Advertisement
E-Paper

স্টুডিও অমিল, তাই বেআইনির কেল্লা ফতে

বছর ছ’-সাত আগেকার কথা। কলকাতায় প্রায় হঠাৎই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠতে শুরু করল গুচ্ছের মেজ-সেজ বাংলা চ্যানেল। কিন্তু এত চ্যানেলের শ্যুটিং হবে কোথায়? ঠিক এমনই সময়ে তারাতলায় বন্দরের জমিতে শ্যুটিংয়ের ‘সোনার খনি’র দিকে নজর পড়েছিল টালিগঞ্জের প্রভাবশালী প্রযোজকদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২২

বছর ছ’-সাত আগেকার কথা। কলকাতায় প্রায় হঠাৎই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠতে শুরু করল গুচ্ছের মেজ-সেজ বাংলা চ্যানেল। কিন্তু এত চ্যানেলের শ্যুটিং হবে কোথায়? ঠিক এমনই সময়ে তারাতলায় বন্দরের জমিতে শ্যুটিংয়ের ‘সোনার খনি’র দিকে নজর পড়েছিল টালিগঞ্জের প্রভাবশালী প্রযোজকদের।

কোনও জমি পড়ে ছিল ফাঁকা। কোথাও বা ছিল বন্ধ হওয়া একটা কারখানার শেড। তারাতলায় বন্দরের এমনই কিছু জমি লিজ নিয়ে স্টুডিও চালাতে শুরু করেছিল বেশ কয়েকটি সংস্থা। টালিগঞ্জ-সূত্রের বক্তব্য, মোটামুটি এই সময়েই বা তার কিছু আগে থেকে রীতিমতো আটঘাট বেঁধে এগিয়েছিল শ্রীকান্ত মোহতার ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। এবং অন্য অনেক চ্যানেলের মতো আইনি পথে নয়, লিজ চুক্তির নিয়ম-কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশনের ঠিকানায় বন্দরের জমি দখল করে স্টুডিও পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিল তারা। রবিবার গুন্ডা লাগিয়ে যে জমি বন্দর কর্তৃপক্ষের হাত থেকে তারা পুনর্দখলও করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

কেন এত মরিয়া শ্রীকান্তরা?

ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেউ কেউ বললেন, বন্দরের ওই জমির পুরনো কারখানা চত্বরে শ্যুটিং-ডাবিং-এডিটিংয়ের রীতিমতো আড়ত খুলে বসেছে ভেঙ্কটেশ। আইনি বাধা যা-ই থাক, রাতারাতি এ সব বন্ধ হয়ে গেলে ভেঙ্কটেশকে কয়েক কোটি টাকার খেসারত দিতে হবে। টালিগঞ্জ সূত্রের খবর, স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘ঠিক যেন লাভ স্টোরি’, ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’ ও ‘চোখের তারা তুই’ এবং কালার্স চ্যানেলের ‘গৌরীদান’ ও ‘দুর্গা’র শ্যুটিং চলত বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবরদখল করা এই জমিতেই। ‘চোখের তারা তুই’-এর প্রযোজক অন্য একটি সংস্থা। কিন্তু ওই ধারাবাহিকটির জন্য ফ্লোর ভাড়া দিয়েও ভেঙ্কটেশের পোয়া বারো হচ্ছিল। এ ছাড়া, এডিটিং-ডাবিংয়ের স্যুইট তো সেখানে ছিলই। বিভিন্ন সিরিয়ালের এপিসোড সম্পাদনা ও মাস্টারিং করে এখান থেকেই পাঠানো হতো বিভিন্ন চ্যানেলে।

অভিনেতা-পরিচালকেরা অনেকেই বলছেন, কলকাতা শহরে খাতায়-কলমে স্টুডিও-ফ্লোরের সংখ্যা মেরেকেটে ২০-২২। সাবেক টেকনিশিয়ান্স, ইন্দ্রপুরী, ভারতলক্ষ্মী ছাড়া হালে শহর-শহরতলির উন্নত স্টুডিও বা মুভি টাউনগুলিকে ধরলেও প্রধান তিনটি টিভি চ্যানেলের খান ৩০ সিরিয়ালের ফ্লোরের চাহিদা মিলবে না। এই পরিস্থিতিতে শ্যুটিং করার জন্য বন্দরের খালি জমি পাওয়াটা সিরিয়াল নির্মাতাদের কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার সামিল।

বছর পনেরো আগে পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশনের ঠিক উল্টো দিকের জমিতে অফিস খুলেছিল সাবেক ই-টিভি বাংলা চ্যানেল। সেই জমি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক ছিল না। যে পথ ধরেই পরবর্তী পর্যায়ে আরও অনেক প্রযোজক গোষ্ঠী তারাতলামুখী হয়। পরে তারা কেউ কেউ ব্যবসা গোটালেও রয়ে যায় ভেঙ্কটেশ। টালিগঞ্জ সূত্রের বক্তব্য, ইন্ডাস্ট্রির পরিকাঠামোর অভাবের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে একচেটিয়া মুনাফা করে তারা।

সূত্রটির বক্তব্য, পুরনো কারখানার জমি হওয়ায় পি-৫১ চত্বরে আনকোরা স্টুডিও তৈরির খরচ অনেকটা বেঁচে গিয়েছিল। অথচ ওই স্টুডিওয় আলো রাখার ‘ক্যাটওয়াক’-এর উচ্চতা থেকে শুরু করে সতর্কতার বেশ কিছু নিয়ম মানা হয়নি। অগ্নিসুরক্ষার দিকটাও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে শ্যুটিং। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য প্রযোজক শ্রীকান্তের সংস্থার বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসন কোনও কালেই মাথা ঘামায়নি বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শ্রীকান্তের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে সাড়া মেলেনি। এ দিন ওই চত্বরে ডাবিংয়ের কাজে গিয়ে ঝামেলার মধ্যে পড়েন ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’র অভিনেতা ভরত কল। পরে তিনি বলেন, ‘‘ভেঙ্কটেশের কয়েক জন কর্মীই সাংবাদিক-চিত্রসাংবাদিকদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।’’

land grabbing story venkatesh films kolkata port trust illegal studio illegal studio shooting kolkata port trust land kolkata port trust vs venkatesh films
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy