রাজ্যের সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে এক বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। একটাও বন্ধ হয়নি। অভিযানই চালানো হয়নি বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে। অথচ সেগুলি বন্ধ করতে পারলেই শব্দবাজির তাণ্ডব এক ঝটকায় অনেকটা কমত।
কী ভাবে?
বাজি উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানার সংখ্যা প্রায় ছ’লক্ষ। ওই সব কারখানায় উৎপন্ন বাজির অর্ধেকের বেশি শব্দবাজি।
উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জের নারায়ণতলায় সোমবার সকালে একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে এক নাবালকের মৃত্যু হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই কারখানা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছিল না এবং আলোর বাজির আড়ালে সেখানে এ বার দেদার শব্দবাজি তৈরি হয়েছে। ঘটনার পর কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন মালিক। ২০০৮-এ একই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। তিন নাবালকের মৃত্যু হয়। তখনও অবশ্য পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছিল। পরিবেশকর্মীদের মতে, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবেদনকারী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘পিংলা, নারায়ণগড়, বজবজ, সোনারপুর আর তার পর এ বার নীলগঞ্জ। একের পর এক ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে। অথচ বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ে প্রশাসন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্বিকার!’’ তাঁর মতে, বেআইনি বাজি কারখানাগুলি বন্ধ করতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গত বছর ১৬ অক্টোবর স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও কেন টালবাহানা হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না তাঁর।
এ দিন অবশ্য শব্দবাজির বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ শহর জুড়ে অভিযান শুরু করেছে। প্রথম দফার অভিযান হয়েছে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের নেতৃত্বে। তবে পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে শব্দবাজি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফার অভিযান শুরু হয়েছে দুপুর ১টায়। গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চলছে। প্রবল চাপের মুখে এ দিন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, বেআইনি শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযানে তারা পুলিশের সঙ্গে সামিল হবে। তবে কবে থেকে তা তারা ঘোষণা করেনি।
অতীতে হাওড়ার উলুবেড়িয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জে দফায় দফায় পর্ষদ অভিযান চালাত। পর্ষদের মতে, রাজ্যে সব চেয়ে বড় বাজির গুদাম রয়েছে ওই দু’টি এলাকায়। উৎপাদকদের কাছে তৈরি শব্দবাজি আগে মজুত করা হত ওই গুদামে। তার পর তা পৌঁছে যেত পাইকারদের কাছে। সেই জন্য ওই দু’টি গুদামে পুলিশের সঙ্গে অভিযান চালিয়ে টন টন শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করেছিল পর্ষদ। তাই তখন বাজারে শব্দবাজির পৌঁছনোর পরিমাণটাই কমে যেত।
পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক ও শব্দদূষণ রোধে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত প্রাক্তন স্পেশ্যাল অফিসার বিশ্বজিৎবাবুর মতে, কারখানা থেকে এক বার বাজারে বাজি চলে এলে তার পর ধরা খুব মুশকিল। এ বারে অন্তত এক-দেড় মাস আগে নীলগঞ্জের মতো এলাকাগুলিতে অভিযান চালানোর প্রয়োজন ছিল। কারণ, ওই এলাকাগুলিতে শব্দবাজি তৈরি কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy