তৃণমূলকে হারাতে এখন ঘুরিয়ে বিজেপির হাত ধরতেও যে তাঁদের আপত্তি নেই তা স্পষ্ট করে দিল বামফ্রন্ট। তাদের শনিবারের পদক্ষেপ অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিল।
এ দিন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং তিন বিধানসভা আসনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রার্থীদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানাল বামফ্রন্ট। মোর্চা যে এনডিএ-এর শরিক তা মাথায় রেখেই যে এই সিদ্ধান্ত তাও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন ফ্রন্টের জেলা নেতারা।
দার্জিলিং জেলার ছয় আসনের মধ্যে শুধু মাত্র শিলিগুড়িতেই প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। জোটের স্বার্থে কংগ্রেসের জেতা আসন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়ায় বামেদের প্রার্থী থাকছে না বলে এ দিন জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে পাহাড়ের তিন আসনে ‘আঞ্চলিক কোনও দল’কে সমর্থনের। লিখিত ভাবে আঞ্চলিক দলের কথা বলা হলেও, এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বাম নেতারা মোর্চার নাম করে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
এনডিএ-র শরিক হওয়া সত্ত্বেও মোর্চাকে সমর্থনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা সিপিএম সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘মোর্চার সঙ্গে বিজেপি বা কার কী আলোচনা হয়েছে, বা কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানি না। তবে মোর্চা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল তৃণমূলকে হারানোই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরাও তৃণমূলের অপশাসন থেকে রাজ্যকে মুক্ত করতে চাই। তাই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
পাহাড়ের তিন আসনে বামেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন জীবেশবাবু। তিনি জানান, পাহাড়ে প্রার্থী খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছিল বলে দাবি করেছেন স্থানীয় নেতারা। গত লোকসভা নির্বাচনে পাহাড়ের তিন বিধানসভার মধ্যে বামেদের প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ভোট ছিল ২৩৬৬। বাম নেতাদের একাংশের দাবি, এই ভোটের উপর ভিত্তি করে কোনও দলকে সমর্থন করা বা না
করা কোনও বড় বিষয় নয়। তবে নেতাদের একাংশের মত, সমর্থনের প্রশ্নটা একেবারেই নীতিগত। তৃণমূল বিরোধী জোট করতে তাঁরা কতটা মরিয়া তা বোঝাতেই এনডিএ-এর শরিক হওয়া সত্ত্বেও মোর্চাকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে।
তবে মোর্চাকে সমর্থন করলে সমতলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন জীবেশবাবু দাবি করেছেন, মোর্চার পৃথক রাজ্যের দাবির সঙ্গে তাঁরা একমত নন। মোর্চার সঙ্গে সমর্থন নিয়ে কোনও লিখিত প্রস্তাবও চালাচালি হবে না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা শিলিগুড়ির প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একটা বিষয় খুব পরিষ্কার। মোর্চাকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র তৃণমূলকে হারানোর জন্য। অন্য কোনও নীতি বা দলের সঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নয়।’’
মোর্চাকে সমর্থনের ঘোষণার পরেই তাকে হাতিয়ার করে সমতলের ভোটের প্রচারে বামেদের বিঁধতে আসরে নেমেছে তৃণমূল। বিদায়ী মন্ত্রী তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম দেবের দাবি, ‘‘যারা রাজ্যভাগ করতে চাইছে তাদের সমর্থন করে বিভাজনে মদত দিচ্ছে বামেরা। মানুষ এর জবাব দেবে। এরপর তো দেখা যাবে নীতি আদর্শ ভুলে বামেরা সোমবার যাকে সমর্থন করবে, মঙ্গলবার তার বিরোধিতা করবে।’’
বামেদের সমর্থন প্রসঙ্গে মোর্চা অবশ্য এখনও নিজেদের অবস্থান জানায়নি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি শুধু বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে দলে কোনও বৈঠক হয়নি। বৈঠকের পর কিছু জানাতে পারব।’’ তবে এই ঘোষণায় বাম নেতাদেরই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, আগ বাড়িয়ে মোর্চাকে সমর্থনের সিদ্ধান্তে আখেরে ভাল ফল মিলবে তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy