দীর্ঘদিনের ‘বিউটিফুল বেঙ্গল’ থেকে ‘এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গল-দ্য সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া’।
গত পাঁচ বছরে দফতরে মূল ক্যাচ লাইন বদলের মধ্যে দিয়ে অনেকটাই আধুনিক হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল রাজ্য পর্যটন দফতর। এ বার আরও এক ধাপ এগোনোর চেষ্টা শুরু হল। দেশ জুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএস) ‘কেকেআর’ বা ইন্ডিয়ার সুপার লিগের (আইএসএল) অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা নিল পর্যটন দফতর।
দফতর সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজের নতুন পর্যটন নীতি অনুমোদন করে দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। ভোটের জন্য গত তিন মাস তা নিউ সেক্রেটেরিয়েটের পর্যটন দফতরে ফাইলবন্দি থাকলেও নতুন সরকার ক্ষমতায় আসতেই তা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব অজিত রঞ্জন বর্ধন দফতরের অফিসারদের নিয়ে পরিকল্পনা বা নীতি নিয়ে এগোনোর কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তিনি ভোটের সময় দফতর থেকে সরে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই তাঁকেই ফের এই দফতরের দায়িত্বেই রেখেছেন।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমাদের সরকার দীর্ঘদিনের পুরানো পর্যটন নীতিতে বদলে নতুন ভাবে সব করছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দফতরের ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং-এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগেই মন্ত্রিসভা নতুন নীতি অনুমোদন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সব সময় পর্যটন নিয়ে সব সময় চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা নেন। সেই নতুন নীতিকে এবার পুরোদমে কাজে লাগানোর পালা।’’ মন্ত্রী জানান, পরিকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও আইপিএল বা আইএসএলের সঙ্গে গাঁটছড়া, হোম টুরিজ্যম, অ্যাডভেঞ্চার টুরিজ্যমের নতুন করে নিয়মাবলি তৈরি নতুন নীতির অন্যতম।
দফতরের কয়েকজন অফিসার জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশ-বিদেশের পর্যটন মেলা, উৎসবে অংশগ্রহণ ছাড়াও নতুন পর্যটন নীতিতে একটি বাৎসরিক বা অ্যানুয়াল ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে।
ছয়টি বিশেষ ক্ষেত্রকে সেখানে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর এক নম্বরই হচ্ছে আইপিএল টুর্নামেন্ট। আইপিএলে আবার জড়িয়ে রয়েছে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। কলকাতার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়া থাকা এই টিমকে দফতরের ব্র্যান্ডিং-এ কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে কলকাতা তো বটেই রাজ্যের পর্যটন দফতরের নাম দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছবে। স্পনসর বা অ্যাসোসিয়েটেড পার্টনার’রা যে ভাবে টিমগুলির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, সেই ভাবে না হলেও টিমের বিজ্ঞাপন বা প্রচারে দফতরকে জোড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের মাধ্যমেই গোটা কাজটি করার কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। এতে ওই টিম দেশের যে শহরে যেখানেই খেলবে, সেখানেই প্রচারে থাকবে পর্যটন দফতর। উল্লেখ্য, এ বার দেশে একটি এবং বিদেশের মাটিতে আরেকটি আইপিএল টুর্নামেন্ট করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বিসিসিআই। আর তা হলে বিদেশের মাটিতেও কেকেআরের হাত ধরে পৌঁছতে পারবে পর্যটন দফতর। তেমনিই, ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় স্তরেই রাখা হয়েছে আইএসলের অ্যাটলেটিকো ব্র্যান্ডের কথা।
উল্লেখ্য, এই ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন খোদ কলকাতার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হর্ষ নেওটিয়া-রা। পর্যটন দফতরের সচিব পর্যায়ের কয়েকজন অফিসার জানিয়েছেন, ক্রিকেট আর ফুটবল গোটা দেশ মূলত এই দুই খেলা নিয়েই মেতে থাকে। কখনও টি টোয়েন্টি থেকে আইপিএল। কখনও বা ফুটবল। সম্প্রতি আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বেঙ্গালুরু এফসি। গোটা, পঞ্জাব, কর্নাটক, মিজোরাম বা মেঘালয়ে ফুটবল আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সেখান থেকেই আইএসএলের কথা ভাবা হয়েছে। এর সঙ্গে বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে রাখা হয়েছে, দুর্গাপুজো, কলকাতার পার্কস্ট্রিটের ক্রিসমাস, গঙ্গাসাগর মেলাকেও। শেষে আগামী দিনে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নতুন ইভেন্ট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতির এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পর্যটনের পিপিপি মডেলও। ডুয়ার্সের গজলডোবা, সুন্দরবনের ঝাড়খালি এবং হুগলির সবুজ দ্বীপ এই তালিকায় রয়েছে।
সেখানে রাস্তা, নিকাশি, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের মূলত বন্দোবস্ত করবে সরকার। প্রকল্প গড়বে বেসরকারি লগ্নিকারীরা।
যদিও গজলডোবায় পরিকাঠানো তৈরি হলেও এখনও হাতে গোলা ২-৩ সংস্থা ছাড়া কেউ লগ্নিতে এগোয়নি। তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দেওয়ার কথা নীতিতে বলা হয়েছে। আবার পর্যটনের জমির জন্য জন্য সিঙ্গল ইউনডো সিস্টেম চালু করে ভূমি দফতর, নগরান্নয়ন দফতর এবং জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জোর দিয়ে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন সার্কিট, ডেস্টিনেশন চিহ্নীতকরণ ছাড়াও মেডিক্যাল, হেরিটেড। অ্যাডভেঞ্চার, রুরাল, বিজনেস ট্যুরিজম নিয়ে কাজ শুরুর কথাও নতুন পর্যটন নীতিতে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy