Advertisement
২১ মে ২০২৪
রাজ্যকে দুষছেন ভাটামালিকরা

ইটভাটাগুলি পরিবেশ বিধি মানছে কি, পুলিশকে দেখার নির্দেশ দিল আদালত

বেআইনি ইটভাটাগুলি চলছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পুলিশকে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিবেশ আদালত হাওড়া এবং হুগলি এই দুই জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে, তাঁরা যেন ইটভাটাগুলি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

ছবি: সুব্রত জানা।

ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

বেআইনি ইটভাটাগুলি চলছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পুলিশকে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিবেশ আদালত হাওড়া এবং হুগলি এই দুই জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে, তাঁরা যেন ইটভাটাগুলি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে পরিবেশবিধি না মানার জন্য যে সব ইটভাটা বন্ধ করতে বলা হয়েছিল সেগুলি এখনও চলছে কিনা, তার বিস্তারিত রিপোর্ট দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। যে ভাটাগুলি চলছে সেখানে কত ইট এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে এবং কত ইট অবিক্রিত পড়ে আছে সেই সব রিপোর্টও যেন পুলিশ সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে দুই জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন পুলিশকে কোন জেলায় কতগুলি ইটভাটা বেআইনিভাবে চলছে তার তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।

হাওড়ার জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের কপি পেয়েছি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শীঘ্রই ভাটাগুলিতে অভিযান চালানো হবে।’’

হুগলি জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় যত ইটভাটা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাছে রাজস্ব বা দূষণ পর্ষদের কাগজপত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’’

জাতীয় পরিবেশ আদালতের এমন নির্দেশে প্রমাদ গুনছে ইটভাটাগুলি। প্রসঙ্গত, ইটভাটা নিয়ে জটিলতার শুরু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। যে সব ভাটা পরিবেশবিধি মানেনি গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের যথাক্রমে এক লক্ষ ও দেড় লক্ষ টাকা করে জরিমানা করে আদালত। পরিবেশবিধি না মানলে ভাটাগুলি বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়। পরিবেশবিধি মানার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ১৭টি শর্ত দেয়। ভাটা মালিকেরা সে সময়ে জানান, জরিমানা দিতে তাঁরা রাজি। তবে ১৭টির মধ্যে কিছু শর্ত সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা কার্যত অসম্ভব। সে সব শর্ত পূরণ করতে তাঁরা এক বছর সময় চান। পাশাপাশি কিছু শর্ত শিথিল করতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদনও জানান তাঁরা। যদিও রাজ্য সরকার রাজি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভাটা বন্ধ করে দেন বহু মালিক। কাজ হারান হাজার হাজার শ্রমিক। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পরে ফের সেগুলি খোলে। তবে ইতিমধ্যেই ভাটামালিকদের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকার জানিয়েছে, শর্ত শিথিল করা হবে না। তবে শর্ত মানার ক্ষেত্রে ভাটামালিকদের সময় দেওয়া হবে। যদিও এই নিয়ে লিখিত নির্দেশ দেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে ওই ভাবেই চলছিল ইটভাটাগুলি। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নয়া নির্দেশের পর বিপাকে পড়েছে ভাটামালিকেরা।

বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তথা শ্যামপুর থানা ব্রিক ফিল্ড ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরূপ মান্না বলেন, ‘‘ ‘‘বেআইনি ইটভাটাগুলির বিষয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত বিভিন্ন সময়ে রায় দিয়েছে। কিন্তু ভাটাগুলিতে পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ আগে দেওয়া হয়নি।’’ একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে অনেকে জরিমানার টাকা দিয়েছি। পরিবেশবিধি মেনে চলারও প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন ভরা মরসুমে যদি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয় তা হলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে এই সমস্যার কথা জানিয়ে আরও কিছুদিন সময় চেয়ে আবেদন করা হবে।’’ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে কয়েকজন ভাটামালিক জানান, রাজ্য সরকার শর্ত শিথিল হবে না বেলে জানালেও তাঁদের আরও সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কোথায় সে সব। উল্টে পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তাঁরাই চাপে পড়ে গেলেন।

হাওড়া জেলায় ইটভাটার সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। এর মধ্যে শ্যামপুরেই রয়েছে প্রায় দেড়শো। সব মিলিয়ে গোটা তিরিশ ভাটা চলছে আইন মেনে। বাকিগুলির কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। যে সব ভাটা বেআইনিভাবে চলছিল, পরিবেশ আদালতের রায়ের কথা জানার পরে তাদের অনেকেই ঝাঁপ ফেলতে শুরু করেছে। হুগলিতে ইটভাটা রয়েছে অন্তত ১১০টি। তার মধ্যে অনেকগুলিই পরিবেশ বিধি না মেনেই চলছে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

court Police brick industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE