Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
CBI in BJP MLA’s house

‘প্রণববাবুর একটা উইয়ে খাওয়া চিঠিও পেয়েছে’! সিবিআই বাড়ি ছাড়ার পর বললেন বিজেপি বিধায়ক

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা। এ বার প্রধান বিরোধী দল বিজেপির এক বিধায়কেরও নাম জড়াল ওই মামলায়।

পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়।

পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

প্রণয় ঘোষ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ২০:১২
Share: Save:

সিবিআই তল্লাশিতে তেমন কিছুই উদ্ধার হয়নি তাঁর বাড়ি থেকে। তবে কিছু শংসাপত্র ও পরিচয়পত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তল্লাশি অভিযানের পর এমনটাই জানালেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। সিবিআই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কী কী পেয়েছে, তার জবাব দিতে গিয়ে বিধায়ক জানান, পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি চিঠি পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। পার্থসারথির কথায়, ‘‘চিঠিটা আমায় লিখেছিলেন প্রণববাবু। উইয়ে খানিকটা খেয়ে ফেলেছে সেটা। ওই চিঠিটা আমার কাছে অমূল্য সম্পদ।’’

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা। এ বার প্রধান বিরোধী দল বিজেপির এক বিধায়কেরও নাম জড়াল ওই মামলায়। সোমবার সকালে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথির বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। এক সময়ে রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা পার্থসারথি। সিবিআই তাঁর বাড়ি থেকে বেরোয় দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ। এর পরেই পার্থসারথি জানান, বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে নয়, তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। বিধায়কের কথায়, ‘‘নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও নথি থাকলে, তা রয়েছে পুরসভায়। তাই পুরসভাতেও তল্লাশি চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। আমার বাড়ি থেকে বিশেষ কিছু উদ্ধার হয়নি। আধার কার্ড, কিছু শংসাপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’

পার্থসারথি জানান, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে। তিনি সেই সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তরও দিয়েছেন। বিধায়ক বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে সব প্রশ্ন করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটার উত্তর দিয়েছি। তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।’’ সিবিআই সূত্রে খবর, পার্থসারথি পুরপ্রধান পদে থাকার সময় পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী, গ্রুপ ডি-সহ ৭২টি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এ বিষয়ে পার্থসারথির দাবি, তাঁর সময় রানাঘাট পুরসভায় কোনও দুর্নীতি হয়নি। পার্থসারথি জানান, ভবিষ্যতে তাঁকে ডাকা হলে তিনি যাবেন। তদন্তে যথাসম্ভব সহযোগিতা করবেন তিনি।

টানা ২৫ বছর রানাঘাটে পুরপ্রধান পদে ছিলেন পার্থসারথি। প্রথম ১৫ বছর কংগ্রেসের হয়ে, পরের ১০ বছর তৃণমূলের। ১৯৯০ সালে প্রথম বার পুরসভার কাউন্সিলর হন পার্থসারথি ওরফে বাবুদা। কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের প্রধান হন ১৯৯৫ সালে। এর পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ২০১০ সালে আবারও পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় শেষ মাস ছয়েক পুর প্রশাসক বোর্ডের সভাপতি পদেও ছিলেন পার্থসারথি। মাঝে পাঁচ বছর ছিলেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। সে বার বিধানসভা ভোটের দেড় বছর আগে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১১ সালের নির্বাচনে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রার্থিপদের বাকি সব দাবিদারকে টপকে প্রার্থী হয়ে জিতেও যান পার্থসারথি। পরের বার অবশ্য কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহের কাছে হেরে যান। এর পর গত বিধানসভা ভোটের আগে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল পার্থসারথির। পরে জল্পনা সত্যি করে ২০২১ সালের ভোটের আগে জানুয়ারি মাসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়াদের সঙ্গে চার্টার্ড বিমানে তিনিও দিল্লির পথ ধরেছিলেন। দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে হাতে তুলে নিয়েছিলেন পদ্ম-পতাকা। পরে বিধানসভা ভোটে রানাঘাটেই পার্থসারথিকে প্রার্থী করে বিজেপি। তিনি জিতেও যান। পার্থসারথির বাবা বিনয় চট্টোপাধ্যায়ও রানাঘাটের বিধায়ক ছিলেন এক সময়। কাকা বিমল চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন পুরপ্রধান পদে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI Raid BJP MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE