Advertisement
E-Paper

বনরক্ষার গর্ভগৃহেই পুড়ে ছাই ডোরাকাটা

চাঁদড়ার জঙ্গলে শিকারিদের হানায় বাঘের মৃত্যুর পরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বন দফতরের ভূমিকা। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৩
বনকর্মীদের কাঁধে বাঘের দেহ। বাগঘোরায়। ফাইল চিত্র।

বনকর্মীদের কাঁধে বাঘের দেহ। বাগঘোরায়। ফাইল চিত্র।

বন আর বন্যপ্রাণকে বাঁচিয়েই বনবাসী মানুষকে বেঁচে থাকার পথ দেখিয়েছিল শালবনির প্রত্যন্ত অঞ্চল আরাবাড়ি। বনসুরক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতিতে মিলেছিল আন্তর্জাতিক পল গেটি পুরস্কার। গর্বের সেই আড়াবাড়িতেই পুড়ে ছাই হল বল্লমের খোঁচায় নিহত ভিনদেশি দক্ষিণরায়। শুক্রবার গভীর রাতে ১২ কুইন্টাল শালকাঠে চার ঘণ্টা ধরে পোড়ানো হয় বাঘের দেহ।

চাঁদড়ার জঙ্গলে শিকারিদের হানায় বাঘের মৃত্যুর পরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বন দফতরের ভূমিকা। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজ্যের কাছে ও জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ পর্ষদের (ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি) কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বাঘের হানায় জখম বাবলু হাঁসদা, বাদল হাঁসদা-সহ একদল শিকারির নামে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে বন দফতর। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

রাতের অন্ধকারে বাঘের দেহ দাহ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারও কারও মতে, বাঘ ধরতে ব্যর্থ বন দফতর তড়িঘড়ি গোটা পর্বটা মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছে। যদিও রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী মারা গেলে রাতে দাহ করাটাই নিয়ম।’’ শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে মেলে বল্লমে নিহত বাঘের দেহ। দেহ উদ্ধার করে প্রথমে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয়। পরে আনা হয় শালবনির আরাবাড়িতে। তবে আরাবাড়িতেই দেহ পোড়ানো হবে কিনা, তা গোড়ায় ঠিক ছিল না। এখানে দেহ আনা হয় ময়নাতদন্তের জন্য, বিভিন্ন পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য। পরে ঠিক হয় দেহ আর বেশি নাড়াচাড়া করা হবে না। রাতেই পোড়ানো হবে। আরাবাড়ি রেঞ্জ অফিস চত্বরে অতিথিশালার কাছে খোলা জায়গায় বাঘের দেহ পোড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়।

বাঘের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শুক্রবারই মেদিনীপুরে আসেন মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে। তিনিও চলে আসেন আরাবাড়িতে। আসে মেডিক্যাল টিম। ময়নাতদন্তের পরে নিয়মাফিক ভিসেরা এবং ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাজ্যের এক বনকর্তার কথায়, “কোনও বিষক্রিয়া আছে কি না তা জানতেই ভিসেরা পরীক্ষা।” ময়নাতদন্ত শেষে রাত বারোটা বাঘটিকে চিতায় তুলে মোবিল ঢেলে আগুন লাগানো হয়।

প্রায় ৭ ফুট দীর্ঘ, ২৩০ কিলোগ্রাম ওজনের রাজকীয় শরীরটা যখন পুরো ছাই, ঘড়িতে তখন শনিবার ভোর চারটে। পরে সেই ছাই মাটিচাপা দেওয়া হয়। সে কাজে ব্যস্ত এক বনকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘দিনটা দগদগে হয়ে থাকবে। যে আরাবাড়ি জঙ্গলরক্ষার শপথ নিয়েছিল, সেখানে এ এক লজ্জার অধ্যায়। সব তো আর চাপা দেওয়া যায় না!’’

Royal Bengal tiger Lalgarh Bhaghora Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy