বাজারে এখন রঙের মেলা। তবু মেজাজটা যেন ফিকে।
কমলা রঙের গাজর, সাদার উপরে হাল্কা বেগুনি ছোঁয়া নিয়ে শালগম, গাঢ় সবুজ সিম, হাল্কা সবুজ ওলকপি, ম্যাজেন্টা-সাদা মুলো। এমনই হরেক কিসিমের টাটকা তাজা শীত-সব্জিতে ভরেছে বাজার। কিন্তু সব্জির বাজারে যত রঙের জোয়ার, সেই অনুপাতে বিক্রি কোথায়? নগদ সঙ্কটের ধাক্কায় যেন ক্রেতাদের মনটা যেন এখনও বর্ণহীন, ম্যাড়মেড়ে। রবিবারের বাজারে ভিড় হয়নি, এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু সব্জির বাজারে মরসুমি রং দেখে খুশি হয়ে ছুটির সকালে থলে ভরার যে দিলদরিয়া ভাব দেখা যায়, সেটাই যেন উধাও।
পাইকারি বাজার থেকে দশ হাজার টাকার মরসুমি সব্জি কিনেছিলেন মানিকতলা বাজারের ব্যবসায়ী রাজু পাত্র। সাধারণত রবিবার দুপুর ১টার মধ্যে দোকান বন্ধ করেন তিনি। এ দিন ২টো পর্যন্ত বসেছিলেন। তা সত্ত্বেও হাজার তিনেক টাকার সব্জি বাড়ি ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। আবার মাঝ ডিসেম্বরের রবিবারে অন্যান্য বছর বাঘা যতীন বাজারের জয়দেব সাউ রবিবার যেখানে প্রায় চার হাজার টাকার সব্জি বিক্রি করেন, এ দিন সেখানে মেরেকেটে ব্যবসা হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকার। মানিকতলার রাজুবাবুর কথায়, ‘‘সাধারণত এই সময়ে আমরা যতটা সব্জি পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনি, তার পুরোটাই বিক্রি হয়ে যায়। এখন সেটা হচ্ছে না।’’
রবিবার কোলে মার্কেট থেকে ২০ কেজি বেগুন কিনে এনেছিলেন কার্তিক সাউ। কিন্তু ২৫ টাকা কেজি দরে মানিকতলা বাজারে সেই বেগুন মাত্র ১০ কেজি বিক্রি করতে পেরেছেন কার্তিকবাবু। আবার তারক সাউ পাইকারি বাজার থেকে এনেছিলেন ১০ কেজি সিম। মানিকতলায় সকাল থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত সেই সিম ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও অর্ধেকের বেশি পড়ে।
বারাসত থেকে দমদম বাজারে সব্জি নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় ঘোষকে যে কারণে বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ২০ টাকা কেজি-র সিম, ১০ টাকা কেজি-র মুলো, ১২ টাকা কেজি-র বাঁধাকপি, ২০ টাকা কেজি-র বেগুন বিক্রি করতে খদ্দেরদের ডেকে আনতে হয়েছে। যাদবপুর বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী নিতাই দেবনাথের কথায়, ‘‘দাম কমিয়েও দিলেও ক্রেতারা নিতে চাইছেন না।’’ যাদবপুরেরই আর এক বিক্রেতা শৈলেন কাঁসারি বলেন, ‘‘এক বেলাতেই আমি হাজার চারেক টাকার সব্জি বিক্রি করি। কিন্তু রবিবার দু’বেলা মিলিয়েও আড়াই হাজার টাকার বেশি সব্জি বিক্রি হল না।’’
বাঘা যতীন বাজারের জয়দেব সাউ আবার জানান, ‘‘অধিকাংশ ক্রেতা দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে আসছেন। খুচরো দেওয়া সমস্যা হচ্ছে।’’ মানিকতলার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারিকর্মী বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক-এটিএমে গেলে দু’হাজার টাকার নোট মিলছে। তা-ও পর্যাপ্ত পরিমাণে নয়। বাধ্য হয়ে ভেবেচিন্তে খরচ করতে হচ্ছে।’’
ভাঙড়ের চাষি আবদুল রশিদ মোল্লাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বিয়েবাড়ি। এ দিন খেতের ৬৩টি ফুলকপি নিয়ে উত্তর কলকাতার বাজারে বিক্রি করতে বসেন। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বড় মাপের ফুলকপি প্রতি পিস ১৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল ৩৩টি। অথচ তিন-চারটির বেশি পড়ে থাকার কথা নয়। অপেক্ষা করতে করতে যখন তিনি ভাবছেন, এ দিন লোকসানই গুনতে হবে, তখন হঠাৎ এক কেটারার ফুলকপি কিনতে আসেন। প্রতি পিস ১২ টাকা দরে ৩০টি কপি তাঁকে বিক্রি করে দেন আবদুল রশিদ।