মনোজ নাগেল (বাঁ দিকে) ও অরবিন্দ চৌহান।নিজস্ব চিত্র।
সারদা মামলায় বারবার উঠে এসেছে নাম দু’টো — মনোজ নাগেল আর অরবিন্দ চৌহান।
মনোজ ছিলেন সারদার ম্যানেজার, অরবিন্দ গাড়িচালক। তাঁদের গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। দু’জনেই এখন জামিনে মুক্ত। তাতে কী! গত দু’বছরের ঘাত-প্রতিঘাতে দু’জনের জীবনই আমূল বদলে গিয়েছে। এক জনের স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। অন্য জনের বাবা মারা গিয়েছেন ক্যানসারে। অসহায়, প্রায় সহায়সম্বলহীন দুই যুবক তাই ফিরতে চান জেলে! অন্তত দু’বেলা খাবার জুটবে তো!
জেলের বাইরে কাজ নেই, কাজ দেওয়ার লোকও নেই। এখন খোলা আকাশের নীচে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সারদা মামলায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন মনোজই। তাঁর দাবি, ২০১৩ সালে সারদার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার সময়ে তিনি সংস্থার দুর্গাপুর অফিসের ম্যানেজার ছিলেন। তখন কর্মচারীদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করতে তিনি সটান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। পরে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কাছেও যান। তার পরের দিনই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ২৩টি আদালতে ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়। মাসে ৬০ হাজার টাকার চাকরি করতে করতেই জেলে যান মনোজ। কিন্তু তাঁর দাবি, দু’বছরের জেলজীবনে পুলিশ তাঁকে কোনও প্রশ্ন করেনি। সিবিআই মামলাটি হাতে নেওয়ার পরে জামিন পেয়ে যান তিনি। মনোজের কথায়, ‘‘দুর্গাপুরের অফিসে কী ধরনের কাজ হতো, তা জিজ্ঞেস করেই ছেড়ে দেয় সিবিআই।’’
এর মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদ করে মেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছেন স্ত্রী। মা অসুস্থ। ছোট ভাই রেশন দোকানে দু’হাজার টাকার চাকরি করেন। মনোজের কথায়, ‘‘এখন মাসে ২০ দিন রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে ঘুরে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এমন চললে খাব কী? আদালতে হাজিরা দেওয়ার গাড়ি ভাড়াও জোগাড় করতে পারছি না।’’ মামলা লড়তে গিয়ে জমানো টাকা শেষ। বাজারে প্রায় আট লাখ টাকা ধার। দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লাখ দুয়েক টাকা থাকলেও পুলিশ মামলা করে তার লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রায় একই অবস্থা অরবিন্দেরও। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে গ্রেফতার হন তিনি। সুদীপ্তর গাড়ি তিনিই চালাতেন। দিল্লির চাণক্যপুরীর বাসিন্দা অরবিন্দের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভিন্ন আদালতে ২৭টি মামলা দায়ের করে। অরবিন্দের কথায়, ‘‘আমি সারদার দিল্লি অফিসের ম্যানেজার ছিলাম। সুদীপ্ত স্যার আমাকে কলকাতায় নিয়ে এসে গা়ড়িচালক হিসেবে নিয়োগ করেন।’’ বছর খানেক আগে জেল থেকে বেরিয়েছেন অরবিন্দ। বেরিয়ে শোনেন বাবা ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। মা শয্যাশায়ী। ছোট ভাই পাঁচ হাজার টাকার চাকরি করেন। মামলা চালাতে পরিবারের সব সঞ্চয় শেষ। তাঁর কথায়, ‘‘এখন কোথাও কাজ পাচ্ছি না। কাজ চাইলে সবাই বলছেন, আমি নাকি কয়েক কোটি টাকার মালিক! অথচ খাবার টাকা নেই।’’
বন্দিদশাই ছিল ভাল, ভাবছেন দু’জনেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy