Advertisement
১১ মে ২০২৪

উপাচার্যের সঙ্গে প্রকাশ্য তরজায় নির্মল

প্রকাশ্য বৈঠকে বচসায় জড়ালেন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

প্রকাশ্য বৈঠকে বচসায় জড়ালেন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি।

নির্মলবাবু স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল কাউন্সিল এবং এগজিকিউটিভ কাউন্সিলেরও অন্যতম সদস্য। উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর খটাখটি চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। নির্মল অনুগামীদের অভিযোগ, কোটি-কোটি টাকার ‘অপ্রয়োজনীয়’ নির্মাণ, ‘অযথা’ লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি কেনা, ‘অনর্থক’ গাদা-গাদা কোর্স চালু করা এবং বেশ কিছু পদে ‘অবৈধ’ নিয়োগে উপাচার্য দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আর উপাচার্যের অনুগামীদের দাবি, নির্মলের হস্তক্ষেপে ডাক্তারি পরীক্ষায় অরাজকতা তৈরি হয়েছে।

এত দিন লড়াইটা ছিল ভিতরে ভিতরে। কিন্তু গত ১০ নভেম্বর সল্টলেকে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে গোটা বিষয়টাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর মিলেছে, বৈঠকের শুরু থেকেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে শুরু করে দিয়েছিল। বৈঠকে প্রথম থেকেই তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। তার পর বিষয়টা রীতিমতো উত্তপ্ত বাদানুবাদে পৌঁছে যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব রাজেন্দ্র শুক্ল। গোটা বিষয়টি ঘটেছে তাঁর সামনেই। বিষয়টি তিনি নবান্নেও জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও যুযুধান দুই পক্ষকে নিরস্ত করা যায়নি বলেই বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

উপাচার্য আনন্দবাজারকে পরে বলেন, ‘‘সে দিন বৈঠকে নির্মল মাজি যে সব নিকৃষ্ট শব্দ প্রয়োগ করেছেন, তাতে আমি শুধু বিস্মিত নই, ব্যথিত। আমার আরও দুঃখ, বৈঠকে উপস্থিত কেউ তার প্রতিবাদ করলেন না।’’ কেন? খোলাখুলি কিছু বলতে না চাইলেও স্বাস্থ্য সচিবের উক্তি, ‘‘বৈঠকে খুব সোজাসাপ্টা কথাবার্তা হয়েছে। ভিতরের কথা এর বেশি বাইরে আনব না।’’

উপাচার্যকে অপমান করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, সে দিনের বৈঠকে যে তিনি গলা তুলেছিলেন তা স্বীকার করে নিয়েছেন নির্মল। তাঁর দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা রক্ষার প্রতি আমি দায়বদ্ধ। তা নিয়েই আমি সরব হয়েছিলাম। ওখানে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছেন উপাচার্য স্বয়ং। বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা নিয়ে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে।’’ নির্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাউন্সিলে রয়েছেন। সার্চ কমিটিতেও রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই আমার কাছে দুর্নীতির অভিযোগ আসছিল। মিটিংয়ে সেই সব বিষয় উঠেছে।’’

কিন্তু উপাচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাকে সরানোর জন্যই দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে।’’ বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে নির্মলই ‘হস্তক্ষেপ’ করে বিপদ বাড়াচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ। ভবতোষবাবুর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম আর পরীক্ষা পদ্ধতিকে স্বচ্ছ করতে গিয়ে পদে-পদে বাধা পেয়েছি। নির্মল মাজি-দের চাপে ডাক্তারি পরীক্ষার কেন্দ্রে সিসিটিভি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি, মোবাইলের ব্যবহার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। নিরপেক্ষ ভাবে খাতা দেখার ব্যবস্থা করেও পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।’’

নির্মলের বিরুদ্ধে এই জাতীয় অভিযোগ অবশ্য প্রথম নয়। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষায় টোকাটুকিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নির্মল-অনুগামীদের বিরুদ্ধে। নির্মলবাবুর ছেলে যখন ডাক্তারি পরীক্ষায় বসেন, তখনও সিসিটিভি বন্ধ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ভবতোষবাবুর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নির্মল বলেন, ‘‘উনি পরশ্রীকাতরতা এবং ঈর্ষার বশে এ সব কথা বলছেন। মানুষ আমায় ভালবাসেন, আমি সারাদিন মানুষের জন্য কাজ করি। অনেকেই সেটা সহ্য করতে পারেন না।’’ এর আগেও পরীক্ষায় বেনিয়মে মদতের অভিযোগগুলি ‘ভিত্তিহীন’ই ছিল বলে তাঁর দাবি।

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে নির্মলপন্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ভবন এবং কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে গত এক বছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকার নির্মাণ হয়েছে যার অধিকাংশই প্রয়োজন ছিল না। ওই নির্মাণ কাজে বাজারদরের থেকে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ তলা বাড়ি তৈরির জন্য সরকার ১১ কাঠা জমি দিয়েছে। সেখানে কাজ শুরু করার আগেই এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের অনুমতি না-নিয়ে পুরনো বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নতুন নির্মাণ শুরু হয়েছে। এর পিছনে পূর্ত দফতরের কারও অন্য স্বার্থ ছিল কি না, তা দেখতে পূর্ত দফতরও তদন্ত শুরু করতে চলেছে বলে দফতর সূত্রের খবর।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, বিনা প্রয়োজনে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি কিনে তিনি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলে রেখেছেন। কয়েক লক্ষ টাকার সরঞ্জাম কিনে ফেলে রাখা হয়েছে কল্যাণীতে।

উপাচার্য কী বলছেন এই নিয়ে? ভবতোষবাবুর জবাব, ‘‘এই সব অভিযোগের উত্তর এবং তার সমর্থনে কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে। আগামী অগস্ট পর্যন্ত আমার মেয়াদ। আমি থাকলে ওদের স্বার্থসিদ্ধিতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমি দাঁতে দাঁত চেপে থাকব।’’

নির্মলের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন না কেন?

ভবতোষবাবুর জবাব, ‘‘নির্মল মাজির বিরুদ্ধে কাকে বলব? আমার অত উঁচু পর্যায়ে যোগাযোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trinamool MLA VC briol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE