Advertisement
০২ মে ২০২৪

বেশি পর্যটক টানতে ডাকা হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের

‘দ্য সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া’—স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর রূপরেখা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর। এতদিন দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর বাছাই করে রোড শো বা সেখানকার ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক, নানা অডিও-ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরা হত। কিন্তু এবারই প্রথমবার পর্যটনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে চলছে পযর্টন দফতর।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

‘দ্য সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া’—স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর রূপরেখা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর। এতদিন দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর বাছাই করে রোড শো বা সেখানকার ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক, নানা অডিও-ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরা হত। কিন্তু এবারই প্রথমবার পর্যটনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে চলছে পযর্টন দফতর।

দফতরের অফিসারদের বক্তব্য, অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের রাজ্যে আনেন বেসরকারি পেশাদার ট্যুর অপারেটররা। তাঁদের মতামত না নিয়ে কোনও প্রচারের প্রকল্পে সাফল্য আসতে পারে না। পুরোপুরি পেশাদার কোনও সংস্থার মাধ্যমেই অনুষ্ঠানগুলি করা দরকার। সেই জন্যই বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা বদল করা হয়েছে।

রাজ্য পর্যটন দফতরের অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী জুন মাস থেকে দেশ জুড়ে ওই ব্যাপক প্রচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগে প্রচারের ক্ষেত্রে জায়গাগুলি দফতরের তরফেই ঠিক করা হত। সেখানে পর্যটন ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানানো হত। কিন্তু এবার তা হবে না। তাঁদের কাছ থেকে সব পরামর্শ নিয়ে সমস্ত ঠিক করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, কোথাও কোথায় প্রচার করা হবে, কী ভাবে করা হবে, কাদের ডাকা হবে, কী ধরনের বৈঠক হবে সব ক্ষেত্রেই আমরা রাজ্যের পর্যটন সংগঠনগুলির সাহায্য নিচ্ছি। এতেই ভিন রাজ্যের পর্যটকদের উৎসাহ রাজ্যের প্রতি বাড়বে বলে তাঁরা আশাবাদী।

পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জুলাই মাস নাগাদ দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বই, আমদাবাদ, হায়দরাবাদের মতো কয়েকটি শহরে একই ধরনের অনুষ্ঠান হয়। ধীরে ধীরে রাজ্য সরকার দফতরের বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে থাকায় এই ধরনের পরিকল্পনাগুলি তৈরি হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলি সবই আয়োজন করতেন দফতরের একাংশ অফিসার। শহর থেকে আমন্ত্রিতদের তালিকা তাঁরাই তৈরি করতেন। আর পরে সেখানে ডাকা হত রাজ্যের পর্যটন ব্যবাসায়ীদের। এতে অনেক সময় ভুল এলাকা বাছাই বা ঠিকঠাক ‘টার্গেট গ্রুপ’কে পাওয়া যেত না বলেও অভিযোগ উঠত। এবার তা কাটাতে চাইছেন দফতরের আধিকারিকেরা।

দফতরের কয়েকজন অফিসার জানান, ইতিমধ্যে ‘বিউটিফুল বেঙ্গল’ নামের স্লোগানকে বদলে ফেলা হয়েছে। সেখানে নতুন ‘দ্য সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া’ স্লোগানটি তৈরি করা হয়েছে। একেই সামনে রেখেই প্রচার অভিযান হবে। সেখানে হেরিটেজ সংস্কৃতি, বন্যপ্রাণ, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র সৈকত বা নদী মেলবন্ধন তৈরি এ রাজ্য যেমন থাকবে, তেমনি মিষ্টি দই থেকে রসগোল্লা-সহ রাজ্যের নানা ব্যঞ্জনকেও সামনে রাখা হবে। কিন্তু এই ‘প্যাকেজ’কে বাজারজাত করতে গেলে প্রয়োজন আগ্রাসী মনোভাব। সেটা মাথায় রেখেই এবারের অনুষ্ঠানগুলির রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীদের একান্ত বৈঠকের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

সরকারি সূত্রের খবর, গত মাসে কলকাতায় কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। তাতে আপাতত ঠিক হয়েছে, ৩-৪টি স্টার হোটেলেই অনুষ্ঠান হবে। সেখানে অডিও ভিস্যুয়ালের সাহায্যে শৈলরানি দার্জিলিং, দিঘা, মন্দারমণি বা শঙ্করপুরের সমুদ্র ছাড়াও হেরিটেজ টয়ট্রেন, রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন, ম্যানগ্রোভের সুন্দরবন বা ইতিহাসের মালদহ, কোচবিহার বা গৌরের বর্ণনা প্যাকেজে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ী এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে তা তুলে ধরা হবে। ইতিমধ্যে কলকাতায় বিভিন্ন স্তরের পর্যটন সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা, বৈঠকও শুরু করেছেন দফতরের অফিসারেরা।

রাজ্যে পর্যটন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন ‘ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলে’র (ট্যাব) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সিংহরায় দফতরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটন দফতর একটু নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে, তা বোঝা যাচ্ছে। নিজেরাই আগে সব ঠিক করত। তাতে সাফল্য নিয়ে অনেক সময়ই প্রশ্ন উঠেছে। আমরাই পর্যটকদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের পরামর্শ নিয়ে এগোলে কাজটা ভাল হবে বুঝেই এবার পরিকল্পনা বদল হয়েছে।’’

ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (এতোয়া) কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পেশাদার সংস্থার সাহায্য বা চিন্তাভাবনা ছাড়া ভিন রাজ্যে এই ধরনের কাজ করাটা শক্ত। এবার দফতরের একাংশ অফিসার তা বুঝেই আমাদের প্রথম থেকে প্রক্রিয়ায় সামিল করেছেন। আশা করি, এবার এর ফলও মিলবে।’’

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজ্যে ভিন রাজ্য এবং বিদেশের সংখ্যক পর্যটক আসেন, তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যে আগাম বুকিং করে বিভিন্ন এলাকায় আসেন। তেমনিই, রাজ্যের পর্যটকেরা আগাম বুকিং করে আসেন।। আবার পর্যটন, বন দফতর ছাড়াও বেসরকারি রিসর্টের ক্ষেত্রেও অনলাইন বুকিং চালু থাকায়, অনেকে নিজেরাই বুকিং করেন। তবে মোট সংখ্যার ২০-২৫ শতাংশ বেশি নয়। বেসরকারি অপারেটরদের মাধ্যমেই মূলত ব্যবসা হয়ে থাকে। সরকার বা পর্যটন দফতর পরিকাঠামো তৈরির কাজ করে থাকে। কাজেই বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা কোথাও থেকে রাজ্যে পর্যটকেরা আসেন বা ভিন রাজ্যের কোন অপারেটরদের মাধ্যমে তা হয়, তা তাঁদের নখদর্পণে। সেই কারণেই তাঁদের মধ্যেই ওই অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১২ সালে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লক্ষ জন পর্যটক বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। এর মধ্যে বিদেশে পর্যটকও আছেন। যার মধ্যে এ রাজ্যে দেশের পর্যটকদের শেয়ার মাত্র ২ শতাংশ মতো। আর বিদেশি পর্যটকদের শেযার ৬ শতাংশের মত। যার থেকে অন্য রাজ্যের শেয়ার অনেক বেশি। এই পর্যটক সংখ্যাই বাড়াতে চাইছে পর্যটন দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE