ব্লক ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার পরিকল্পনা নিল উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরবঙ্গের সাত জেলাতেই ওই পূর্বাভাস দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া দফতর মনে করছে, এই পরিকল্পনা চাষিদের ক্ষেত্রে আরও বেশি কার্যকর হবে। এখন জেলাভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ কৃষক মৌসম সেবা কেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলা ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চাষিরা লাভবান হয়েছেন। তবে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে কোথাও বৃষ্টি কম হচ্ছে আবার কোথাও বেশি হচ্ছে। সে কারণেই এই পরিকল্পনা নেওয়া। এতে চাষিরা আরও লাভবান হবেন।” এ সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহার ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গোটা জেলায় এক রকম আবহাওয়া এখন আর থাকছে না। গত দু’বছর ধরে বিষয়টি আমাদের বেশি করে নজরে আসছে। হয়তো জেলারই একটি এলাকায় সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, আবার অন্য এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ব্লক ধরে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক বেশি কার্যকর।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০০৫ সাল থেকে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার ব্যবস্থা রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই পূর্বাভাস জানা যায়। গত জানুয়ারি মাস থেকে ওই পূর্বাভাস সরাসরি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারেও উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার এসএমএসের মাধ্যমে ওই পূর্বাভাস চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। চাষিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের কাজও চলছে। পাশাপাশি সংবাদপত্রের মাধ্যমেও ওই পূর্বাভাস চাষিদের কাছে পৌঁছনো হচ্ছে।
বাংলা ও ইংরেজি হরফে তিনটি মৌসম সেবা কেন্দ্র (পুন্ডিবাড়ি, মাঝিয়ান ও কালিম্পং) থেকে উত্তরের সাত জেলার কৃষকদের ওই পরিষেবা দেওয়া হয়। পুন্ডিবাড়ি থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি (আলিপুরদুয়ার) এবং উত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের ওই পরিষেবা দেওয়া হয়। মাঝিয়ান সেবা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ এবং কালিম্পং থেকে দার্জিলিং জেলার কৃষকদের ওই পরিষেবা দেওয়া হয়। ওই পূর্বাভাসে গত তিন দিনের আবহাওয়ার রিপোর্ট, আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকে। তার মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রার উল্লেখ যেমন থাকবে সে রকমই এই সময়ে কোন ফসলের কী ক্ষতি হতে পারে? সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্রবার যে রিপোর্ট বের করেছেন আধিকারিকেরা, তাতে পাট পচানো, পাটের আঁশে হওয়া কালো দাগ দূর করা বিষয়ে, ধানবীজ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খুয়রা রোগ, ফল পচা রোগ থেকে ফসল বাঁচাতে কী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার গরু, ছাগলকে খুরাই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে কি ভ্যাকসিন দিতে হবে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, জেলাভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চাষিরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। রোগের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারছেন তাঁরা। কিন্তু জেলারই বহু এলাকায় আবহাওয়া এক রকম থাকছে না। সে ক্ষেত্রে চাষিদের অনেকেই ওই পূর্বাভাস হাতে পেয়েও কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। কোচবিহারের অন্যতম ফার্মার্স ক্লাব কর্তাদের এক জন সাতমাইল সতীশ ক্লাবের সম্পাদক অমল রায় বলেন, “আমাদের কাছেও নিয়মিত ওই রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠায়। আমরা চাষিদের মধ্যে তা লিফলেট আকারে বিলি করে দিই। অনেক সময়ই দেখা যায় জেলার সর্বত্র ওই পূর্বাভাস মিলছে না। হেরফের হচ্ছে। ব্লক পর্যায়ে তা করা হলে চাষিদের আরও বেশি উপকার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy