Advertisement
০৫ মে ২০২৪
শিক্ষায় উৎকর্ষের অভাবে উদ্বেগ

দ্বৈরথের পরে এক মঞ্চে পার্থ-সুরঞ্জন

দু’জনেই শিক্ষায় উৎকর্ষের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। দু’জনেই বললেন ভাল পড়ুয়া এবং শিক্ষার মাধ্যমে ভাল নাগরিক গড়ার কথা। মঙ্গলবার এ ভাবেই মিলে গেল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সুর। এবং সাম্প্রতিক দ্বৈরথের পরে দু’জনের সুর মিলল একই মঞ্চে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুরঞ্জন দাস। — নিজস্ব চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুরঞ্জন দাস। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫১
Share: Save:

দু’জনেই শিক্ষায় উৎকর্ষের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। দু’জনেই বললেন ভাল পড়ুয়া এবং শিক্ষার মাধ্যমে ভাল নাগরিক গড়ার কথা। মঙ্গলবার এ ভাবেই মিলে গেল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সুর। এবং সাম্প্রতিক দ্বৈরথের পরে দু’জনের সুর মিলল একই মঞ্চে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পুনর্নিয়োগ রদের সরকারি সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নেমেছিল যাদবপুর। এবং সেখানকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে মূলত উপাচার্য সুরঞ্জনবাবুর উপরেই বর্তেছিল সরকার তথা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জবাবদিহির দায়। শিক্ষার উৎকর্ষ নিয়ে এ দিনের এক সভা এক মঞ্চে মিলিয়ে দিল দু’জনকে।

শুধু মঞ্চ-মিলন নয়। শিক্ষায় উৎকর্ষের অভাব নিয়ে উদ্বেগ এবং শিক্ষামান উন্নয়নে সমবেত উদ্যোগের প্রস্তাবেও সুর মিলে গেল শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের। এ দিনের অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় উৎকর্ষের ঘাটতি নিয়ে প্রথমে প্রশ্ন তোলেন সুরঞ্জনবাবুই। আর পার্থবাবুর জিজ্ঞাসা, রাজ্যে প্রচুর বিদ্বজ্জন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় উৎকর্ষ নেই কেন? আসলে উপযুক্ত পড়ুয়ারই অভাব আছে বলে মনে করেন তিনি। উপযুক্ত শিক্ষার্থীর ব্যাপক ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিনের আলোচনাসভার বিষয়ই ছিল উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং উৎকর্ষ। বিষয়ের থেকে সভাস্থল হিসেবে যাদবপুরকে বেছে নেওয়াটা কিছু কম তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। সেই যাদবপুরেই উৎকর্ষের আলোচনাসভা, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রথম থেকেই সরব। সেই যাদবপুরই শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের মঞ্চ-মিলন ঘটাল, যারা পুনর্নিয়োগ রদের সাম্প্রতিক সরকারি ফরমানের বিরুদ্ধে শুধু গলা তুলেই ক্ষান্ত হয়নি। তিন সদ্য-অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে রেখে দিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছিল, সরকার ওই তিন জনের বেতন না-দিলে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই সেই টাকা দিয়ে দেবেন।

যাদবপুরের সেই সক্রিয় বিরুদ্ধতায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন শিক্ষামন্ত্রী। উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দেয়, যে-ভাবে তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়মানুগ নয়। পঠনপাঠনের স্বার্থে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ‘গেস্ট টিচার’ হিসেবে ক্লাস-পিছু সম্মান-দক্ষিণা দিয়ে রাখা যেতে পারে।

পিছু হটে যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই তিন শিক্ষকের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ তাঁরা মেনে নেবেন। সুরঞ্জনবাবু যে ব্যাপারটা সামলে নিয়েছেন এবং পার্থবাবুর ক্ষোভও যে কিছুটা প্রশমিত, এ দিন এক মঞ্চে দু’জনের উপস্থিতিই তার প্রমাণ।

প্রমাণ মিলল দু’জনের সুরের মিলেও। রাজ্যে শিক্ষা-উৎকর্ষের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ এবং তা নিরসনের পথ সন্ধানই তাঁদের বক্তব্যের মূল কথা। সুরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, সংখ্যা ও মানের মধ্যে সমতা বজায় রাখা উচিত। পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে, ভাল ভাবে পড়িয়ে এবং গবেষণা করলেই উৎকর্ষ সাধন করা হয় না। ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল নাগরিক তৈরি করতে হবে। যারা সমস্ত কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিচার করতে পারবে। সেটাই হবে উৎকর্ষ,’’ বলেন উপাচার্য। একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্য সরকার একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে বেশ কয়েকটি র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে রীতিমতো ভাল জায়গায় রয়েছে, তার উল্লেখ করতেও ভোলেননি সুরঞ্জনবাবু।

ভাল ছাত্র এবং ভাল নাগরিক তৈরির কথা তোলেন শিক্ষামন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎকৃষ্টতা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। শুধু পড়ালেই উৎকর্ষ আসে না। উপযুক্ত পড়ুয়াও নেই। তাদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। ভাল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে তাদের।’’ সুরঞ্জনবাবু নিজের বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ-সহ বেশ কয়েক জন মনীষীর উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমরা কোট (অন্যদের বক্তব্য) ব্যবহার করলেও নিজেদের মধ্যে সেটার প্রভাব বিস্তার করাতে পারছি না। কোনও উদাহরণই তৈরি করতে পারছি না।’’ তার পরে মন্ত্রীর প্রশ্ন, রাজ্যে বিদ্বজ্জনের ভাণ্ডার থাকলেও উৎকর্ষ নেই কেন? সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাঙ্গনকে কেউ যেন পেশার জায়গা না-ভাবেন। সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’’

শুধু কথা নয়। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, এ বার থেকে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখবে সরকার। ‘‘বিবেক কুমার (উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব)-এর নেতৃত্বে একটি দল গঠন করেছি। তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম, শিক্ষকের সংখ্যা-সহ সব কিছু খতিয়ে দেখবে,’’ বলেন মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Suranjan Das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE