Advertisement
০৭ মে ২০২৪

অভিযোগ উঠলে শাস্তির খাঁড়া ,স্পষ্ট ইঙ্গিত নির্বাচন কমিশনের

লোকসভা নির্বাচন হোক বা পঞ্চায়েত ভোট, সাম্প্রতিক সময়ে একটা অভিযোগ বারবার ফিরে এসেছে বিরোধীদের মুখে। সেটা হল, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও রাজ্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাকে কার্যত বসিয়ে রেখেছে শাসক দল।

আশ্বাসের হাত। সোনারপুরে মঙ্গলবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

আশ্বাসের হাত। সোনারপুরে মঙ্গলবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:১৯
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচন হোক বা পঞ্চায়েত ভোট, সাম্প্রতিক সময়ে একটা অভিযোগ বারবার ফিরে এসেছে বিরোধীদের মুখে। সেটা হল, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও রাজ্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাকে কার্যত বসিয়ে রেখেছে শাসক দল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলেছে বলেও দাবি করেছেন অনেকে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে এমন ঘটনা সামলাতে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা জানিয়ে দিলেন, বাহিনীকে বসিয়ে রাখলে তার দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের উপরেই। সে ক্ষেত্রে কমিশন সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও কসুর করবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগামী ২১-২২ মার্চ কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চ’ ফের রাজ্যে আসতে পারে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন দিল্লি থেকে এ রাজ্যের জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন উপ-নির্বাচন কমিশনার। সেখানে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কোনও পর্বে নিরপেক্ষতা নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে।

পঞ্চায়েত ভোটের সময় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়াই করে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার ব্যবস্থা করেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। সে বারেও কিন্তু বাহিনী ব্যবহারে প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ উঠেছিল। গত লোকসভা ভোটে কমিশনের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ প্রথমে প্রচুর হম্বিতম্বি করলেও ভোটের সময়ে ছিলেন কার্যত নিশ্চুপ। সেই সুযোগে বাহিনীকে বেশির ভাগ জায়গায় ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেরিয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সাম্প্রতিক সময়ের দু’টি পুরভোট, বিশেষ করে বিধাননগরে অবাধ দুষ্কৃতীরাজের ফলে ভোটাররা রীতিমতো ভয় পেয়ে যান। সে দিন সাধারণ মানুষ তো বটেই, আক্রান্ত হন ২২ জন সাংবাদিকও। এর পর থেকেই বিরোধীরা দাবি তুলতে থাকেন, বিধানসভা ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ করতে গেলে কমিশন যেন আগেভাগেই বাহিনী মোতায়েন এবং রুট মার্চের ব্যবস্থা করে।

এ বার ভোট ঘোষণার আগেই বাহিনী এসেছে রাজ্যে। উপ-নির্বাচন কমিশনার সাক্সেনা বলেন, ‘‘অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভোটের এক মাস আগে থেকে বাহিনী পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাদের যেন বসিয়ে রাখা না হয়।’’ বাহিনীকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করে ভোটারদের মনোবল বাড়ানোর দায়িত্ব জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের। সাক্সেনা বলেন, ‘‘যদি এ নিয়ে কোনও অভিযোগ ওঠে, তা হলে কিন্তু কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’

বাহিনী আগে পাঠানো এবং সাত দফায় ভোটের পাশাপাশি আরও একটি পদক্ষেপ করেছে কমিশন। সাক্সেনা এ দিন জানান, দিল্লিতে নির্বাচন সদনের কন্ট্রোল রুমে তিন আইএএস অফিসারকে বসানো হয়েছে। যে অভিযোগ আসছে, তার যথাযথ নিষ্পত্তির জন্যই এই ব্যবস্থা। জেলা এবং রাজ্যস্তরেও কন্ট্রোল রুমে যোগ্য অফিসার বসিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন তিনি।

কমিশন রাজ্য সম্পর্কে কতটা খোঁজখবর রাখছে, সেটা বোঝা গেল সাক্সেনার আলোচনাতেই। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, পরিচ্ছন্ন ভোটের জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এ কথা শুনে চটে যান সাক্সেনা। বলেন, ‘‘চেষ্টার কথা কমিশন শুনতে চায় না। কমিশনের প্রতিটি নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করতে হবে।’’ কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর কাছে বিশদে জানতে চান উপ-নির্বাচন কমিশনার। তন্ময়বাবু বলতে শুরু করলে সাক্সেনা বলেন, ‘‘কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে আপনি এটা জানানোর জন্য তৈরি হন।’’ আরও ভাল ভাবে যাতে বাহিনীর টহলদারি চালানো হয়, সে জন্য নির্দেশ দেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারকে। ভোটার তালিকা ঠিক মতো তৈরি হয়েছে কি না, জানতে চান হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনসলের কাছে।

পরে ভিডিও কনফারেন্সে থাকা এক কর্তা জানান, নিজস্ব সূত্রে কমিশন যে অফিসারদের উপর নজর রাখছে, তা স্পষ্ট করেছেন সাক্সেনা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কিছু অফিসারকে সরাতে পিছপা হবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

central forces assembly election security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE