বন্দর সূত্রের খবর, দরপত্র ডেকে লিজ শেষ হয়ে যাওয়া জমি বিলির ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে প্রথমে পুরনো ভাড়াটে বা জবরদখলকারীকেই সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পি-৫১ হাইড রোডের ক্ষেত্রে সেই নীতি অনুসরণ করা হবে না। কারণ, ওই জমি হাতে নিতে গিয়ে যে ভাবে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এবং এলএমজে কনস্ট্রাকশন-এর লোকেদের হাতে বন্দর কর্তাদের নিগৃহীত হতে হয়েছে তাতে বেজায় চটেছে জাহাজ মন্ত্রক। জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একই সঙ্গে বন্দর ওই জমির দখল নিতে গেলে রাজ্য পুলিশ যাতে সাহায্য করে, সেই অনুরোধও চিঠিতে জানিয়েছিলেন নিতিন। হাইকোর্টের এ দিনের নির্দেশের পরে ওই জমি দখলের ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকছে না বলেই মনে করছেন বন্দরকর্তারা।
হাইড রোড এক্সটেনশনের ওই জমির মাপজোক করে সেখানে কী কী নির্মাণ রয়েছে, তা সবিস্তার রিপোর্ট আকারে পেশ করতে গত ১৩ অক্টোবর কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারপতি দত্ত। এ দিন আদালতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ওই জমির আয়তন ৮০ হাজার ৬০ বর্গফুট। তার মধ্যে ৬৯ হাজার বর্গফুটই দখল করে রয়েছে ভেক্টটেশ ফিল্মস। ওই প্রযোজক সংস্থার আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ৬৯ হাজার বর্গফুটের মধ্যে ১৯ হাজার বর্গফুট এলাকায় সংস্থার অফিস রয়েছে। সেই ১৯ হাজার বর্গফুট এলাকা প্রযোজক সংস্থা এখনই ছেড়ে দিতে চায়। বাকি জমি খালি করতে তাঁদের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। তাতে আপত্তি জানিয়ে বন্দরের আইনজীবী কিশোর দত্ত আদালতকে বলেন, তাঁরা এক সঙ্গে পুরো জমি দখলমুক্ত চান।
বিচারপতি দত্ত প্রযোজক সংস্থার আইনজীবীকে জানান, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সময় দিতে পারবেন না। জমি খালি করে দিতে হবে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে। একই সঙ্গে বিচারপতি দত্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন, তাঁরা জমির দখল পেলেন কি না, তা ১৭ নভেম্বর আদালতকে জানাতে হবে। ওই কাজে যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কমিশনারকে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা করতেও বলেছেন বিচারপতি।
কলকাতা বন্দরের অন্য একটি জমি রয়েছে মাঝেরহাট সেতুর পূর্ব দিকে, দুর্গাপুর সাইডিংয়ে। ১ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই জমি দখলমুক্ত করতে গিয়ে স্থানীয় বাধার মুখে পিছিয়ে আসে পুলিশ। এর পরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার
সুরজিৎ করপুরকায়স্থ এবং বন্দর ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার সুদীপ সরকারকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মতো এ দিন আদালতে হাজির হন তাঁরা। সরকারি কৌঁসুলি প্রণব দত্তের কাছে বিচারপতি জানতে চান, কবে জমিটি দখলমুক্ত হবে। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রণববাবু আদালতে জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তা করা সম্ভব। কেন এত সময় লাগবে তা জানতে চান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ কমিশনার সরকারি কৌঁসুলির মাধ্যমে আদালতকে জানান, দুর্গাপুজো, মহরমের মতো উৎসব রয়েছে সামনে। সে সব শেষ হলেই জমি দখলমুক্ত করা যাবে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কোন তারিখে পুলিশ মোতায়েন করে ওই জমি দখলমুক্ত করা হবে, তা যেন তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়ে দেন।