বিজেপি-র এক যুব মোর্চা নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ফতোয়া জারি করেছেন।
প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, মমতার মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে তিনি ১১ লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন।
এই মন্তব্যের পরই সরগরম জাতীয় রাজনীতি। শুধু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরাই নন, নিন্দা করেছেন বিদ্বজ্জনেরাও।
কী বললেন তাঁরা?
এই সংক্রান্ত আরও খবর
• মমতার মাথা কেটে আনলে ১১ লাখ টাকা পুরস্কার, ঘোষণা বিজেপি নেতার
• মাথা কাটার হুমকি ঘিরে উত্তাল রাজ্যসভা, তুমুল বিতণ্ডায় মায়া-জয়া-রূপা
• এরা আবার ৭০ দশকের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে: পার্থ
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত: সেই পুরনো বাংলা প্রবাদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এ যেন সেই গল্পের কালিদাস। যে নিজের ডাল নিজেই কাটছে। এ সব তাদেরই কাজ। নরেন্দ্র মোদী যেন সাবধান থাকেন তাঁর এই গুণগ্রাহীদের থেকে। তা না হলে তাঁর সর্বনাশ হবে। এই ছেলেটি আমার মনে হয় বার বার ব্যর্থ প্রেমিক। এ সব করে ও নিজের পুরষকার জাহির করতে চাইছে।
নচিকেতা: সলমন রুশদিকে এক বার গলা কাটার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরানের এক শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় নেতা। তা নিয়ে গোটা দেশ সরব হয়েছিল। ভেবে অবাক হচ্ছি, আজ রাজ্যসভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এই ঘটনা কী করে সমর্থন করলেন! একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে খুন করার জন্য সুপারি দিচ্ছে একটা লোক! এত মাথামোটা আর অর্বাচীন একটা লোক রাজনীতিতে কী করে এল! রাজনীতির মূল কথা তো গণনীতি এবং জনসেবা। আর এই লোকটা সেখানে খুন করার জন্য সুপারি দিচ্ছে! এটা গণতন্ত্র মানছে কী করে? আমার যা ইচ্ছে তা বলা যায় নাকি! আর লোকটাকে এখনও কেন গ্রেফতার করা হল না? যে হেতু কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা একটি দলের তিনি নেতা! বুঝতে পারছি না! কী করে বাঁচব এই দেশটাতে? আমার আরও প্রশ্ন আছে। ওই ১১ লাখ টাকা উনি কোথা থেকে পেলেন? ওটা কি ক্যাসলেস মানি? ওই টাকা তিনি কী ভাবে দেবেন? ক্যাশে নাকি পেটিএম-এর মাধ্যমে নাকি চেকে না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে? কেউ কি ইডি-কে খবর দিয়েছে?
শ্রীজাত: ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। তাতে আমরা রাজনৈতিক মতান্তরের প্রভূত চাপানউতোর দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু, এই ধরনের তালিবানি ফতোয়া জারির রেওয়াজ কিন্তু ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। ফলে, আমি সর্বত ভাবে এই মন্তব্যের নিন্দা করছি। এবং আস্থা রাখি, যিনি এই মন্তব্য করেছেন বিজেপি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি, কোনও মানুষ সম্পর্কে এই ধরনের উক্তি আমরা ভবিষ্যতে আর আশা করব না।
তিলোত্তমা মজুমদার: আমার দু’রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রথমত, এটা অসাংবিধানিক এবং নিন্দনীয়। যে দলের নেতা এই ধরনের মন্তব্য করেছেন, সেই দলেরই এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এই সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কখনও নিন্দিত, কখনও প্রশংসিত। কিন্তু সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। তিনি ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন। যেটা বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই পারেনি। এই কারণে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর একটা আলাদা জায়গা আছে। এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার জন্য বিজেপি নিজস্ব সংস্কৃতির আমদানি করছে। অস্ত্র হাতে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী পালন করছে। এই মন্তব্য সর্বস্তরে দলমত নির্বিশেষে নিন্দিত হওয়া উচিত।
দেবেশ চট্টোপাধ্যায়: ভারতবর্ষে মৌলবাদ যে ভয়ঙ্কর ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে তার ফল এগুলো। পরিস্থিতি ক্রমশ লাগামছাড়া হয়ে উঠছে। এটা আরএসএস-এর ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্য বহন করছে বিজেপি। ঐতিহাসিক ভাবে এটা সত্যি, আরএসএস-এর যোগ্য দোসর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছে বিজেপি। এটা নতুন কিছু নয়। তবে ওই ব্যক্তির চূড়ান্ত শাস্তি হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ভাবে আমরা নিশ্চয়ই দেউলিয়া হয়ে যাইনি। কট্টর এই মৌলবাদকে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের রোখার সময় এসে গিয়েছে।
লোপামুদ্রা মিত্র: আমরা এমন একটা অসভ্য দেশে আছি, যেখানে কোনও কিছুতেই আর অবাক হই না। এখানে যা খুশি হতে পারে। যে যা খুশি বলতে পারে, যা খুশি করতে পারে। ইংরেজরা এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আমাদের একটা পরাধীন মানসিকতা ছিল। আমার মনে হয়, সেই পরাধীনতা বোধহয় ভাল ছিল, কারণ আমরা স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্যই নই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy