Advertisement
E-Paper

সিবিআই তদন্তের দাবি, বিধায়কের নামে নালিশ বিশ্বভারতীর

হামলার প্রতিবাদে আজ, বুধবার বিশ্বভারতীর আধিকারিকেরা অনশনে বসবেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বাসুদেব ঘোষ ও সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০৩:৫৬
হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে মেলার মাঠের মূল প্রবেশদ্বারের তালা। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে মেলার মাঠের মূল প্রবেশদ্বারের তালা। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

সোমবার পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে, দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি, বোলপুর পুরসভার দুই বিদায়ী কাউন্সিলর শেখ ওমর এবং সুকান্ত হাজরা-সহ ৯ জনের নামে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি হামলার প্রতিবাদে আজ, বুধবার বিশ্বভারতীর আধিকারিকেরা অনশনে বসবেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্বভারতীর এফআইআরে নাম থাকা কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু হয়েছে। তাতে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সমস্ত ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেই পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলা হচ্ছিল। যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, পৌষমেলার মাঠ ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরতে হবে, এমন কোনও আদেশ জাতীয় পরিবেশ আদালত দেয়নি। বরং মেলা নিয়ে পরিবেশ আদালতে হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী যে ‘অঙ্গীকার’ করেছিল, তাকে ‘ভুল ভাবে’ প্রকাশ করেই মাঠ ঘেরার চেষ্টা হচ্ছিল। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভুল করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের নিজস্ব জায়গা ঘিরেও থাকেন, আইন হাতে তুলে নিয়ে তা ভেঙে ফেলার অধিকারও কারও নেই।’’

তবে স্থানীয় সূত্রের মতে, পৌষমেলার মাঠ ঘেরার ব্যাপারে প্রবীণ আশ্রমিক, ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশের আপত্তি ছিল। উপাচার্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেই কাজ করানোয় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বহুগুণ বেড়ে যায়।

সোমবার প্রতিবাদ মিছিলে প্রথম সারিতে দেখা গিয়েছিল নরেশবাবুকে। ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা গগন সরকার-সহ দলের আরও নেতা-কর্মী। সেই মিছিল থেকেই তাণ্ডব চলে বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। তাঁদের আরও অভিযোগ, জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবকে ভাঙচুরের সম্ভাবনার কথা সময় থাকতে জানানো সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

যদিও বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘তৃণমূল ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’ তা হলে দলের বিধায়ক, কাউন্সিলরেরা মিছিলে কেন গেলেন? অনুব্রতের জবাব, ‘‘প্রাক্তনী হিসেবে কেউ যেতেই পারেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতী নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে নষ্ট করার অধিকারও কারও নেই।’’

নরেশবাবুও বলেন, ‘‘দলের তরফে নয়, প্রাক্তনী হয়েই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম। আমার প্রাণ থাকতে, মেলার মাঠ ঘিরতে দেব না।’’ গগনবাবুর বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনায় যেখানেই আঘাত এসেছে আমি প্রতিবাদ জানিয়েছি। অন্যায় ভাবে মেলার মাঠ ঘিরে ফেলা হচ্ছিল বলেই প্রতিবাদ করেছি।’’

এ দিকে, মাঠ ঘেরায় বিশ্বভারতীর যুক্তিকে সমর্থন করায় মোটরবাইক বাহিনী তাঁর বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ করেছেন বিশ্বভারতীর মাস কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক বিপ্লব লোহচৌধুরি। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ ৬-৭টি মোটরবাইকে চেপে জনা দশেক লোক এসে ইট ছুড়ে জানলার কাচ, স্কুটার ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ বিপ্লববাবুর।

বিশ্বভারতীর ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। আবেদনকারী আদালতের নজরদারিতে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

এ দিন পৌষমেলার মাঠ ছিল শুনশান। প্রাতর্ভ্রমণ বা খেলাধুলোর যে ছবি অন্য দিন দেখা যায়, তা ছিল না। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল ইট-সহ নির্মাণ সামগ্রী। পাঁচিল তোলার বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে এ দিন কিছু নির্মাণ সামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে দেখা যায়।

Visva Bharati University Pous Mela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy