দেশ জুড়ে শিল্প অথবা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ কার্যত দু’বছর আগেই থেমে গিয়েছে। কিন্তু তাতে এ রাজ্যে কাজ আটকে থাকছে না বলে নবান্নের দাবি। সমস্যা মেটাতে ২০১৪ সালে জমি কেনার নীতি নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবং সেই কাজে সাফল্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর (যা মুখ্যমন্ত্রীরই হাতে) সূত্রের খবর, গত দু’বছরে ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে প্রায় একশোটি সরকারি প্রকল্পের জন্য অন্তত ৫০০ একর জমি কিনেছে সরকার। সব ক্ষেত্রেই মালিকরা স্বেচ্ছায় জমি বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩৫টি বেসরকারি শিল্প-প্রকল্পের জন্য ভূমি আইনের ১৪ ওয়াই ধারায় ছাড়পত্রও দিয়েছে নবান্ন।
তবে এটা ‘অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা’— মানছেন নবান্নের কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কারও হাতে বেশি জমি নেই। ফলে সরকারি প্রকল্প হলেও একলপ্তে বড় জমি কেনা কঠিন।’’ কেন্দ্রের নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন চালু হলে সেই সমস্যা মিটবে বলেই তাঁদের দাবি। ‘‘যত দিন না ওই আইন চালু হচ্ছে, তত দিন জমি কিনেই কাজ চালাতে হবে,’’ মন্তব্য তাঁদের।
জমি আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। প্রথম থেকেই তাঁর ঘোষিত নীতি, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জোর করে জমি নেওয়া হবে না। তাঁর জমানার প্রথম পাঁচ বছরে কোথাও চাষের জমি অধিগ্রহণ করেনি সরকার। তাতে যেমন কৃষকরা সন্তুষ্ট, উল্টো দিকে সমস্যায় পড়েছে শিল্পমহল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন শিল্পপতিরা। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কেউ জমি কিনতে চাইলে তা সমস্যা হবে না। ।
এর মধ্যেই কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৫০ একর জমি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনেছে এনটিপিসি। এখনও প্রক্রিয়া চলছে বলে জমি হস্তান্তর হয়নি। তবে মূল কাজ হয়ে গিয়েছে।
প্রায় একই ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজ্যও সরাসরি জমি কিনছে জমি মালিকদের থেকে। এই নীতি অনুযায়ী, কোনও সরকারি প্রকল্প ঘোষণা হলে জমি দিতে ইচ্ছুকরা সরকারের কাছে আবেদন করবেন। তার ভিত্তিতে জমি কেনা হবে। কী ভাবে সফল হচ্ছে এই কাজ? নবান্নের এক কর্তা জানান, এর জন্য উৎসাহভাতা বা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে যদি জমি রেজিস্ট্রি হয়ে যায়, তবে জমির মালিক দামের ৫০ শতাংশ বাড়তি পাবেন। আর ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন হলে বাড়তি মিলবে দামের ২০ শতাংশ। ওই কর্তার দাবি, ‘‘এতেই সফল জমি কেনার নীতি।’’
কেন হঠাৎ জমি কেনার পথে যেতে হল সরকারকে? এর বড় কারণ, কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে টালবাহানা। ইউপিএ সরকার ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন বাতিল করে নতুন আইন পাশ করে। তা তৈরি হয়ে যায় ২০১৪-র ১ জানুয়ারিতেই। কিন্তু এই আইনের বিধি বা রুল তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র।
ওই আইন অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ জমির মালিক রাজি থাকলে তবেই বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি নিতে পারবে সরকার। মোট জমির কিছুটা কেনা ও কিছুটা অধিগ্রহণ করা হলে দু’টি ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ এক থাকবে। আইন তৈরির আগে এই বিলটি নিয়ে কেন্দ্র রাজ্যগুলির মত চায়। মমতার সরকার তখন বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিল।
বিধি তৈরি না হওয়ায় অবশ্য আইনটি কার্যকর করা যায়নি। পরে নরেন্দ্র মোদী আইনটি সংশোধনের চেষ্টা করেন। বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ আরও সহজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তখন। যদিও শেষ পর্যন্ত সংসদে আইনটি পাশ করানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা কাটাতে ২০১৪-র শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গ নিজেদের জন্য একটি খসড়া বিধি তৈরি করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে অনেক পার্থক্য থাকায় ওই বিধিও কার্যকর করা যায়নি।
এর পর জমি কেনার নীতি গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। এবং সেই নীতি আঁকড়েই গত প্রায় দু’বছরে তারা হয় জমি কিনেছে অথবা কেনার পথে। নবান্নের এক শীর্ষ অফিসার জানান, রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পের জন্য ২৫ একর জমি কেনা হয়েছে। আবার, রেলের প্রকল্পের জন্যও জমি কেনা হয়েছে। লোকে স্বেচ্ছায় জমি দিচ্ছেন— দাবি ওই কর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy