সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সোমবার দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মালদহের ইংরেজবাজার। মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরেও পুলিশ এ দিন নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাজ্য সংগঠনের দাবি, ১২ জন মহিলা সহ তাঁদের মোট ২০ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ছোড়া ইটের আঘাতে পাঁচ পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ডিএসপি সিদ্ধার্থ দর্জিও। তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ ২৫ জনকে আটক করেছে।
শুধু মহিলাদের উপরে লাঠি চালানোই নয়, ওই এলাকায় পথ চলতি সাধারণ মানুষকেও পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের অভিযোগ, জেলা পুলিশ এ দিন নিজেদের খেয়াল খুশি মতো কাজ করছে। তবে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুমতি না নিয়েই ওই আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের নিষেধ করা হয়েছিল। তা তাঁরা শোননি। আন্দোলনকারীরা উল্টে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছেন। পাঁচ পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘লাঠি চালানো হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দু’টি প্যানেল রয়েছে। দু’টি প্যানেলে ৪৮০০ কর্মীর নাম রয়েছে। দুই প্যানেলের কর্মীরা ছয় মাস করে কাজ করেন। এখন মালদহ জেলায় দ্বিতীয় প্যানেলের কর্মীরা কাজ করছেন। যার ফলে প্রথম প্যানেলের কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, তিন মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে।
সারা বছর ধরে কাজের দাবি এবং বকেয়া বেতন মেটানোর দাবিতে মাস খানেক ধরে জেলার প্রতিটি থানায় স্মারকলিপি দিয়ে আসছে রাজ্য সিভিক ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীরা। এদিন তাঁরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য এদিন সকাল ১০টা থেকে ইংরেজবাজার শহরের রিজেন্ট পার্কের মাঠে জমায়েত হয়েছিলেন তাঁরা। এই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ারের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পড়িয়া সহ প্রায় হাজারখানেক কর্মী।
সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন এই মাঠে জমায়েত থেকে মিছিল করে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে ডিএসপি(সদর) সিদ্বার্থ দর্জির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। কর্মহীন প্রথম প্যানেলের সিভিক ভলান্টিয়ারেরা মিছিল শুরু করতেই মাঠেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। মিছিলে বাধা পেয়ে একাংশ কর্মী উত্তেজিত হয় মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করে দেন।
সিভিক ভলান্টিয়ার সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি।
সোমবার মালদহে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয় অবরোধ। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে অবরোধ। ফলে এই রুটের সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্যাপক যানযটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে। সেই সময় অবরোধকারীদের মধ্যে থেকে একাংশ সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশ সুপারের অফিসের দিকে ছুটতে থাকে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে শুরু হয়ে ইট বৃষ্টি। এরপরে পুলিশ কাজের দাবিতে আসা সিভিক ভলান্টিয়ারের উপর এলোপাথাড়ি লাটি চালাতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলাকর্মীরাও। তাঁদের উপরেও পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। নিকাশি নালায় মুখ থুবড়ে পড়েন আন্দোলনকারীদের কয়েকজন। সেখানে গিয়েও পুলিশ নির্মমভাবে লাঠি চালায়।
এরপরেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠে ইংরেজবাজার শহরের রিজেন্ট পার্ক এলাকা। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারী সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে দেখে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদি। তাঁর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পিছু ধাওয়া নেয় বিক্ষোভকারীদের। রথবাড়ি এলাকায় ফের লাটি চালানো হয়। সেখানে একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ারের রক্ত ঝরে। এরই মাঝে একদল বিক্ষোভকারী পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরে হাজির হলে সেখানেও লাঠি চালায় পুলিশ।
এমনকি সাধারণ মানুষকেও লাঠি পেটা করা হয় বলে অভিযোগ। সিভিক ভলান্টিয়ারের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পড়িয়া বলেন, ‘‘আমরা স্মারকলিপি দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলাম। তবে আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতাম। তবে পুলিশ আমাদের ছেলে এবং মেয়েদের উপর নির্মম ভাবে লাঠি চালাল। বহু ছেলে মেয়ে ভর্তি রয়েছে।’’ তিনি জানান, আগামী দিনে তাঁরা আন্দোলন করে মালদহ অচল করে দেবেন। মহিলা গণতান্ত্রিক সংগঠনের মালদহ জেলার সম্পাদিকা রত্না ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ যে ভাবে আন্দোলনরত মহিলাকর্মীদের উপর লাঠি চালাল, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা পুলিশকে ধিক্কার জানাই।’’
পুলিশের ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নুরও। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে পুরো ঘটনাটি দেখলাম। দেখলাম, ছেলেদের মারধর করার পাশাপাশি মেয়েদেরও লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে পুলিশ। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ তবে রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঠিক আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করা হবে। ঘটনায় আটকদের চিহ্নিত করা হবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’