Advertisement
E-Paper

বন্দরের জমিতে বহাল ভেঙ্কটেশ রাজ

গেটের বাইরে লালবাজারের হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। সঙ্গে তারাতলা থানার পুলিশ। উঁকিঝুঁকিতে টের পাওয়া গেল, কালো সাফারি-স্যুটের বাউন্সাররাও রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩
পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশন। রবিবারের তুলকালামের পর স্টুডিওতে সোমবারও চলল শ্যুটিং। ছবি: সুমন বল্লভ।

পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশন। রবিবারের তুলকালামের পর স্টুডিওতে সোমবারও চলল শ্যুটিং। ছবি: সুমন বল্লভ।

গেটের বাইরে লালবাজারের হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। সঙ্গে তারাতলা থানার পুলিশ। উঁকিঝুঁকিতে টের পাওয়া গেল, কালো সাফারি-স্যুটের বাউন্সাররাও রয়েছেন। ভিতরে চলছে তিন-তিনটি মেগা সিরিয়ালের শ্যুটিং।

স্থান, তারাতলার পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশন। সময়, সোমবার বেলা পৌনে দশটা।

বন্দরের ওই জমিকে কেন্দ্র করে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই যে ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছে, এ দিন তা টের পাওয়ার জো নেই। আর পাঁচটা দিনের মতোই টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আনাগোনা। নামী অভিনেত্রী বেরিয়ে এলেন নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করতে করতে। যেন কিছুই হয়নি! একটু পরে বেরোলেন এক মাঝবয়সী অভিনেতা। পোশাক দেখে মনে হল কোনও পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করছেন! জবরদখল করা জমি বন্দরের কাছ থেকে ফের কেড়ে নিয়ে বহাল তবিয়তেই চলছে ভেঙ্কটেশের কাজকারবার! যে পুলিশ আগের দিন বন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনও রকম সাহায্য করেনি, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতেও এগোয়নি, এ দিন তাদেরই প্রহরায় স্টুডিওর কাজকর্ম হয়েছে।

বন্দর-কর্তারা অবশ্য এ সবে দমে না গিয়ে ফের নিজেদের জমির দখল নিতে কোমর বাঁধছেন। বন্দরের এস্টেট ম্যানেজার শুভ্রকমল ধর বলেন, ‘‘যে কোনও মূল্যে জমি ফেরত নেবই।’’

বন্দর সূত্রের খবর, এ বার জমি দখল নিতে দ্বিমুখী নীতি নেওয়া হচ্ছে। এক দিকে রবিবারের ঘটনার বিস্তারিত তথ্য এবং ভিডিও ফুটেজ তাঁরা তুলে দেবেন কলকাতা হাইকোর্টের কাছে। জমি হেফাজতে নিতে পুলিশি সহায়তা চেয়ে হাইকোর্টে যে মামলা চলছে, তার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে আদালতে আর্জি জানানো হবে। অন্য দিকে তারাতলার পি-৫১ প্লটের ওই জমি যাতে বন্দর ফিরে পায়, তার জন্য জাহাজ মন্ত্রকের পক্ষ থেকেও রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়ানো হবে। বন্দরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থার জমি ফেরত পেতে রাজ্য সরকার যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য দিল্লি থেকে নবান্নকে অনুরোধ জানানো হবে।’’

বন্দর কর্তারা এ দিন দিনভর তাঁদের আইনি উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালান। সেখানেই ঠিক হয়, হাইকোর্টে বন্দর যে ‘রিট অব ম্যান্ডামাস’ দাখিল করেছে তার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে ফের আবেদন করা হবে। বন্দরের এক কর্তার যুক্তি, জমির দখল নিতে পুলিশের সাহায্য চেয়ে ইতিমধ্যে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রবিবারের ঘটনার পর আবেদনের গুরুত্ব আরও বাড়ল। বন্দরের এস্টেট ম্যানেজার এ দিন বলেন, ‘‘এত দিন মামলাটি ছিল দেওয়ানি অভিযোগের উপর দাঁড়িয়ে। কিন্তু যে ভাবে দুষ্কৃতীরা বন্দরের জমি পুনর্দখল করল, তা ফৌজদারি অপরাধ। আদালতে সে কথা জানিয়ে বিচার চাওয়া হবে।’’ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।

বন্দর কর্তারা জানান, মামলার ক্ষেত্রে রবিবারের ঘটনা তাদের পক্ষে যাবে বলেই আইনি উপদেষ্টারা তাঁদের জানিয়েছেন। উপদেষ্টাদের ব্যাখ্যা, বন্দরের এস্টেট অফিসার দখল-উচ্ছেদের যে আদেশ দিয়েছেন, তার উপর আদালত স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলে বন্দরের ওই জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করায় আইনি কোনও বাধা নেই। তার পরেও যে ঘটনা ঘটল রবিবার, তাতে হাইকোর্টে পুলিশি সাহায্যের আবেদন আরও জোরদার হল। তারাতলা থানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্মী বলে দাবি করে ১৫০-২০০ জন পাঁচিল ঘেরা ওই জমিতে জোর-জবরদস্তি ঢুকে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের তাড়িয়ে দেয়। তারা সিল করা সমস্ত তালা খুলে পুনরায় জমির দখল নেয়। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি জাহাজ মন্ত্রককেও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন বন্দর কর্তারা। মন্ত্রক যাতে এই নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, রিপোর্টে সেই আর্জিও জানানো হয়েছে। বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ এ দিন বলেন, ‘‘মামলা তো লড়বই। পাশাপাশি, মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রকের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

মন্ত্রক সূত্রের খবর, রবিবারই ঘটনার কথা জেনেছেন জাহাজমন্ত্রী নীতিন গ়ডকড়ী। রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ভূমিকায় বিরক্ত তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল থেকে দাবি করা হয়েছে, এর আগে কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দু’বার বৈঠক করেছেন জাহাজমন্ত্রী। উড়ালপুল তৈরি, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যা যা সহযোগিতা চেয়েছেন সব ক্ষেত্রেই তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের জন্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প জাহাজ মন্ত্রকের নানা স্তরে বিবেচনাধীন রয়েছে। এর পরেও বন্দরের একটি জমি দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে যে ভাবে রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করেছে, তাতে ক্ষুব্ধ গডকড়ী। তাঁর ওই ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, জমির দখল নিতে গিয়ে বন্দর ঠিক কাজই করেছে। ওই জমি ফের আইন মেনে নিজেদের দখলে নেবে বন্দর।

নবান্ন অবশ্য রবিবারের ঘটনা নিয়ে এ দিনও মুখ খোলেনি! মুখ্যমন্ত্রী তিন দিনের সফরে দার্জিলিং গিয়েছেন। যাত্রাপথে কিংবা পাহাড়ে পৌঁছে রবিবারের ঘটনা নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি তিনি। প্রশাসনের দুই শীর্ষকর্তা রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবও সরকারি ভাবে কিছু বলেননি। মুখ খোলেননি ভেঙ্কটেশের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতাও। বিরোধীদের অভিযোগ, শ্রীকান্তর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার কথা জেনেই কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাচ্ছেন না। তবে তারাতলা এলাকার স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন দাবি করেন, ‘‘কে শ্রীকান্ত মোহতা, কার জমি, কে ব্যবসায়িক স্বার্থে কী করছে— এর কিছুই জানি না। আপনার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক, তার মানেই কি আপনার সমস্ত দায় আমার উপরে বর্তাবে? যা ঘটেছে, সেটা উচিত হয়নি।’’ আর প্রশাসনের শীর্ষ একটি সূত্র ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, বিষয়টি বিচারাধীন বলেই চুপ নবান্ন। তবে সাংবাদিক নিগ্রহের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী ভাল ভাবে নেননি। দোষীদের গ্রেফতার করতে বলেছেন তিনি।

abpnewsletters p51 hyde road extension hyde road extension venkatesh films venkatesh raj port trust land kolkata port trust land nitin gadkari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy