Advertisement
০২ মে ২০২৪

প্রতারণার নালিশ, ধৃত রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি জয়প্রকাশ

টেট পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে গ্রেফতার করল পুলিশ।গত বছর অগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কিছু টেট পরীক্ষার্থী।

গ্রেফতারের পর বিধাননগর উত্তর থানায় জয়প্রকাশ মজুমদার।—নিজস্ব চিত্র।

গ্রেফতারের পর বিধাননগর উত্তর থানায় জয়প্রকাশ মজুমদার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

টেট পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

গত বছর অগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কিছু টেট পরীক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জয়প্রকাশ। সেই বাবদ দু’দফায় অগ্রিম ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জয়প্রকাশ মামলা তো করেনইনি, টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাইতে গেলে উল্টে হুমকি দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের এই অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই সম্প্রতি জয়প্রকাশকে উপর্যুপরি নোটিস পাঠিয়েছিল বিধাননগর (উত্তর) থানার পুলিশ। সেই মোতাবেক শনিবার সকালে বিধাননগর কমিশনারেটে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৯ ঘণ্টা জেরা করার পরে রাত আটটা নাগাদ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়: প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকির অভিযোগে জয়প্রকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের থেকে উনি যে টাকা নিয়েছেন, সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ জয়প্রকাশের অবশ্য দাবি, সব অভিযোগ মিথ্যা। মিথ্যা কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতেই জয়প্রকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমনটা মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্বও। রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-তাপস পাল গ্রেফতার হওয়ায় ঠিক যে ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগটাই এ দিন ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

জয়প্রকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীরা মাস কয়েক আগে দিলীপবাবুর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। সেই অভিযোগকে তখনও বিশেষ আমল দেননি বিজেপি সভাপতি। শুধু জয়প্রকাশকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন, অভিযোগ সত্যি কি না। এ দিন দিলীপবাবু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেই বলেছিলেন, ওঁরও পুলিশ রয়েছে। উনিও গ্রেফতার করতে পারেন। স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই জয়প্রকাশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নইলে পুরনো অভিযোগ নিয়ে হঠাৎ এখন কেন তদন্ত শুরু হল?’’ অবশ্য তিনি এ-ও বলেন, ‘‘ঘটনাটি যখন ঘটেছে বলে অভিযোগ, তখন জয়প্রকাশবাবু বিজেপি-তে ছিলেন না। ছিলেন কংগ্রেসে। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে তখন জয়প্রকাশবাবুকেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।’’

জয়প্রকাশের গ্রেফতারের নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তাঁর কথায়, ‘‘কেন ওঁকে গ্রেফতার করা হলো, তা নিয়ে কোনও গবেষণার প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছিলেন, এ বার বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করব। এ বার বলবেন, তুমি আমার আসামি ছাড়ো, আমি তোমার আসামি ছাড়ব। বিজেপি-তৃণমূলে এ বার নতুন খেলা শুরু হবে।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব সরকারি ভাবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও একান্ত আলোচনায় দলীয় নেতাদের দাবি, এই গ্রেফতারের পিছনে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কোনও ব্যাপার নেই। জয়প্রকাশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত করেছে এবং আরও তদন্তের প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেফতার করেছে। সূত্রের খবর, জয়প্রকাশকে জেরার রেকর্ডিংও করে রেখেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, ঘটনাটি ২০১৪ সালের। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি না পাওয়ায় এক দল পরীক্ষার্থী তখন আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। তাঁদের আন্দোলন মঞ্চে বিরোধী দলের বিভিন্ন নেতা মাঝেমধ্যেই যেতেন। জয়প্রকাশও একাধিক বার গিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার ব্যাপারে তখনই পরীক্ষার্থীদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, মামলা চালানোর খরচ হিসাবে দশ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন জয়প্রকাশ। অন্যতম অভিযোগকারী অরূপরতন রায়ের বক্তব্য, ‘‘জয়প্রকাশকে টাকা দেওয়ার জন্য এর পর তিন হাজার পরীক্ষার্থীর থেকে কুপন কেটে তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়। ২০১৪-র ডিসেম্বরে ওঁকে প্রথমে চার লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে আরও ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন পরীক্ষার্থীরা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পরেও সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের না করায় তাঁকে কয়েক বার তাগাদা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত চাইলে উল্টে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন জয়প্রকাশ।’’ অরূপরতন এ-ও অভিযোগ করেন, ‘‘জয়প্রকাশের কাছে টাকা চাইতে কয়েক জন পরীক্ষার্থী এক দিন সল্টলেকে ওঁর অফিসে গেলে উনি টাকা নেওয়ার কথাই অস্বীকার করেন। সেই সঙ্গে রিভলভার দেখিয়ে শাসানি দিয়ে বলেন, ফের টাকা চাইতে এলে প্রাণে মেরে দেবেন!’’ প্রতারণার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে জয়প্রকাশের বিরুদ্ধে। তবে এ নিয়ে পুলিশ কিছু খোলসা করেনি।

জয়প্রকাশের আইনজীবী অভিষেক মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি নেই। কাল বিধাননগর আদালতে ওঁর জামিনের আবেদন জানাব।’’ বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা, জয়প্রকাশের এখনই জামিন পাওয়ার আশা কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joy Prakash Majumdar BJP Arrest Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE