আরব সাগরে জন্ম নিয়েছে ‘পাইনগাছ’। এ বার বঙ্গোপসাগরে ডানা মেলতে চলেছে ‘প্রজাপতি’!
এই পাইনগাছ, এই প্রজাপতি আসলে ঘূর্ণিঝড়। রবিবার আরব সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। ওমান তার নাম দিয়েছে ‘লুবান’। এই আরবি শব্দের অর্থ পাইনগাছ। সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর আগেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলেছে একটি ঘূর্ণিঝড়। পাকিস্তান তার নাম ঠিক করেই রেখেছে— ‘তিতলি’। অর্থাৎ প্রজাপতি।
তবে বাংলায় প্রজাপতির হামলার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। রবিবারেই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি শক্তিশালী হয়েছে। মঙ্গলবার সেটি আরও শক্তি বাড়াবে এবং তার পরে ঘূর্ণিঝ়়ড়ের চেহারা নিয়ে ওড়িশা এবং লাগোয়া অন্ধ্র উপকূলের দিকে বয়ে যাবে। তার প্রভাবে বুধ থেকে শুক্রবার কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টি হবে। ভারী ব়ৃষ্টি হতে পারে কয়েকটি জেলায়। তবে বোধনের আগেই বৃষ্টি থেমে যাবে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, কাল, বুধবার থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হবে। তা চলতে পারে শুক্রবার পর্যন্ত। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। উপকূলীয় এলাকায় ঝো়ড়ো হাওয়া বইবে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি অতিপ্রবল হবে। তার অভিমুখ ওমানের দিকে। কিন্তু ‘প্রজাপতি’র ডানার ঝাপটায় ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রায় একসঙ্গে পাইনগাছ আর প্রজাপতি কেন, আবহবিজ্ঞানীরা তা নিয়ে কিঞ্চিৎ ধন্দে আছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, একই সময়ে দেশের দু’দিকের দুই সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে সচরাচর দেখা যায় না। এ বার যে হল, তার জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন দায়ী কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৩ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকা (বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর এর আওতায় পড়ে)-য় পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। এ বার লুবান-সহ মোট চারটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। তিতলি পাখা মেললেই সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে ২০১৮!
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অক্টোবরে ঘূর্ণিঝ়ড় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এটাকে বলা হয় ‘সাইক্লোন সিজ়ন’ বা ঘূর্ণিঝ়ড়ের সময়। কিন্তু একই সময়ে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে সচরাচর দেখা যায় না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ঘূর্ণিঝ়়ড় তৈরির জন্য সাগরজলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপের মতো কয়েকটি অনুকূল বিষয়ের প্রয়োজন হয়। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সেই অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে।
দুই সাগরে দুই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ভিন্ন মতও আছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝ়়ড়ের প্রভাব বাড়বে এবং প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দ বিগ়়ড়ে যাবে, এই তত্ত্ব পরিবেশবিদ মহলে ইতিমধ্যেই সুবিদিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর রিপোর্টেও তা উঠে এসেছে। পরপর ঘূর্ণিঝড় তৈরি এবং একই সময়ে দুই সাগরে দু’টি ঘূর্ণিঝ়ড় তৈরির পরিস্থিতিতে সেই তত্ত্ব আরও জোরালো হচ্ছে বলে এক শ্রেণির পরিবেশবিদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy