আর্থিক দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির পরিচালন বোর্ড ভেঙে দিয়ে শুক্রবার প্রশাসক নিয়োগ করল রাজ্য। জলপথ পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় তৃণমূলের বোর্ড দুর্নীতি আর অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগে তৃণমূল সরকারই ভেঙে দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই ঘটনা তৃণমূলের অপদার্থতা ও অযোগ্যতাই প্রমাণ করে দিয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার পরিচালন বোর্ডের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কাজকর্ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ করছিলেন সংস্থার কর্মীরা। বারবার অভিযোগ পেয়ে শেষ পর্যন্ত রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায়ের নির্দেশে এক মাস আগে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশনে ছিলেন অজয় গিরি, রমেশ জানা ও আমানুল হিলাল নামে সমবায় দফতরের পদস্থ তিন অফিসার। তাঁদের কাছ থেকে সম্প্রতি রিপোর্ট পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এ দিন থেকেই রাজ্য সমবায় দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অমিয় চক্রবর্তী প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
এ নিয়ে সমবায়মন্ত্রী অরূপবাবু বলেন, ‘‘বোর্ডের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তদন্ত কমিশন বোর্ডের কাজকর্মের বিরুদ্ধেই রিপোর্ট দিয়েছে। তাই বোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসানো হয়েছে।’’
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার পরিচালন বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। উত্তর হাওড়ার বিধায়ক অশোক ঘোষ সংস্থার চেয়ারম্যান হন। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকবাবু মারা যাওয়ার পরে সাঁকরাইল কেন্দ্রের বিধায়ক শীতল সর্দার চেয়ারম্যান হলেও সংস্থা পরিচালনার রাশ থাকে অশোকবাবুর এক সময়ের ছায়াসঙ্গী, সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও হাওড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তীর হাতে। তিনি একটি শ্রমিক সংগঠনও গঠন করেন। এ নিয়ে ওই সংস্থায় তৃণমূলের আর একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিবাদ বেধে যায়। স্টাফ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে ওই সংগঠনের দাবি, তাদের সংগঠনই আইএনটিটিইউসি স্বীকৃত। অন্য সংগঠনের কোনও স্বীকৃতি নেই।
স্টাফ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। কর্মীদের যখন-তখন চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের সঙ্গেও অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে। জলপথের মালিকানাধীন জায়গায় টাকা নিয়ে মাছ-ভাতের হোটেল বসতে দেওয়া হয়েছে। কোনও অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগানো হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও সম্পাদক শামিমা সাহিন বলেন, ‘‘সমবায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে এই বোর্ড কাজ চালাচ্ছিল। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাঁকে গাদিয়াড়া লঞ্চঘাটে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।’’ অভিজিৎবাবু জানান, এ নিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমবায়মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তার পরেই তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয় সরকার এবং শেষ পর্যন্ত বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়।
সব অভিযোগই অবশ্য অস্বীকার করেছেন হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কোনও আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। সমবায় দফতর তো প্রতি বছর অডিট করে। দুর্নীতি হলে তো আগেই ধরা পড়ত।’’
বিজেপি-র হাওড়া সদরের সভাপতি সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্রমশ দুর্নীতির চোরাবালিতে ঢুকে যাচ্ছে। নিজেদের তৈরি বোর্ডই দুর্নীতির দায়ে ভেঙে দিয়ে নিজেদের অপদার্থতাই প্রমাণ করল ওরা।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘তৃণমূল যে আপাদমস্তক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণে পরিপূর্ণ, তা ফের প্রমাণিত হল। নিজেদের ব্যর্থতা ফের প্রমাণ করল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy