Advertisement
১১ মে ২০২৪
এত দিনে শুরু হল প্রশিক্ষণ

হাসপাতালেই না হয় সংক্রমণ, তৎপরতা

দেরিতে হলেও হুঁশ ফিরছে। সরকারি হাসপাতালে সংক্রমণের হার কমাতে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ডাক্তার-নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কিছু সংশয়ও দেখা দিয়েছে উদ্যোগের সাফল্য সম্পর্কে।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ১০:০২
Share: Save:

দেরিতে হলেও হুঁশ ফিরছে। সরকারি হাসপাতালে সংক্রমণের হার কমাতে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ডাক্তার-নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কিছু সংশয়ও দেখা দিয়েছে উদ্যোগের সাফল্য সম্পর্কে।

সংক্রমণের উৎস যখন হাসপাতালই, তখন রোগ সারাতে এসে রোগের কবলে পড়া স্বাভাবিক। আকছার তা ঘটছেও। বেসরকারি, সরকারি— সব রকম হাসপাতালে। এটা ঠেকাতে হলে বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালেরও এগিয়ে আসা জরুরি। ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন’ প্রতিরোধের লক্ষ্যে নিয়োজিত ‘হসপিটাল ইনফেকশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’ বারবার এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পরিষেবা-মান নির্ণায়ক সংস্থা এনএবিএইচ জানিয়েছে, কেরল, তামিলনাড়ু, গুজরাত, অন্ধ্র, দিল্লির বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল সংক্রমণ ঠেকিয়ে ছাড়পত্র আদায়ও করে নিয়েছে। অথচ এত দিন পশ্চিমবঙ্গের কার্যত হেলদোল ছিল না। এ বার রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারি হাসপাতালে ‘বায়ো সেফটি’ সুনিশ্চিত করা ও হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশনে রাশ টানতে ডাক্তার-নার্সদের তালিমের ব্যবস্থা হচ্ছে। ‘‘ডাক্তারদের একটা অংশের ট্রেনিং হয়েছে। এ বার নার্সদের পালা।’’— বলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি জানাচ্ছেন, ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স প্রোগ্রামের আওতায় প্রথম ধাপে কুড়িটি
সরকারি হাসপাতালের নার্সদের তালিম দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের অবশ্য দাবি: সরকারির তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে সংক্রমণের হার বেশি। হসপিটাল ইনফেকশন সোসাইটি’র সদস্যেরাও একমত। ওঁদের বক্তব্য: নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্ত গাউন-গ্লাভস পরা, রোগীর পোশাক ও বিছানার চাদর পরিচ্ছন্ন রাখা কিংবা দুই বেডের মাঝে ঠিকঠাক দূরত্ব বজায় রাখার মতো মামুলি কয়েকটা নিয়ম মানলেই সংক্রমণের ভয় অনেকটা কমানো যায়। অথচ বহু ঝাঁ চকচকে হাসপাতালেও এগুলো মানা হয় না বলে অভিযোগ। যদিও বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র তরফে রূপালি বসুর দাবি, ‘‘গত পাঁচ-ছ বছরে পরিস্থিতি বিস্তর বদলেছে। সংক্রমণ রোখার ব্যবস্থা নিয়েই বাংলার বেশ ক’টা বেসরকারি হাসপাতাল পরিষেবায় জাতীয় স্তরের স্বীকৃতি পেয়েছে।’’

ঘটনা হল, সরকারি হাসপাতালের ছবিও যথেষ্ট ভীতিপ্রদ। সমীক্ষায় প্রকাশ, সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ, আইটিইউ, লেবার রুম, এসএনসিইউ বা বার্ন ইউনিট তো বটেই, জেনারেল বেডেও সংক্রমণের ছড়াছড়ি। কর্তারাই বলছেন, গত ক’বছরে স্বাস্থ্য-পরিষেবায় নানা উন্নতির পরিকল্পনা হয়েছে। রাজ্যের কোণে কোণে মাথা তুলেছে পেল্লায় সুপার স্পেশ্যালিটি। সংক্রমণে লাগাম পরানো না-গেলে সবই বৃথা।

আর এই কাজে নার্সরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন। কারণ, ওয়ার্ডে রোগীর পাশে সবচেয়ে বেশি সময় তাঁরাই থাকেন। তাঁদের পরেই আছেন ডাক্তারেরা। এই দুই পক্ষ সতর্ক হলে বিপদের বহর কমবে বলে কর্তারা আশাবাদী। দফতর-সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, সরকারি
স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে অর্থের মূল জোগান আসে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন থেকে। মিশন এখন হাসপাতালের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে রাজ্যেরও সে পথে না-হেঁটে উপায় নেই।

তাই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ। যার অঙ্গ হিসেবে ডাক্তার-নার্সদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রোটোকল সম্পর্কেও বিস্তারিত অবহিত করা হবে। কেননা, এক-এক হাসপাতালে এক-এক ধরনের সংক্রমনের বেশি দাপট। সেই মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক স্থির করা জরুরি। কোন পর্যায়ে রোগীকে কী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে, সর্বত্র তার সুনির্দিষ্ট নীতি থাকার কথা। হাই ডোজের কিছু অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের আগে বিশেষ কমিটির অনুমোদনও প্রয়োজন। ‘‘কিন্তু নিয়মটির কথা অধিকাংশ চিকিৎসক জানেনই না!”— আক্ষেপ করছেন কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি’র প্রধান চিকিৎসক।

এখন বিধি না-মানলে ব্যবস্থা গ্রহণের ভাবনা চলছে। হাসপাতালের সংক্রমণ রোখার কাজে এ হেন উৎসাহ কত দিন ধরে রাখা যাবে?

অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সংশয়টা মাথা চাড়া দিয়েছে স্বাস্থ্যমহলের অন্দরে। সরকারি হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কিছু দিন আগে কমিটি গড়া হয়। কমিটির সদস্যদের দায়বদ্ধতাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু ক’মাস বাদে কমিটির অস্তিত্বই কার্যত টের পাওয়া যাচ্ছে না! এমতাবস্থায় সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রশিক্ষণও জলে যাবে কিনা, সে ব্যাপারে সরকারি চিকিৎসক-নার্সদের অনেকে বিলক্ষণ সন্দিহান। উপরন্তু তাঁদের প্রশ্ন— রোগীর বিপুল চাপ সামলে এত নিয়ম মেনে চলা কতটা সম্ভব? বিশ্বরঞ্জনবাবুর জবাব, ‘‘আমাদের কিছুর অভাব নেই। চাই শুধু সদিচ্ছা। কমিটিগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো হবে। নিরন্তর নজরদারি চলবে।’’ যে ভাবেই হোক, হাসপাতাল থেকে ছড়ানো সংক্রমণ রোখা না-গেলে পরিকাঠামো বাড়িয়ে কোনও লাভ নেই বলে মনে করেন অধিকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

infection government hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE