Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভ্যানিশিং কালির কামাল, উধাও টাকা 

কাউকে ঋণ পাইয়ে দেওয়া, কারও থেকে এটিএম কাউন্টার ভাড়া নেওয়ার অছিলায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল দলটি। তাদের খোঁজে পুলিশ যখন তদন্ত চালাচ্ছে, তখন অন্য দিকে বারাসত, দত্তপুকুরে পরপর ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হচ্ছিল।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

বোকা বানিয়ে প্রতারণা করতে ‘বাবলিদের’ লক্ষ্য ছিল পুরুষেরা। মহিলাদের ঠকানোর দায়িত্বে ছিল ‘বান্টিরা’। পাকা ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এমনকি পুলিশকেও এত দিন ঘোল খাওয়াচ্ছিল দু’জোড়া বান্টি-বাবলি। এ বার উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের জালে ধরা পড়ল তাদেরই এক বাবলি। ধৃতের আসল নাম সুদেষ্ণা সেনগুপ্ত। বারাসত আদালতের বিচারকের নির্দেশে তার পুলিশ হেফাজত হয়েছে।

কাউকে ঋণ পাইয়ে দেওয়া, কারও থেকে এটিএম কাউন্টার ভাড়া নেওয়ার অছিলায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল দলটি। তাদের খোঁজে পুলিশ যখন তদন্ত চালাচ্ছে, তখন অন্য দিকে বারাসত, দত্তপুকুরে পরপর ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হচ্ছিল। হাবরা থানার পুলিশ আধিকারিক গৌতম মিত্র জানিয়েছেন, যাদবপুরের গরফার বাসিন্দা এই সুদেষ্ণা। পুলিশের দাবি, সাম্প্রতিক কালের প্রায় সব ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তাদেরই কীর্তি বলে স্বীকার করেছে সে। মঙ্গলবার তাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কলকাতার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি দলের অন্যদের খোঁজ চালায়।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা দিব্যেন্দু ভদ্রকে ১০ লক্ষ টাকার ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে দুই যুবতী তাঁর থেকে একটি ১৪৯ টাকার চেক নেয়। সোমা সাহার নাম করে এক মহিলা সচিত্র পরিচয়পত্রও দেখান। সেই চেকে নিজের কলমে স্বাক্ষর করেন দিব্যেন্দুবাবু। কিন্তু বানান ভুল হতে পারে বলে সংস্থার নাম এবং ১৪৯ টাকার সংখ্যাটি নিজের কলম দিয়ে বসিয়ে নেয় সোমা। দিব্যেন্দুবাবুকে বলা হয়, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যে মোবাইল নম্বরের সংযোগ রয়েছে, সেটি আধ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে। তিনিও তাই করেন। কিন্তু মোবাইল খোলার পরে ব্যাঙ্কের মেসেজ ঢোকায় দিব্যেন্দুবাবু জানাতে পারেন, তাঁর অ্যাকউন্ট থেকে ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা তোলা হয়েছে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানান, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইলটি বন্ধ ছিল। এর পরেই দিব্যেন্দুবাবু মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, একের পর এক পাওয়া অভিযোগের তদন্তে নেমে সুদেষ্ণার ছবি দেওয়া সোমা সাহা নামের পরিচয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং সুদেষ্ণার মোবাইল ট্র্যাক করে তাকে ধরা হয়। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘সোমা সাহা নামে আমাকে পরিচয়পত্র দিয়েছিল এই সুদেষ্ণা। সে কথা স্বীকারও করেছে।’’

তদন্তকারীরা জানান, সুদেষ্ণা জানিয়েছে, পুরুষ ‘টার্গেটে’র কাছে যেত তারা আর ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার দায়িত্বে থাকত দলের ছেলেরা। ‘টার্গেট’ মহিলা হলে ছকটা উল্টে যেত। যেমন, দত্তপুকুর থানা এলাকার পলি গুহের কাছে গিয়েছিল কৃষ্ণেন্দু নামের এক যুবক। এটিএম-এর জন্য ঘর ভাড়ার নামে একই ভাবে চেক নেওয়ার পরে পলিদেবীর অ্যাকাউন্ট থেকে ৬১ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়।

কী ভাবে টাকা উধাও হত?

জেরায় সুদেষ্ণা জানিয়েছে, স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার পরে নিজেদের ম্যাজিক কালির কলমে (ভ্যানিসিং ইংক) টাকার অঙ্ক লিখে নিত সুদেষ্ণারা। কিছু ক্ষণ পরে তা ঘষলে লেখা উঠে যেত। তখন নিজেদের মতো টাকা বসিয়ে নিত তারা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুদেষ্ণার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। কলেজের গণ্ডি না পেরোনো সুদেষ্ণার ছ’বছরের একটি মেয়ে আছে। নিজের প্রয়োজনে কাজ খুঁজতে গিয়েই ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় তার। এর পরেই লোক ঠকিয়ে দ্রুত টাকা আয়ের পরিকল্পনা করে তারা। বুদ্ধিদীপ্ত সুদেষ্ণার কথায় রীতিমতো তাজ্জব তদন্তকারী অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vanishing Ink Money Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE