রাজ্যের ৫১৩টি কলেজের মধ্যে ৪৫২টির ছাত্র সংসদই রয়েছে তাঁদের দখলে। ৩০০টি কলেজে বিরোধীদের ঘেঁষতেই দেয়নি তাঁরা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এ হেন ‘পারফরম্যান্সে’ স্বভাবতই খুশি ছিলেন শাসক দলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু বিধানসভা ভোটে প্রার্থী তালিকায় সেই খুশির কোনও প্রতিফলনই পেলেন না শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা। ভোটের ময়দানে তাঁদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। তাই সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই ক্ষোভ আর ধরে রাখতে পারলেন না ছাত্র নেতাদের একাংশ।
কেন?
কারণ হিসাবে টিএমসিপি-র এক ছাত্র নেতার মত, সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়কে ভোটের টিকিট দেওয়া হয়েছে। তিনি টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও রাসবিহারি কেন্দ্র থেকে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যে সমস্ত ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র কাছে কার্যত ধোপে টেকেনি, তারা রাজনীতির প্রথম আঙিনায় থাকলেও সেখানে পুরোপুরি ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে টিএমসিপি। তাঁদের দল প্রাধান্য দিলেও রাজ্যের কলেজে তৃণমূলের শক্তি অটুট রাখার কারিগরেরা সম্পূর্ণ বাদ!
ছাত্র ভোটের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনও যুক্ত বলে দাবি দক্ষিণ কলকাতার টিএমসিপি-র এক ছাত্র নেতার। তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকেই যখন তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছে তখন থেকেই ছাত্র পরিষদ বিভিন্ন কলেজে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করে। ক্রমশই সেই শক্তি বাড়তে থাকে। তারপরেই বিভিন্ন নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেয় ছাত্র সংগঠন। টিএমসিপি প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থেকে মনোবল বাড়িয়েছেন। ‘‘কিন্তু ভোটের টিকিটের বেলায় হঠাৎই আমাদের পিছনে ঠেলে দিল!’’-আক্ষেপ ওই নেতার।
উত্তর কলকাতার এক ছাত্র নেতার বক্তব্য, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই বিভিন্ন কলেজে টিএমসিপি ক্রমশ শক্তি বাড়াতে থাকে। ছাত্ররাই দলের ভবিষ্যত। এই কথা বারবার শোনা গিয়েছে দলের নেতৃত্বের মুখেও। কিন্তু পুরোপুরি বঞ্চনা করা হল ভবিষ্যত প্রজন্মকেই।
রাজ্য কমিটির এক নেতার ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘রূপোলি পর্দার নায়করা গলায় মালা দিয়ে গাড়ির ওপর থেকে হাত নাড়ছেন। আর আমাদের সমস্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের থাকতে হচ্ছে সেই গাড়ির নীচেই।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের মধ্যে কারও যোগ্যতা ছিল না?’’
ক্ষুব্ধ হাওড়া জেলার এক ছাত্র নেতা বলেন, ‘‘এতদিন তো দল বলত ছাত্ররাই দলের ভবিষ্যত। রুপোলি পর্দার সুখ পখিদের টিকিটি দেওয়া হলেও সেই ভবিষ্যত ছাত্রদের টিকিটই দিল না!’’
রাজ্য কমিটির অন্য অর এক নেতা জানান, গোটা রাজ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে বহু অভিযোগ এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘বহু জেলার নেতারা তো রাগে ফুঁসছেন। কোনও রকমে তাঁদের শান্ত করেছি। এই নিয়ে বহু ক্ষোভ।’’
আদৌ কি তাঁরা তৃণমূলের কাউকে কিছু জানিয়েছিলেন?
একগাল হেসে ওই নেতার মন্তব্য, ‘‘মাথা খারাপ হয়েছে? এখানে ওসব বলে লাভ নেই। সমস্ত কিছু একজনই ঠিক করেন। তিনি না বুঝলে বলেও লাভ নেই। করার হলে তিনিই করতেন।’’ শেষে তাঁর সংযোজন, ‘‘যাই হোক মন থেকে না হলেও ভোটে প্রার্থীদের পিছনেই থাকতে হচ্ছে আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy