কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই দু’তিন হাজার কোটি টাকার বরাদ্দে ১০,৬২০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য। প্রতীকী ছবি।
মৎস্যচক্ষু এখন একটাই। পঞ্চায়েত ভোট। সেই জন্য যেমন জেলায় জেলায় ‘দিদির দূত’ পাঠিয়ে গ্রামের মন বোঝার চেষ্টা, একই কারণে গ্রামের রাস্তা অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষ বাছাই বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত। যথাসম্ভব বিতর্কমুক্ত থেকে সমীক্ষা, দরপত্র, খরচ, নির্মাণ-গুণমান নিশ্চিত করে গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়নে জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সব স্তরের আধিকারিকদের দায়বদ্ধ করা হল সেই লক্ষ্যেই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সড়ক প্রকল্পে ন্যূনতম খামতিও যে রাখা যাবে না, পঞ্চায়েত দফতরের লিখিত আদেশনামায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ রাস্তার বেশির ভাগই চিহ্নিত হয়েছে শাসক দলের ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে ‘দিদির দূতদের’ প্রস্তাব অনুসারে। তাই পঞ্চায়েত দফতরের লিখিত আদেশনামায় প্রকল্প রূপায়ণে বাড়তি সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসনের উদ্দেশে।
বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই দু’তিন হাজার কোটি টাকার বরাদ্দে ১০,৬২০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রী আবাস বা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জায়গায় শাসক দলের পক্ষে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে এই সড়ক প্রকল্পকে তুরুপের তাস করার অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “দূতেদের তো পাঠানোই হয়েছিল মানুষের চাহিদা জানতে। তাঁদের মাধ্যমে বহু রাস্তার চাহিদা নথিবদ্ধ হয়। সরকারি স্তরে সেগুলির প্রকৃত বাস্তবতা খতিয়ে দেখে তবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জায়গা থেকেও রাস্তার চাহিদা ছিল।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, নানা অভিযোগে আবাস বা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এই আচরণকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে রাজ্য। কিন্তু এই টানাপড়েনে থমকে রয়েছে গ্রামীণ এলাকার অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকল্প। জনমানসে এর প্রভাব এড়ানো যায় না। তা ছাড়াও রয়েছে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অস্বস্তি। গ্রামীণ ভোটের আগে মানুষের মন বুঝতে রাজনৈতিক ভাবে শুরু হয় ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’। সরকারের যুক্তি, ওই কর্মসূচির মাধ্যমে আসা প্রকল্পের প্রস্তাবগুলি নিখুঁত ভাবে রূপায়ণ করা গেলে তাদের ‘সদিচ্ছা’র বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা যাবে। সে-ক্ষেত্রে আবাস বা একশো দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলিও খণ্ডনের চেষ্টা করতে পারবে সরকার। তাই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মেলবন্ধনে এত প্রস্তুতি।
এক কর্তার কথায়, “খরচের বহরে এই সড়ক প্রকল্পের কাজ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রায় সমান। সেটা যে রাজ্যের তহবিল থেকে হচ্ছে, সেই তথ্য মানুষকে জানাতে ব্যাপক প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। হোর্ডিং, পোস্টার, ফ্লেক্স ছাড়াও মাইক-প্রচার চালাতে হবে।” পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, “ভারত সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরাই সড়ক প্রকল্পের উপরে বাড়তি জোর দিচ্ছি। মানুষের চাহিদা পূরণ করতে রাজ্য সরকার বরাবরই সচেষ্ট।”
পঞ্চায়েত দফতরের লিখিত নির্দেশ, গ্রাম পঞ্চায়েত বা ব্লক স্তরে সমীক্ষা ও পরিকল্পনা করবেন বিডিও। তদারক করবেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক। সরকারি বিধি মেনে সম্ভাব্য খরচের হিসেব তৈরি করবেন তাঁরা। অপ্রয়োজনীয় খরচ আটকানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গোটা রাজ্যে নির্মাণ-খরচের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। জেলাশাসকেরা সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলির কাজ শুরু করার অনুমতি চাইবেন পঞ্চায়েত দফতরের কাছে। অর্থ দফতরের বিধি মেনে দরপত্র ডাকা হবে। তার আগে বিভিন্ন মাধ্যমে তার নিবিড় প্রচার চলবে। নির্মাণকাজের নজরদারিতে থাকবেন সরকারি আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রয়োজন অনুযায়ী জেলাশাসকদের কাছে প্রকল্পের টাকার কিস্তি পাঠানো হবে।
এক জেলা-কর্তা বলেন, “প্রকল্প নির্বাচনে রাজনৈতিক মতামতের গুরুত্ব থাকলেও কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো দায়িত্বেই থাকছেন আধিকারিকেরা। এখানে রাজনৈতিক কোনও হস্তক্ষেপের সুযোগ আর নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মতো এখানেও জিয়ো-ট্যাগ, ছবি, ভিডিয়ো-প্রমাণ নথিবদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ নজরদারি থাকছে কাজ, গুণমান এবং খরচের খুঁটিনাটিতে।” পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, “সরকারের পদ্ধতি মানতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অফিসারদেরই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy