Advertisement
০২ মে ২০২৪
Aadhar Card Row

আধার বাতিল নয় জানালেও সিএএ-বিতর্ক, চাপে পড়ে দায় ঠেলছে বিজেপি

ইউআইডিএআই জানিয়েছে, কোনও আধার নম্বর বাতিল করা হচ্ছে না। যদি কোনও আধার ব্যবহারকারীর এ বিষয়ে অভিযোগ থাকে, তা হলে তাঁরা তা জানাতে পারেন ইউআইডিএআই-এর ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট লিঙ্কে।

নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।

নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৪
Share: Save:

গত কয়েক দিন ধরে অনেকের আধার নম্বর ‘বাতিল’ হওয়া ঘিরে নাগাড়ে বিতর্ক আর চাপের মুখে তা নিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হল আধার কর্তৃপক্ষ ইউআইডিএআই। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, কোনও আধার নম্বর বাতিল করা হচ্ছে না। যদি কোনও আধার ব্যবহারকারীর এ বিষয়ে অভিযোগ থাকে, তা হলে তাঁরা তা জানাতে পারেন ইউআইডিএআই-এর ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট লিঙ্কে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে সেটা খতিয়ে দেখা হবে বলেও।

কিন্তু কেন্দ্রের এই আশ্বাসে রাজনীতির চাপানউতোর থামেনি। বরং ‘বেছে-বেছে’ আধার বাতিলের মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালুর রাস্তা মসৃণ করার চেষ্টার গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। উল্টো দিকে, এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে ক্ষোভ দানা না বাঁধে, সেই চেষ্টায় পুরোদমে মাঠে নেমেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের আশ্বাস, যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে তাঁদের সকলের আধার আবার সক্রিয় করা হবে। তাঁর দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে আমার ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথা হয়েছে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ওই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।’’

শান্তনুর বক্তব্য, যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তাঁদের একটি ফর্ম পূরণ করে নতুন করে তা সক্রিয় করার আবেদন করতে হবে। তাঁর ই-মেল (aadharsthakurbari@gmail.com) ও মোবাইল নম্বরে (৯৬৪৭৫৩৪৪৫৩) হোয়াটসঅ্যাপ মারফতও ওই ফর্ম পাঠানো যাবে বলে তাঁর দাবি। প্রয়োজনে রাজ্যে থাকা বিজেপি দফতরগুলিতেও ওই আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের প্রশ্ন, আধারের মতো একটি জরুরি এবং সরকারি পরিষেবা ফের সক্রিয় করার কাজ ব্যক্তিগত ভাবে কোনও মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক দল করবে কেন? এ কি তবে ভোটের মুখে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি?

এ দিনই রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, উদ্বাস্তুদের সমস্যার এককালীন সমাধানের জন্যই সিএএ দরকার। তৃণমূলের প্রশ্ন, ভোটের মুখে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সামনে ‘সিএএ-র গাজর’ ফের ঝোলাতেই কি এ ভাবে বাতিল করা হচ্ছিল আধার? এ দিন শান্তনুর বিবৃতিও কি একই লক্ষ্যে?

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, আসলে কত জন সিএএ–র আওতায় আসতে পারেন, সেই জল মাপতেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ, যাঁদের আধার নম্বরগুলি বাতিল হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু। সূত্রের খবর, তাঁদের ক্ষেত্রে আধার আইনের ২৮এ ধারা অনুযায়ী আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনও বিদেশি ব্যক্তির যদি ভারতে থাকার জন্য ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তা হলে তাঁর আধার বাতিল হবে। আধার কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন, ওই বিদেশি ভারতে বসবাসের প্রশ্নে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে পারেননি, সে ক্ষেত্রেও আধার বাতিল হতে পারে। ইউআইডিএআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাভুক্ত ‘ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিস’ কারও ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ না থাকার কথা জানালে, অভিযুক্তকে সংশ্লিষ্ট আ়ঞ্চলিক অফিসে ডেকে আগে নাগরিকত্বের নথি জমা দিতে বলা হয়। তিনি তা দিতে না পারলে, তখন আধার নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্ন ওঠে। অনেকের মতে, অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়ায় কিংবা ভুয়ো তথ্য জমা দেওয়ার কারণে ওই সব আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে অনেকের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে। এঁদের সকলে বাংলাদেশ আসেননি। আগে নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ না দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘কোনও কিছু বাতিলের আগে ন্যায় বিচারের নীতি মেনে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠাতে হয়। তার উপযুক্ত জবাব না দিলে, তখন তা বাতিলের প্রশ্ন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কি তা করা হয়েছে?’’

আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া নিয়ে সমস্যার কথা বলছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছড়াচ্ছিল আতঙ্কও। তৃণমূল সূত্রে প্রশ্ন, সেই কারণেই কি কেন্দ্রের তরফে সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব পাওয়ার কথা দাবি করেছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু? সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ব্যাঙ্কে সমস্যা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা রাখার যে পরামর্শ দিয়েছেন, তাকে আক্রমণ করে শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘সমবায় ব্যাঙ্কেও আধার লাগে। আসলে ওই কথা বলে আমজনতাকে ফের চিটফান্ডে টাকা রাখার পথে ঠেলে দিচ্ছেন মমতা।’’ তবে শুভেন্দুর মতো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আধারের সমস্ত সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা তিনি বলেননি। বিজেপির অভিযোগ, সন্দেশখালি থেকে নজর ঘোরাতেই আধার নিয়ে এ ভাবে সরব হয়েছে তৃণমূল।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আবার আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন ইউআইডিএআই-এর রাঁচীর আঞ্চলিক দফতরের উপরে। এমনকি ভোটের মুখে হঠাৎ একটি দফতর থেকেই এমন হল কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য রাঁচীর দফতরের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সেখানকার ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অখিলেশ কুমার গুপ্তর সচিবালয় থেকে বলা হয়, তিনি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ব্যস্ত। এ নিয়ে কিছু বলবেন না। যা বলার দিল্লির সদর দফতর বলবে। সেখানে ই-মেল করা হলে, কোনও জবাব এ দিন রাত পর্যন্ত আসেনি। তবে রাঁচীর ওই আঞ্চলিক দফতরের (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিবৃতিতে দাবি, কোনও আধার বাতিল করা হয়নি। আধারের তথ্যভান্ডার ঠিক রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আধারের নথি ‘আপডেট’ করা হয়। এ বিষয়ে গ্রাহকদের জানানোও হয়। যদিও নথি ‘আপডেট’ বা যাচাইয়ের সঙ্গে আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার কী সম্পর্ক, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

UIDAI Shantanu Thakur BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE