Advertisement
E-Paper

কেশবচন্দ্র নিয়ে বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য

বুধবার দিনটি বিশ্বভারতী ছুটি থাকে। ওই দিনই উপাসনা হয় সেখানে। উপাচার্য এর আগেও বুধবারের ছুটি বদলিয়ে রবিবার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

বাসুদেব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৩১
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও কেশবচন্দ্র সেন

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও কেশবচন্দ্র সেন

ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়ো ফুটেজে তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। রবিবার বিকেলে বিশ্বভারতীর নাট্যঘরে উপাচার্যের বক্তব্যের ওই ফুটেজে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, বুধবার দিনটি ‘পবিত্র নয়’ এবং কেশবচন্দ্র সেন ‘অসামাজিক কাজ’-এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন।

বুধবার দিনটি বিশ্বভারতী ছুটি থাকে। ওই দিনই উপাসনা হয় সেখানে। উপাচার্য এর আগেও বুধবারের ছুটি বদলিয়ে রবিবার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এ দিনও তাঁর বক্তব্য সেটাই ছিল বলে পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন।

‘‘বুধবারের ব্যাপারে একটা আলোচনা চলছে। এটি হচ্ছে ভারতবর্ষের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বুধবার ছুটি। হঠাৎ করে তো বুধবার ছুটি হয়নি। এর পিছনে কারণ কী?’’ এই প্রশ্ন তুলে সেই প্রসঙ্গে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘‘১৮৬১ সালে ব্রাহ্মসমাজ তৈরি হচ্ছে। সেখানে রামমোহন রায়, আমাদের মহর্ষি, কেশবচন্দ্র সেন সবাই রয়েছেন (ইতিহাস যদিও বলছে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা ১৮২৮ সালে। ১৮৩৩ সালে রামমোহনের মৃত্যুর পরে ব্রাহ্মসমাজের হাল ধরেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ব্রাহ্মসমাজ তৈরির দিনটা কিন্তু শনিবার। তখন তাঁরা ঠিক করলেন, শনিবার দিনটা আমাদের প্রার্থনা হবে। কিন্তু কেশবচন্দ্র সেন তো কিছু অসামাজিক কাজকর্ম করতেন। অসামাজিক মানে, তন্ত্রসাধনার দিকে ঝোঁক ছিল। উনি বললেন, ‘শনিবার আমি ক্লাবে যাই। কী করে প্রার্থনায় আসব?’ তখন আলোচনায় ঠিক হয় বুধবার করা হোক।’’ উপাচার্য এর পরে যোগ করেন, ‘‘তার মানে বুধবারটা সেই অর্থে পবিত্র দিন নয়।

বুধবারটা করা হয়েছিল, যে-হেতু এটা সবাই মিলে ঠিক করেছিলেন বলে। কিন্তু আজ এই বুধবার কতটা প্রাসঙ্গিক, তা ভাবা দরকার।’’

নাট্যঘরে এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ এই আলোচনা শুরু হয়। যে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন পরে বলেন, ‘‘আমরা উপাচার্যের মুখে এমন মন্তব্য শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি। ভাবতেই পারিনি, উনি এই ধরনের কথা বলবেন। আমরা এর নিন্দা করছি।’’ কী ভাবে এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করা হবে, তা নিয়ে তাঁরা আজ, সোমবার নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবেন বলেও ওই পড়ুয়ারা জানান।

প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘উনি (উপাচার্য) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের চেয়ে বেশি জানেন। তাই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন। এর বেশি কিছু বলব না।’’

বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, একটা সময়ে বিশ্বভারতীতে উপাসনা হত শনিবারেই। তবে, ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ মন্দির (উপাসনাগৃহ) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বুধবার উপাসনার রীতি চলে আসছে। তখন থেকেই এই দিনটি ছুটি থাকে। সেই রীতিতে আজও ছেদ পড়েনি। বিদ্যুৎবাবুকে রাতে মেসেজ করা হলে উনি বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘যে-অর্থে উপাচার্যের মন্তব্য ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। বুধবারই একমাত্র ‘পবিত্র দিন’ নয়, এ কথার মাধ্যমে উপাচার্য আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, সপ্তাহের যে কোনও দিনই পবিত্র দিন হতে পারে। আর ‘অসামাজিক কাজ’ মানে, তখনকার দিন ক্লাবে যাওয়াকেও বোঝানো হত। সেটাকেই উনি বোঝাতে চেয়েছেন। সেই সূত্রেই তন্ত্রসাধনার কথাও উঠে এসেছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, বুধবার উপাসনার দিন পরিবর্তনের কোনও অভিপ্রায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নেই। শনি ও রবিবার ছুটি করার কথা ভাবা হচ্ছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই।

Bidyut Chakrabarty Keshub Chandra Sen Visva-Bharati University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy