দুই শিশুর মৃত্যু হল কলকাতায়। প্রতীকী ছবি।
জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে আক্রান্ত হয়ে ফের দুই শিশুর মৃত্যু হল কলকাতায়। মাত্র তিন দিনে এই সংখ্যা পৌঁছল পাঁচে। এর মধ্যে সোমবার সকালে মৃত্যু হয়েছে যে দুই একরত্তির, তাদের এক জন ভর্তি ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। আর অন্য জন বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। শনিবার থেকে ওই দুই হাসপাতালে একের পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও।
এ দিন সকালে ওই দুই হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। বিকেলে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ, শিশু-রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। ছিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাও। সূত্রের খবর, প্রতিটি মৃত্যু নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ বার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৫০ শয্যার ওয়ার্ড চালু করা হবে।
কলকাতা মেডিক্যালে এ দিন সকালে মৃত্যু হয় ৯ মাসের শিশুকন্যার। ২০ দিন ধরে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি অবস্থার অবনতি হওয়ায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে তাকে মেডিক্যালে আনা হয়। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু হয়েছে ভোরে। বেসরকারি সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে রাজ্যে ভাইরাস সংক্রমণে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা হল ১৭। এ দিন বি সি রায় হাসপাতালে এসে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে করোনার সময়ের মতো শয্যা আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা দেখা হচ্ছে।”
বৈঠকে উঠে আসে যে, অনেক ক্ষেত্রেই জেলাস্তরের হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে দেরি হচ্ছে। তাতে শিশুর অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে যে, পরে সামাল দেওয়া মুশকিল হচ্ছে। বৈঠকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং হাসপাতালের লোকবলের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সদ্যোজাত ও শিশু-রোগ চিকিৎসকদের প্রয়োজন ছাড়া ছুটি নেওয়া যাবে না। নিলে, বদলে কে থাকবেন তা নিশ্চিত করতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে এক শয্যায় কেন ২-৩টি করে বাচ্চা রয়েছে, তা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন করা হলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, এত চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরও শয্যা বাড়ানো প্রয়োজন। সূত্রের খবর, তখনই স্বাস্থ্যসচিব বেলেঘাটা আইডি-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন।
জানানো হয়, অযথা জেলা থেকে রেফার বন্ধ করতে হবে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এলে তৎক্ষণাৎ ভর্তি করতে হবে। শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ফের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জেলার প্রত্যন্ত স্তরের হাসপাতালেও। অনেক শিশুকেই প্রথমে সুস্থ হয়েও দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হতে দেখা যাচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে তা মারাত্মক আকার নিচ্ছে। যেমন, শনিবার গভীর রাতে বি সি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া উদয়নারায়ণপুরের রাজশ্রী রায় (৯ মাস) টানা কয়েক দিন জ্বর নিয়ে ভর্তি ছিল ওই হাসপাতালে। বাড়ি চলে যাওয়ার পরে ফের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় ভর্তি করা হলেও, সাত দিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়।
কলকাতা মেডিক্যালের শিশুদের আইসিইউ-এর প্রধান মিহির সরকার বলেন, “করোনার মতো এ ক্ষেত্রেও ভাইরাসের সংক্রমণ সেরে গেলেও শরীরে প্রদাহ থেকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আবার এক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে সেটির অন্য স্ট্রেন বা নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” শিশু চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, “এক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় কিছু দিনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। সেই সময়ে আর একটি ভাইরাস সহজে আক্রমণ করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy