প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে চাওয়া যে আসলে শাঁখের করাতের মতো, নিজের মুখেই মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বছরের মাথায় প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন মোদী। তাঁর সঙ্গে সরকারি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবিধান এবং স্বাভাবিক সৌজন্য মানলে সেটাই দস্তুর। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী ক্রমাগত মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে গিয়েছেন, কোমরে দড়ি পরানোর কথা পর্যন্ত বলেছেন! মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রথম দিকে সুর নরম করতে চাননি মমতা। গত কয়েক মাসে অবশ্য তাঁর অবস্থানে বদল এসেছে। দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এ বার মোদীর কলকাতা সফরের সময়ে তাঁর সঙ্গে আলাদা সাক্ষাতের সময়ও চেয়েছেন। আর তা নিয়েই নানা কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বুধবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের নবনিবার্চিত পুর-প্রতিনিধিদের নিয়ে সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্য, ‘‘ওঁর (প্রধানমন্ত্রী) কাছে যাওয়া নিয়ে কেউ বলছে, বন্ধুত্ব করতে নাকি যাচ্ছি! আবার না গেলে বলবে ঝগড়া করছি!’’ তার পরেই তাঁর সমালোচকদের মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি কেন যাব, না-যাব তা কি আপনারা ঠিক করবেন? আমি কাছাকাছিও যাই না, দূরেও যাই না! সব কিছুর একটা সীমা আছে!’’
ইতিপূর্বে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে শুরু করে দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনও এড়িয়ে গিয়েছেন মমতা। তখন বিভিন্ন মহল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর আচরণের সমালোচনা হয়েছে। বাম-শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজের রাজ্যে উন্নয়নের প্রশ্নে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার পরে তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন মমতা। স্বভাবতই এখন সেই মমতার অবস্থান বদলে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। পাশাপাশিই তৃণমূল নেত্রীকে মাথায় রাখতে হচ্ছে, বিজেপি সরকারের সঙ্গে বেশি মাখামাখির কথা প্রচার হলে তার প্রভাব রাজ্যের প্রায় ২৮% সংখ্যালঘু মানুষের উপরে পড়তে পারে। আগের দিন শিলিগুড়িতে যা বলেছিলেন, তার থেকেই একটু এগিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর (৯-১০ মে থাকবেন রাজ্যে) সঙ্গে দেখা করব। এটা সাংবিধানিক বিষয়। সরকার সরকারের মতো চলবে। রাজনৈতিক দল তার নিজের মতো চলবে। সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আমি শক্তিশালী করার পক্ষে। দুর্বল করার পক্ষে নেই।’’ মানিকবাবুর মতো তিনিও যে উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান, তার ইঙ্গিত দিয়ে মমতার বক্তব্য, ‘‘আমি তো রাজ্যের কথা বলতে যাচ্ছি। হয়তো অনেক রাজ্য এই সমস্যাগুলির কথা জানেই না!’’
বিরোধীদের তরফে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের প্রশ্ন, ‘‘এত দিন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার কথা মনে ছিল না? কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে বাঁচতেই কি এই কৌশল নয়?’’ বিরোধীদের দাবি, সারদা তদন্তে সিবিআই এখন ঢিমেতালে চলছে। তৃণমূলও প্রথমে ‘না না’ করে অনেক বিলে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করছে। মমতা সেই ‘বোঝাপড়া’কেই আরও দৃ়ঢ় করতে চাইছেন। তৃণমূল-বিজেপি ‘বোঝাপড়া’ বাড়ছে, এমন রাজনৈতিক বাতাবরণ গড়ে ওঠার পথে বাধা না হওয়ার জন্যই বাম নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার কলকাতায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হবেন না। মনমোহন সিংহের রাজ্য সফরের সময়ে বামফ্রন্টের তরফে তাঁর কাছে গিয়ে তৃণমূল আমলে রাজ্যের দুর্দশা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। জানিয়েছিলেন। দিল্লিতে মোদীর কাছে গিয়েও সারদা নিয়ে কথা বলেছিলেন বাম নেতারা। কিন্তু এ বার মোদীর সঙ্গে দেখা করে পুরভোট নিয়ে কোনও অভিযোগ জানানো হবে না বলে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পুরভোট নিয়ে অভিযোগ করা অর্থহীন। এটা কেন্দ্রের দেখার বিষয় নয়।’’
মমতার অবস্থানে ফাঁপরে প়ড়েছে রাজ্য বিজেপি-ও। তারা এ রাজ্যে তৃণমূলকে হঠানোর ডাক দিচ্ছে অথচ মোদী-মমতা ‘দোস্তি’ চলছে বলে প্রচার চালাচ্ছে সিপিএম-কংগ্রেস। পরিস্থিতি সহজ করার লক্ষ্যেই এ দিন বিধাননগর পুরসভার দত্তাবাদে গিয়ে বিজেপি-র অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক এবং এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেছেন, ‘‘ও সব কথার কোনও মানে নেই!’’ তাঁর দাবি, মোদী সরকার নিম্নবিত্তদের জন্য সাড়ে ১২ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এ বার বাংলা থেকে গরিব মানুষের সুরক্ষার জন্য আরও একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী চালু করতে চলেছেন। সেখানেই তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সহযোগিতা করতে চাইলেও ভোট রাজনীতির জন্যই তৃণমূল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মতো কিছু প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy