কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে নোবেল চুরি-কাণ্ডের যাবতীয় নথি চেয়ে পাঠাল রাজ্য সরকার। শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে কেন্দ্রের ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-কে ওই চিঠি দেন, যাতে প্রয়োজনে ওই তদন্তে নামতে পারে রাজ্যই।
এ দিন বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘ওরা (সিবিআই) নিজেরা তো পারছে না! আমাদের দিলে আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি। রবীন্দ্রনাথের নোবেল নিয়ে সারা দেশের সেন্টিমেন্ট আছে। সেই নোবেল পদক কোথায় গেল, তা জানা দরকার।’’ মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০১৫-র ডিসেম্বরে ডিওপিটি-কে চিঠি দিয়ে এই মামলার অগ্রগতি এবং সিবিআই কী করতে চায়, জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার জবাব আসেনি। বাসুদেববাবুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিষয়টি বলেছেন। তাই আমরা আবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে এ নিয়ে জানতে চাইছি।’’
রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে যে নোবেল পদক-সহ ৫০টি মূল্যবান সামগ্রী চুরি গিয়েছে, তা জানাজানি হয়েছিল ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ সকালে। মমতা তখন বিরোধী নেত্রী। প্রথম থেকেই তিনি নোবেল চুরির পিছনে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। চুরির দিন কয়েকের মধ্যেই শান্তিনিকেতনে পৌঁছে বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের মাঝে মমতা বলেছিলেন, ‘এর পিছনে কোনও বড় চাঁই থাকতে পারে’। একই সঙ্গে সিবিআই তদন্ত চেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বাম সরকারের উপরে চাপ তৈরি করেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সফরের পর দিনই শান্তিকেতন গিয়ে সিবিআই তদন্তের কথা ঘোষণা করেন বুদ্ধবাবু।
সে সময়ের বিরোধী নেত্রী আজও মনে করেন, প্রকৃত তদন্ত হলে নোবেল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু, ১২ বছর পরে হঠাৎ কেন নোবেল চুরির তদন্তভার চেয়ে তৎপর হলেন মুখ্যমন্ত্রী, সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মমতা নিজের ব্যাখ্যায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথের সম্মান শুধু বাংলার নয়, গোটা বিশ্বের।’’
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘দিদি মনে হয় জেনেছেন, নোবেল তৃণমূলেরই কারও কাছে আছে। উনি খুঁজে দিলে আমরা খুশি তো হবই, দিদিকেও নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবি তুলব!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘উনি যে ভাবে বলছেন, তাতে তো মনে হচ্ছে, উনি জানেন নোবেল কোথায় আছে!’’
যদিও রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, তদন্তের বিষয়ে সিবিআই যে আসলে ‘ব্যর্থ’, তা সামনে আনাই নবান্নের উদ্দেশ্য। আবার বিরোধীদের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলছে। মামলার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে সেই তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার আগে নোবেল-কাণ্ডের প্রসঙ্গ এনে সিবিআইয়ের ‘ব্যর্থতা’-ই তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল সরকার।
কিন্তু নবান্নের এক কর্তা বলছেন, ‘‘তদন্তে সিআইডি-র বদলে সিবিআই চেয়েছিল এই রাজ্যের পূর্বতন সরকার। এখন সেই রাজ্যেরই সরকার ফের সিবিআইয়ের হাত থেকে তদন্তভার ফেরত নিতে পারে কি? এমন নজির মনে হয় নেই।’’
সিবিআই আইনজীবীদের মতে, রাজ্য চাইলে নতুন করে তদন্ত করতেই পারে। এই মামলা সংক্রান্ত যে কেস ডায়েরি, নথিপত্র, সিজার মেমো রয়েছে, কেন্দ্র নির্দেশ দিলে সিবিআই তা রাজ্যের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু, আদালতে গিয়ে রাজ্য বা সিবিআই যে কেউ যদি পুনর্তদন্তের আর্জি জানায়, তা হলে প্রশ্ন উঠবে, মামলায় নতুন কী অগ্রগতি হয়েছে? নোবেল পদক বা চোর সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য হাতে এলে, তবেই আদালত পুনর্তদন্তের আর্জি মঞ্জুর করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy