Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো নয় নারদ-ভিডিও, মত বিচারপতির

ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে টাকা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশন ভুয়ো নয় বলেই মনে করেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে টাকা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশন ভুয়ো নয় বলেই মনে করেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদের হুল অভিযানের ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়, শাসক দলের অনেক নেতা-সাংসদ দেদার টাকা নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার নারদ-কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের আইনজীবী দাবি করেন, আদালতে পেশ করা হলফনামায় ম্যাথু জানিয়েছেন, ওই সংস্থা ভুয়ো। প্রধান বিচারপতি মাত্রে বলেন, ‘‘সংস্থা ভুয়ো। কিন্তু স্টিং অপারেশন ভুয়ো নয়।’’ মদনবাবুর আইনজীবী সুরেন্দ্রকুমার কপূরের সওয়াল, ‘‘ভিডিও ফুটেজের কয়েকটি ফাইল খোলা যায়নি।’’ বিচারপতি মাত্রে তখন মন্তব্য করেন, ‘‘খোলা যায়নি মানে এই নয় যে, ঘটনা ঘটেনি।’’

মদনবাবুর আইনজীবীর দাবি, টাকা নেওয়া অপরাধ নয়। তার পরেই বিচারপতি মাত্রের প্রশ্ন, ‘‘এ ক্ষেত্রে টাকা নেওয়াটা অপরাধ হয়েছে কি না, তা কি জানার দরকার নেই? ঘটনা পরম্পরা দেখে আমরা কি বলতে পারি না যে, সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?’’

সুরেন্দ্রকুমার এ দিন আদালতে জানান, পরিস্থিতি তাঁর মক্কেলকে এখন সব কিছু থেকে সরিয়ে রেখেছে। তিনি মন্ত্রী নন। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নন। কোনও কমিশনের মাথাও নন। এক জন সাধারণ মানুষ। সুরেন্দ্রের অভিযোগ, আদালত ম্যাথুকে যে-সব নির্দেশ দিয়েছে, তা তিনি পালন করেননি। স্টিং অপারেশনের টাকা কে জোগাল, সেটাও জানাননি তিনি। কোথায়, কখন স্টিং অপারেশন চালানো হয়েছিল, তা-ও জানাননি।

স্টিং অপারেশনে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, এ দিন তাঁদের আইনজীবীদের সওয়াল শেষ হয়। জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের পর্যবেক্ষণ ছিল, নারদ স্টিং অপারেশন সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে যে-সব নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আদালত ওই ঘটনায় চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না।

ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী জানতে চান, ২০১৪ সালে স্টিং অপারেশন হলে সেই ফুটেজ ২০১৬ সালে প্রকাশ হল কেন। বিকাশবাবু জানান, সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেও নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। সেই তদন্ত যদি ম্যাথুর বিরুদ্ধে যায়, তাতেই বা আপত্তি কোথায়। বিকাশবাবুর প্রশ্ন, টাকা নেওয়া যদি অপরাধ না-ই হয়, তা হলে কলকাতার মেয়রের স্ত্রীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তদল গঠন করে তদন্ত শুরু করল কী করে? এফআইআরে মেয়রের স্ত্রী দাবি করেছেন, ভিডিও ফুটেজে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাঁর ওই বক্তব্যই প্রমাণ করছে, টাকা নিয়েছেন ওঁরা।

স্টিং অপারেশনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেও। তাঁর আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, যদি ধরেও নেওয়া হয় যে তাঁর মক্কেল টাকা নিয়েছেন, তা হলে তিনি চাঁদা নিয়েছেন, ঘুষ নয়। বিধায়ক হিসেবে তিনি দলের হয়ে ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিতে পারেন। বিকাশবাবু পাল্টা বলেন, আইনে বলা আছে, কেউ সরকারি পদে থেকে টাকা নিলে রসিদ দিতে হবে। হলফনামায় সুব্রতবাবু জানাননি যে, তিনি রসিদ দিয়েছেন!

আজ, শুক্রবারেও শুনানি চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narada Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE