Advertisement
০৫ মে ২০২৪
West Bengal Budget 2023-24

আয়ের উৎস সীমিত, জোর সামাজিক প্রকল্প এবং অনুদানে, রাজ্যের চিন্তার কারণ ঘাটতিই

সরকারি নথি জানাচ্ছে, এ বার বেশ কিছু দফতরের বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। কয়েকটি দফতরেই বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

Picture of Chandrima Bhattacharya and Mamata Banerjee.

রাজ্য বাজেট পেশের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবার বিধানসভায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৫
Share: Save:

শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। বছর ঘুরলে লোকসভাও। এই অবস্থায় এ বারের বাজেটে (২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য) বিভিন্ন সামাজিক ও অনুদান প্রকল্পের বরাদ্দে যে কাটছাঁটের সম্ভাবনা কার্যত নেই, প্রশাসনের শীর্ষ মহল সূত্রেই তা শোনা যাচ্ছিল বার বার। বুধবার বিধানসভায় পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটে সেই পূর্বাভাসের প্রতিফলন মিলল কার্যত পুরোপুরি।

দেখা গেল, টানাটানির ভাঁড়ারেও বরাদ্দের বড় অংশ গিয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো বিভিন্ন সামাজিক ও অনুদান প্রকল্পে। মোটা টাকা তুলে রাখতে হচ্ছে ঋণ শোধের জন্যও। অথচ অর্থ প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কার্যত মেনে নিয়েছেন যে, আয়ের উৎস সীমিত। বাজেট নথি থেকে স্পষ্ট, রাজকোষ ঘাটতি কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সীমার উপরেই থাকছে (৩.৮৩%)। বাড়ছে ঋণের পরিমাণও।

তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়েই লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই মনে করেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তা চালু করার ঘোষণা রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে তৃণমূলকে। এ দিন সেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের পরিধি বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উপভোক্তার বয়স ৬০ বছর পেরোলেও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে বার্ধক্য ভাতা মিলবে। প্রকল্পের জন্য গত বারের তুলনায় ১২৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। সঙ্গে ‘ভবিষ্যৎ ঋণ কার্ড’, মৎস্যজীবীদের জন্য মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, ইত্যাদি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। সম্ভবত পঞ্চায়েত ভোট মাথায় রেখেই ৩০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ১১,৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক খাতে। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রাস্তার এই বেহাল দশা নিয়েই সব থেকে বেশি কথা শুনেছেন ‘দিদির দূতেরা’। নিয়োগ, আবাস-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দানা বেঁধেছে ক্ষোভও। এই পরিস্থিতিতে তাই উপরের ঘোষণাগুলিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। বাজেট পেশের পরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য যতটা সম্ভব এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছে সরকার। আর্থিক অসুবিধা ও কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও প্রত্যেকের কথা ভেবে এই বাজেট করা হয়েছে।’’

বাজেটের পরে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানান, মোট ব্যয়ের প্রায় ৬০% সামাজিক খাতে বরাদ্দ করছে রাজ্য। লক্ষ্মীর ভান্ডার ছাড়াও কৃষকবন্ধু, জয় বাংলা পেনশন, ঐক্যশ্রী ইত্যাদি প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে। পরিকাঠামো খাতে তা বেড়েছে প্রায় ৮%। চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘রাজ্যকে বঞ্চিত করছে কেন্দ্র। সামাজিক খাতে কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়েছে, আমরা বাড়িয়েছি।’’ তবে অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, এই সরকার শুধু ঘোষণারই সরকার।’’

সরকারের বাজেট নথি বলছে, রাজ্যের যত আয়, ব্যয়ও প্রায় তত। তবে সেই আয়ের বড় অংশের সূত্র ঋণ। তার বাইরে নিজস্ব আয়ের উৎস কার্যত সীমিত। ২০২২-২৩ সালে রাজস্ব আদায়ের যে অনুমান সরকারের ছিল, সংশোধিত হিসাবে তা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এমনকি আবগারিতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। অনুমানের তুলনায় কম হয়েছে রাজ্যের জিএসটি (এসজিএসটি) আদায়। তবে বিক্রয় কর (প্রধানত পেট্রল-ডিজ়েল থেকে পাওয়া) আদায় হয়েছে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বেশি। ফলে রাজকোষ ঘাটতি চড়াই থেকেছে। আগামী বছরে তা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা। তাই বাজার থেকে ধার করার লক্ষ্যমাত্রাও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হয়েছে। শুধু ধার শোধেই রাজ্যকে গুনতে হবে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। যদিও চন্দ্রিমার দাবি, ‘‘আমরা খুবই কড়া ফিসকাল শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করছি।’’ অমিতও জানান, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের নিরিখে ঋণের হার ৩৭.৬৭% হয়েছে। তবে তা কেন্দ্রের দেওয়া মূলধনী খাতে ঋণের কারণে কিছুটা বেড়েছে।

সরকারি নথি জানাচ্ছে, এ বার বেশ কিছু দফতরের বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। কয়েকটি দফতরেই বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। পঞ্চায়েত দফতরে দেড় হাজার কোটি। কৃষি, উচ্চশিক্ষা, জনস্বাস্থ্য কারিগরিতে প্রায় দু’শো কোটি টাকা করে বরাদ্দ বেড়েছে। ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে স্বাস্থ্যে। স্বাস্থ্যসাথীতে মাত্র ১০ কোটি। পূর্ত দফতরের বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা। ১২ কোটি টাকা পৌর ও নগরোন্নয়নে। েডউচা পাচামি, বানতলার মতো নানা প্রকল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে বাজেটে। বিরোধীদের দাবি, কর্মসংস্থান কী ভাবে হবে বাজেটে তার কোনও দিশা নেই।

অমিত জানান, রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি ৩.৮৩%। অথচ কেন্দ্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ-সংস্কার মানলে তা ৩.৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। তা ছাপিয়ে গেলে ঋণ বা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেতে সমস্যা হবে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE