E-Paper

উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে এ রাজ্যের মুসলিম কন্যারা: কেন্দ্রীয় সমীক্ষা

২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১-এর সমীক্ষা রিপোর্টে সমগ্র দেশে উচ্চশিক্ষায় মুসলিম পড়ুয়া কমেছে ১,৭৯,১৪৭ জন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ২৮০৫ জন বেড়েছে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৫
representative image

—প্রতীকী ছবি।

একটা বদল চোখে পড়ছিলই গ্রামবাংলায়। বিশেষত মুসলিম ছাত্রীরা অনেকেই এমএ, বিএড পড়তেও মুখিয়ে। এ বার উচ্চশিক্ষা নিয়ে সর্বভারতীয় সমীক্ষার সাম্প্রতিকতম রিপোর্টেও (অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন বা এআইএসএইচই, ২০২০-২১) পশ্চিমবঙ্গকে দেশে কিছুটা ব্যতিক্রমী বলে দবি করা হয়েছে।

২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১-এর সমীক্ষা রিপোর্টে সমগ্র দেশে উচ্চশিক্ষায় মুসলিম পড়ুয়া কমেছে ১,৭৯,১৪৭ জন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ২৮০৫ জন বেড়েছে। শতকরা হিসাবে অবশ্য রাজ্যে সামান্য কমেছে মুসলিম পড়ুয়াদের অন্তর্ভুক্তির হার। কিন্তু দেশের অন্য বড় রাজ্যগুলির সঙ্গে তুলনা করলে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা ঢের ভাল বলে মনে করা হচ্ছে।

উচ্চশিক্ষায় এই এক বছরে মুসলিমেরাই পিছিয়ে পড়েছেন। অথচ তফসিলি ভুক্ত জাতি, জনজাতি বা অন্য অনগ্রসর জাতির মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রবণতা বেড়েছে। লক্ষণীয় ভাবে উত্তরপ্রদেশে ৫৮,৩৬৫ জন অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ মুসলিম পড়ুয়া কমেছে। মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মীরে উচ্চশিক্ষায় ২৬ শতাংশ মুসলিম পড়ুয়া কমেছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, বিহার, কর্নাটক, গুজরাত, দিল্লি বা ৩৪ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার অসমেও মুসলিম পড়ুয়া কমেছে। উল্টে অপেক্ষাকৃত ছোট রাজ্য তেলেঙ্গানা এবং কেরলে মুসলিম পড়ুয়ার অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে উচ্চশিক্ষায়।

পশ্চিমবঙ্গের ইতিবাচক ফলের কারণ হিসাবে প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য বৃত্তি এবং মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কথা বলছেন। সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের সচিব গুলাম আলি আনসারির দাবি, “স্নাতকোত্তর পর্ব পর্যন্ত বছরে অন্তত ৪৫ লক্ষ মুসলিম পড়ুয়া ঐক্যশ্রী বৃত্তি পাচ্ছেন। নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে শিক্ষাগত ক্ষমতায়নকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।” মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি আবু তাহির কামারুদ্দিনও মনে করেন, স্কুল স্তরে মজবুত ভিত্তিই উচ্চশিক্ষার প্রসারের কারণ। তাঁর কথায়, “মাদ্রাসাগুলির উন্নত পরিকাঠামো, বিজ্ঞান চর্চা, ছাত্রীদের জন্য সহৃদয় পরিবেশ তৈরির সুফল পাচ্ছি। মাদ্রাসাগুলির ম্যানেজিং কমিটিতে মায়েদেরও রাখা হয়েছে। এ সবও উচ্চশিক্ষায় আগ্রহের কারণ।”

সমীক্ষায় প্রকাশ, সামগ্রিক ভাবেও রাজ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই এগিয়ে। যা অনেকেই সমাজবদলের চিহ্ন হিসাবে দেখছেন। শিক্ষাতত্ত্ববিদ তথা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অনিতা রামপালের মতে, “সার্বিক ভাবেই দেশে মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় ভাল করছেন। এর পিছনে নানা অনলাইন পাঠ্যক্রমেরও ভূমিকা রয়েছে। তাতে আবার আশঙ্কা, মেয়েরা না বাড়ি-বন্দি হয়ে পড়েন।” উচ্চশিক্ষায় মুসলিমদের যোগদান কমার পিছনে অনিতা সার্বিক ভাবে দেশে মুসলিমদের কোণঠাসা হওয়ার অভিযোগগুলিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় স্তরে মুসলিমদের বৃত্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাজ্যে মুসলিম বিদ্বেষের আবহও হয়তো কারণ। মুসলিম ছেলেদের একাংশের শিক্ষায় অনীহার পিছনে কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সম্পর্কটা দেখতে হবে।”

পশ্চিমবঙ্গে আল-আমিন মিশনের মতো স্কুলগুলির ভূমিকাও অনেকেই মানছেন। তবে বেলডাঙার একটি মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুনের কথায়, ‘‘ঐক্যশ্রীর ভরসায় স্নাতক স্তরে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা পড়তে গিয়ে কোনও কোনও পড়ুয়া বৃত্তির টাকা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও রয়েছে। বেলডাঙার কাছেই অনুমোদিত কলেজ বছরের পর বছর শিলান্যাস হয়ে পড়ে রয়েছে। মুসলিম সমাজের শিক্ষার চাহিদা মেটাতে সরকারের আরও তৎপরতা দরকার।’’ সাঁতরাগাছিতে মেয়েদের একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষামোদী শেখ হায়দার আলি মনে করেন, “সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লকে ব্লকে অন্তত একটি ইংরেজি মাধ্যম আবাসিক স্কুল দরকার। এটা কেন্দ্রেরও নীতি। ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত বাবাদের সন্তানেরা এই সুযোগ পেলেই শিক্ষার ভিত পোক্ত হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy