মুখ্যমন্ত্রী বা মুখ্যসচিবের অনুমতি না নিয়ে সরকারি কাজের জন্য কোনও অফিসারের দিল্লি যাওয়া নিষেধ। গত ২১ মার্চ এমনই এক নোটিস দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই গত ৩ এপ্রিল দিল্লিতে ডেঙ্গি প্রতিরোধের উপায় নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় যোগদান স্থগিত করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ডাক পেয়েও দিল্লি যাত্রা বন্ধ রাখতে হয়েছে কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের ভেক্টর কন্ট্রোলের কর্তারা। তাঁদের আফশোস, রাজ্যের দুই যমজ শহরের কাছে মশা নিবারণের কাজ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের গেরোয় এ বার আটকে গেল।
কারা আয়োজন করেছিল ওই কর্মশালার?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল ভেক্টরবোর্ন ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনভিবিডিসিপি) ডেঙ্গি রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতেই ওই কর্মশালার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৩ এপ্রিল ওই দিল্লির নির্মাণ ভবনে ওই অনুষ্ঠান ছিল। পক্ষ কাল আগেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের প্রতিটি রাজ্য এবং দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, হাওড়া-সহ দেশের ২০টি শহরের পুর নিগমের স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। এনভিবিডিসিপি-র ডিরেক্টর এ সি ধারিওয়াল বৃহস্পতিবার জানান, মশাবাহিত রোগ নিবারণে রাজ্যগুলির মতামত এবং তা নিয়ে জাতীয় মশা নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করার ভূমিকাই ছিল প্রধান।
কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওই কর্মশালা? তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংস্থার ডিরেক্টর। বলেছেন, দেশ জুড়ে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। কোন রাজ্যে তার প্রভাব কতটা, মশার চরিত্র কতটা বদলাচ্ছে, কী ভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, সে সবই আলোচনার বিষয় ছিল। প্রতিটি রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিরা তাঁদের সমস্যা আদানপ্রদান করলে সুবিধে হবে। কী ভাবে তা নিবারণ করা হবে তার জন্য আলাদা মশা নিয়ন্ত্রণ কমিশন করাও ঠিক হয়। ওই সংস্থার এক অফিসার জানান, কলকাতা গত কয়েক বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে সদর্থক ভূমিকাও নিয়েছে। তাই কলকাতার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করাও জরুরি ছিল।
কিন্তু তাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর, কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার কেউই যোগদান না করায় আশাহত হয়েছেন সংস্থার কেউ কেউ। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, দিল্লি যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করতে হয়েছে বিশেষ কারণে। সেই কারণ কি তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া ওই নোট? মুখ খুলতে চাননি রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের কোনও অফিসার। কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার অফিসারেরাও তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রশ্ন করতেই তাঁরা জানান, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয় পুরবোর্ডে। তাঁদের কিছু জানা নেই।
কলকাতা মশা নিবারণে ভাল কাজ করলেও কেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কেউ যোগ দিল না দিল্লির ওই কর্মশালায়? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তেমন কোনও আমন্ত্রণের কথা আমি জানতাম না। আমার কাছে কেউ কোনও খবরও দেয়নি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই কি এর কারণ? জবাব দেননি শোভনবাবু।
একই প্রশ্নের জবাবে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কমিউনিকেশন গ্যাপ হতে পারে। আমি খবর পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর ওই নোটের কথা না তুলেও রথীনবাবু নিজেই বলেন, ‘‘এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy