সম্পত্তি রক্ষার বিল পাশের দিন বিধানসভায় ধস্তাধস্তিতে ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৩৬ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ত, বিদ্যুৎ এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ মিলে এই ক্ষয়ক্ষতির হিসাবের যে রিপোর্ট বিধানসভার সচিবের কাছে জমা দিয়েছে, তা থেকেই টাকার অঙ্ক জানিয়েছেন স্পিকার। যে অঙ্ক শুনে ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত বিরোধী শিবির! তবে স্পিকার বলে রেখেছেন, ওই দফতরগুলির ওই সমীক্ষা এখনও তাঁর বিবেচনাধীন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
তৃণমূল প্রধান বিরাধী দল থাকার সময়ে ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিধানসভার গোটা অলিন্দ জুড়ে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল, তাতে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৪১৬ টাকা। সে বার মেহগনি কাঠের সেন্টার টেবল ভেঙে তার পায়া খুলে নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল অন্যান্য আসবাব ভাঙতে। সে বারের ভাঙা আসবাব, তোবড়ানো মাইক্রোফোনের যে ছবি বিধায়কদের মনে আছে, তার সঙ্গে এ বারের ছবি দৃশ্যত মেলাতে পারছেন না অনেকে। কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘নামী বিদেশি সংস্থার মাইক্রোফোন এখন বিধানসভায় আছে ঠিকই। কিন্তু মাইক যে কনসোলের উপরে লাগানো, সেটাই তো খারাপ! তাই ইলেকট্রনিক ভোটিং হয় না। শুধু দু’টো মাইকের আলাদা দাম ধরা যায় নাকি?’’
স্পিকার অবশ্য জানিয়েছেন, দু’টো নয়, ১০টি মাইক্রোফোন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। সবক’টাই নতুন করে তৈরি করতে খরচ হবে ১২ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। সেই সঙ্গেই মঙ্গলবার তাঁর বক্তব্য, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় ২১ ও ২৪ নম্বর আসনের বেঞ্চে চিড় ধরেছে। পায়া ভেঙেছে। ওই বেঞ্চটি অ্যান্টিক
বার্মা টিক উডের। সেটি সারাতে দু’হাজার টাকা লাগবে।’’
এখন প্রশ্ন থাকছে, হিসাব না হয় হল। এর ভিত্তিতেই কি এ বার বিরোধীদের থেকে জরিমানা আদায় হবে? কারণ, গত বার আসবাবের ক্ষয়ক্ষতির জন্য তৃণমূলের ২৯ জন বিধায়ককে মাথা পিছু ১৩ হাজার ৭০৪ টাকা জরিমানা ধার্য করেছিলেন তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। বর্তমান স্পিকার বিমানবাবু এ দিন শুধু বলেছেন, ‘‘বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। সময়মতো জানাব।’’ বিরোধীরা অবশ্য জরিমানা চাপতে পারে ধরে নিয়েই পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছে!
বিরোধী দলনেতাকে হেনস্থা এবং বিধানসভায় কণ্ঠরোধের প্রতিবাদেই এ দিন বিধানসভা থেকে মিছিল করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন কংগ্রেস ও বাম বিধায়কেরা। রাজভবন থেকে বেরিয়ে কংগ্রেসের পরিষদীয় উপ-দলনেতা নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘যে দিন বিরোধী দলনেতাকে নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে বার করে দেওয়া হল, সে দিনের ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি। অথচ একটা রিপোর্ট বেরিয়ে গেল! আমরা এটা নজরে রেখেছি, যেমন প্রতিবাদ করার করব।’’ হাসপাতালে বসেই বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান (চিকিৎসকেরা যাঁকে আরও অন্তত সপ্তাহদুয়েক বিশ্রামে থাকতে বলেছেন) এই খবর পেয়ে দলীয় বিধায়কদের পরামর্শ দিয়েছেন, জরিমানা করা হলে প্রয়োজনে তাঁরা আদালতে যেতে পারেন। সভার বাইরে কংগ্রেসেরই এক বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘সাড়ে ১২ লক্ষ টাকায় তো রাজারহাটে এখনও ফ্ল্যাট হয়ে যাবে!’’
আরও পড়ুন:
পড়ুয়াদের পুরস্কারের মঞ্চেই ক্ষোভের লাভা শিক্ষামন্ত্রীর
আর বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, আসনের পায়া বা মাইক্রোফোন— যা ক্ষতি হয়েছে, সবই বিরোধী দলনেতার আসনের দিকে। শাসক বেঞ্চে নয়। তা হলে ক্ষতির দায় কেন বিধানসভার সচিবালয়ের উপরেও চাপবে না? রাজভবনের সামনেই সুজনবাবু বলেন, ‘‘যাদের অভিযুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে, তাদের কোনও বক্তব্যই শোনা হয়নি! এটা যদি তদন্ত রিপোর্ট হয়, আমরা সেই রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দেব!’’
স্পিকার বিমানবাবু অবশ্য এ দিন উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘মাত্র ১০-১২টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অনেকে বিদ্রুপ করেছিলেন! এ ধরনের মন্তব্যে আমি অসন্তুষ্ট।’’ বিরোধী বিধায়কেরা এ দিন ফের এপ্রন পরেই বিধানসভায় ঢুকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। স্পিকার প্রশ্নোত্তর-পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতেই তাঁরা সভা ছাড়েন। পরে রাজভবন থেকে ফিরে বামেরা বাজেট বিতর্কে যোগ দিলেও কংগ্রেস আর সভায় ঢোকেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy