‘যুদ্ধং দেহি’। মঙ্গলবার, বিষ্ণুপুরের রসপুঞ্জে। — অরুণ লোধ
দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ, ইটবৃষ্টি, রাস্তা অবরোধ। বিষ্ণুপুরের রসপুঞ্জে সোমবারের অশান্তির রেশ রয়ে গেল মঙ্গলবারও। রাতে উত্তেজিত জনতা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর।
সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক স্কুলপড়ুয়া এবং তার মায়ের। গুরুতর জখম হয় আরও চার পড়ুয়া। এর জেরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাখরাহাট রোডের রসপুঞ্জের মোড়। দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রসপুঞ্জের মো়ড় অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই মোড়ে দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলে পুলিশের দিকে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি শুরু হয়। উত্তেজিত জনতাকে বাগে আনতে জনতার দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। শেষমেশ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠি চালিয়ে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা কমেনি বলেই জানাচ্ছেন জেলা পুলিশ-কর্তারা। গণ্ডগোলের জেরে মঙ্গলবার এলাকার ছ’টি স্কুলই বন্ধ রাখতে হয়েছে। বুধবারও স্কুল খোলা যাবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছিল। কিন্তু তা না হওয়ার প্রশাসনকে বাধ্য হয়েই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’’
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই কিছু বহিরাগত যুবক এলাকায় এসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়। এ নিয়ে একাধিক বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রশাসন আগে থেকে সতর্ক হলে সোমবারের দুর্ঘটনাই ঘটত না।
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষিকার অভিযোগ, ‘‘শুধু স্কুল ছুটির সময়েই নয়, স্কুল চলার সময়েও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হয়। আমরাও বাদ পড়ি না।’’ তিনি জানান, পুলিশকে বারবার অভিযোগ করেও ফল হয়নি। বছর কয়েক আগে পরীক্ষা চলার সময়েও পাশের মাঠ থেকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করায় থানায় অভিযোগ করা হয়। তার পরে কিছু দিন সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হলেও পরে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনায় জখম দুই পড়ুয়া পায়েল মণ্ডল এবং অনুশ্রী মণ্ডল আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। বাকি দুই জখম পড়ুয়া রাকেশ কয়াল ও প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ওই বিক্ষোভের রেশ চলে মঙ্গলবারেও। এ দিন সকাল থেকেই রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, বাঁশের ব্যারিকেড করে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জনকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত অবরোধ উঠবে না, এমন দাবিতে অনড় থাকেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ অফিসারেরা অবরোধের সামনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের সরানো যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে দাবি ওঠে, ‘‘কিছু হলেই ফিতে কাটতে নেতারা চলে আসেন। এখানে স্থানীয় বিধায়ককে আসতে হবে।’’
বেলা গড়িয়ে দুপুর হতেই অবরোধকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পুলিশের উপরে ইটবৃষ্টি বাড়তে থাকে। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত ব্যর্থ হন। এর পরেই প্রশাসনের তরফে পাঁচটি থানার পুলিশ এবং জেলা পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী জড়ো করে অবরোধ ওঠাতে এগোয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার দু’পাশ থেকে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা পুলিশও লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের পাল্টা অভিযানে পিছু হঠে বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু রাতে ফের সংগঠিত হয়ে ফাঁড়িতে হামলা চালায়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ফাঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়িতে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দিন ভাঙড়ের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বেশির ভাগ পুলিশ ওখানে গিয়েছে। ফলে, বিষ্ণুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বাহিনী নেই। রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy