত্রী। তিনি বিদায়ী ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদিকা এবং এ বারের ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে টিএমসিপির অন্য গোষ্ঠীর হাতে নিগৃহীত হন ওই ছাত্রনেত্রী। তার পরেই জোড়াসাঁকো থানায় টিএমসিপির একটি গোষ্ঠীর নেতা আব্দুল কায়ুম মোল্লার বিরুদ্ধে এফআইআর করে এসেছেন তিনি।

পুলিশের কাছে অভিযোগে কী বলেছেন ওই ছাত্রনেত্রী?

রুমানার অভিযোগ, কায়ুম এবং তার দলবল দিনের পর দিন তাঁকে ফোন করে ধর্ষণ এবং নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি উপাচার্যকে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁকে তা করতে দেওয়া হয়নি। উল্টে ক্যাম্পাসেই নিগ্রহের স্বীকার হন তিনি। শারীরিক নিগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে খুন-ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়।

‘‘ভীষণ ভয়ে ভয়ে রয়েছি। এ বারের নির্বাচনেও আমি প্রার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে সাহস পাচ্ছি না,’’ রবিবার বললেন রুমানা। তাঁর এক সহপাঠী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ছাত্রও টিএমসিপি করেন। লজ্জায় আমরা কাউকে কিছু বলতে পারছি না। দলীয় স্তরেও কেউ আমাদের বক্তব্য শুনছেন না। তাই রুমানাকে পুলিশের কাছে মুখ খুলতে হল।’’

ছাত্রভোটকে কেন্দ্র করে টিএমসিপির অন্তর্দ্বন্দ্ব আগেই রক্তাক্ত কাজিয়া পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এ বার থানায় এক ছাত্রনেত্রী নিজেদের সংগঠনেরই এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে খুন ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ জানানোয় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে বিরোধী শিবির বলতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ কিছু নেই। খেয়োখেয়ি এখন টিএমসিপির নিজেদের মধ্যে। গত বৃহস্পতিবার তা চরমে ওঠে। বাইরের অনেক তরুণ-তরুণীকে নিয়ে টিএমসিপির রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত ওই দিন উপাচার্যের কাছে যান। তার পরেই টিএমসিপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের গোষ্ঠীর সঙ্গে মারপিট শুরু হয়ে যায় জয়ার অনুগামীদের। হাঙ্গামা কেন, জয়ার কাছে তার কৈফিয়ত চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে-দিনই জয়া-গোষ্ঠীর রুমানা নিগৃহীত হন অশোক রুদ্র গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের হাতে।

যাঁর বিরুদ্ধে রুমানার অভিযোগ, সেই কায়ুম বলছেন, ‘‘কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেই পারে। তবে আইন আইনের পথেই চলবে।’’

টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর লড়াই বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর ছেড়ে ইতিমধ্যেই আছড়ে পড়েছে হস্টেলে। জয়া গোষ্ঠীর অভিযোগ, কায়ুম এবং তাঁর দলবল ভোটের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হস্টেলে বহিরাগতদের এনে রাখছেন। কায়ুমের বক্তব্য, তিনি ওই হস্টেলের আবাসিক নন। তাই ওখানে কী হচ্ছে, তা তিনি জানেন না।

২৮ জানুয়ারি ভোট। কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই হস্টেলগুলির বাইরে পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছেন। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘ছাত্রভোট ঘিরে গোটা বিষয়টি যেখানে যাচ্ছে, তা কখনওই কাম্য নয়। হস্টেলে বহিরাগত ঢুকছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ বাইরে মোতায়েন আছে। কিন্তু তাদের তো আর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যায় না। দেখা যাক, কী করা যায়।’’

পুরনো ছাত্রনেতারা বলছেন, ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি নতুন নয়। তবে একই ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ের এমন রক্তাক্ত, কদর্য চেহারা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। ছাত্রভোট নিয়ে খুন-ধর্ষণের হুমকির অভিযোগও ওঠেনি। এটা একেবারে নতুন ‘সংস্কৃতি’!

TMCP Group Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy