Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কার কথা যে শুনি!

বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এ দিনও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, ‘‘মশারি টাঙানো আছে, একটি মশাও গলতে পারবে না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৩২
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে অশান্তি। বেশির ভাগ জায়গাতেই কাঠগড়ায় শাসক দল। এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নীরব থাকার। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার জেলার পুলিশ সুপারদের শান্তি বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।

কিন্তু সেই নির্দেশে কাজ হবে কি না সন্দেহ। কারণ, স্থানীয় স্তরে পুলিশের উপরে চাপ রয়েছে শাসক দলের। তৃণমূলের জেলা নেতাদের অনেকেই বলছেন, ‘‘আর তো পাঁচ দিন। এ ক’দিন খেলা চালিয়ে ভোটটা করে নেওয়ার নির্দেশই রয়েছে।’’ বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এ দিনও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, ‘‘মশারি টাঙানো আছে, একটি মশাও গলতে পারবে না।’’

অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল এ দিন মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব মলয় দে রাজ্যপালকে বলেন, কিছু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী তখন বলেন, অভিযোগ কয়েকটি, নাকি সারা রাজ্য জুড়েই তাণ্ডব চলছে? প্রশাসনের দুই কর্তাকে রাজ্যপাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দাবি করলেই চলবে না, বাস্তবে তা করে দেখাতে হবে। সেটা না হলে তিনি যে চুপ থাকবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন কেশরী।

আরও পড়ুন: মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে বোমা-গুলি, রণক্ষেত্র রায়গঞ্জ

ভোটে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বাহিনী নিয়ে যাওয়া নিয়ে এ দিন এসপি-দের ভিডিয়ো কনফারেন্সে ডেকেছিলেন ডিজি। সেখানে শুরুতেই তিনি বলেন, যা হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না। এতে পুলিশেরই মুখ পুড়ছে। মনোনয়নপর্ব যাতে ‘ঘটনাবিহীন’ হয়, সেটা দেখুন। যদিও একাধিক পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তাঁদের উপরে রাজনৈতিক চাপ প্রবল। ফলে ডিজি-র নির্দেশ মানবেন, নাকি শাসক দলের জেলা সভাপতির কথা শুনবেন, তা-ই বুঝে উঠতে পারছেন না।

ডিজি যা-ই বলে থাকুন, গায়ের জোরে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকানোর অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দু’দিন যেতে না যেতেই যে ভাবে গেল গেল রব উঠছে, তাতে মনে হচ্ছে রাজ্যে এর আগের সব ভোট যেন ধোয়া তুলসী পাতা ছিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গোলমাল সবই করছে বিজেপি।’’

এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও কার্যত পার্থবাবুর সুরে সুর মিলিয়েছেন। রাজভবনের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম যা জানাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কেউ মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না। অথচ আমাদের তথ্য হল, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের ১৬১৪টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। বিরোধীদের সেই সংখ্যা ১৬৯২।’’

কিন্তু ভোট পরিচালনার দায়িত্ব যাঁর, সেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ এ দিন রাজ্যপালকে বলেছেন, যে ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে, তাতে তিনি দিশাহারা। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট যে অসম্ভব, তা ফের রাজ্যপালকে বলেছেন তিনি। কিন্তু এ দিনই অনুজ শর্মার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পুলিশই সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে সক্ষম।’’

কমিশনারকে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে রাজ্যকে চিঠি লিখতে বলেছেন রাজ্যপাল। আর আজ, বৃহস্পতিবার তলব করেছেন পার্থবাবুকে। পার্থবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, একা নন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নিয়েই রাজভবনে যাবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE