Advertisement
E-Paper

খাঁচা খালি, বাঘিনি বিহনে হাহুতাশ

খাঁচাটা তো পড়ে আছে, রানিই শুধু নেই! রানি মানে রায়বাঘিনি এক অতিথি। তার বিহনে খাঁ-খাঁ করছে ঝড়খালি ব্যাঘ্র কেন্দ্রের খাঁচা! শুধু ঝড়খালির খাঁচাই খালি নয়, বেবাক খালি হয়ে গিয়েছে বনকর্মীদের মনও।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৭
এই সেই বাঘিনি।ফাইল চিত্র

এই সেই বাঘিনি।ফাইল চিত্র

খাঁচাটা তো পড়ে আছে, রানিই শুধু নেই! রানি মানে রায়বাঘিনি এক অতিথি। তার বিহনে খাঁ-খাঁ করছে ঝড়খালি ব্যাঘ্র কেন্দ্রের খাঁচা! শুধু ঝড়খালির খাঁচাই খালি নয়, বেবাক খালি হয়ে গিয়েছে বনকর্মীদের মনও।

এমনিতে সে যে খুব সুবোধ অতিথি ছিল, তা নয়। নিরন্তর ধমকধামক-গর্জনতর্জনে ব্যতিব্যস্ত রাখত কর্মীদের। মাসখানেক ধরে এই খাঁচায় চলছিল তার দাপুটে রাজপাট। মানুষ দেখলেই খিঁচিয়ে উঠত দাঁত-মুখ। তবে বাজার থেকে কেনা মাংসে অরুচি ছিল না। তারিয়ে তারিয়েই খেত কয়েক কিলোগ্রাম। খানিকটা বেয়াড়া হলেও ওই অতিথিকে ভালবেসে ফেলেছিলেন ঝড়খালি ব্যাঘ্র উদ্ধার কেন্দ্রের কর্মীরা। বুধবার দুপুরে তাকে নিয়ে জঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হতেই চত্বরটা কেমন যেন খালি খালি ঠেকছিল ওঁদের। বনকর্তাদের অনেকেই বলছেন, ঝড়খালির ওই কেন্দ্রে সুহান ও সুহানা নামে এক জোড়া বাঘ রয়েছে বটে। কিন্তু ওই রায়বাঘিনি অতিথির তেজের কাছে তারা শিশু।

এই অতিথি মাসখানেক আগে মইপীঠের লোকালয়ে ঢুকে পড়া একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘিনি। খাঁচায় টোপ দিয়ে তাকে পাকড়াও করেছিল বন দফতর। আনা হয় ঝড়খালিতে। বুধবার তাকে অচেতন করে গলায় রেডিও কলার বাঁধা হয়। তার পরে খাঁচায় পুরে লঞ্চে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আজমলমারির জঙ্গলে। সেখানেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।

সেই বাঘিনিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি এখানকার বনকর্মীদের। তাঁরা জানান, ধরা পড়ার পরেই প্রবল আক্রোশে খাঁচার জালে থাবা বসিয়েছিল বাঘিনিটি। তাতে থাবায় বিষম চোট লেগেছিল, খুবলে উঠে গিয়েছিল মাংস। ঝড়খালিতে এনে তার চিকিৎসাও করানো হচ্ছিল। বন দফতরের এক কর্মী বললেন, ‘‘ও সোঁদরবনের বাঘ। পোষ মানে না। যা তেজ! খাঁচার কাছে অচেনা কারও গন্ধ পেলেই চটে যেত।’’ এক বার তো গোসা করে ‘স্কুইজ কেজ’-এর মাথাতেও চড়ে বসেছিল! (স্কুইজ কেজ হল মূল খাঁচা সংলগ্ন ছোট একটি খাঁচা, প্রয়োজন অনুযায়ী যেটিকে সঙ্কুচিত করা যায়। বিপজ্জনক প্রাণীর ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগাতে হলে খাবারের টোপ দিয়ে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া স্কুইজ কেজে। তার পরে খাঁচার দেওয়াল সঙ্কুচিত করে তাকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।)

বন দফতরের খবর, ঝড়খালিতে আসার পরে এক বার চটে গিয়ে হুড়োহুড়ি করাতেই ফের চোট লেগে যায় পুরনো ক্ষতে। চোট সারাতে চিকিৎসক হলুদ লাগানোর নিদান দেন। কিন্তু লাগাবে কে? যা তেজ! কাছে ঘেঁষবে কে? অনেক ভেবেচিন্তে খাঁচার মেঝেতে পুরু করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় হলুদ গুঁড়ো। তাতেই কাজ হয়। কেননা গজরাতে গজরাতে খাঁচায় ক্রমাগত পায়চারি করত সে। ছড়ানো গুঁড়ো হলুদের প্রলেপ আপনা-আপনিই পড়ত তার ক্ষতে। সেই হলুদের গুণে তড়িঘড়ি সেরেও গিয়েছিল চোট।

গলায় রেডিও কলার পরিয়ে কয়েকটি বাঘকে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভিতরে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু তার বাইরের সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে তেমন কিছু করা হয়নি। তাই এই তেজী বাঘিনির গলাতেই রেডিও কলার পরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ ব্যাস জানান, এত দিন ধরা পড়া বাঘকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হতো। এ বারেই প্রথম ব্যাঘ্র প্রকল্পের বাইরের জঙ্গলে কোনও বাঘ বা বাঘিনিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হয়। সেই কারণে রেডিও কলার পরিয়ে বাঘিনিটিকে ছাড়া হয়েছে আজমলমারির জঙ্গলে।

রেডিও কলার পরানোর ব্যাপারে অবশ্য বন্যপ্রাণপ্রেমীদের অনেকের আপত্তি আছে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন কলার পরে থাকলে সংক্রমণ হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে বাঘ-বাঘিনির স্বাভাবিক জীবন। তবে বনকর্তাদের দাবি, এই রেডিও কলারটি নতুন প্রযুক্তির। দীর্ঘদিন সেটি গলায় সেঁটে থাকে না। এক বছর পরে সেই কলার নিজে থেকেই খুলে যাবে। এই প্রথম বাঘের পিছু নিয়েছিল ড্রোন-ক্যামেরা। তবে তার দৌড় ছিল জঙ্গলের আগে পর্যন্তই। বন দফতরের অনেকেই জানাচ্ছেন, সোঁদরবনের জঙ্গলের ভিতরে ড্রোন বা উড়ুক্কু যানের সাহায্যে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া জঙ্গলে ড্রোন ওড়ানোর উপরে বিধিনিষেধও রয়েছে। সেই জন্যই ড্রোন দিয়ে বাঘকে নজরবন্দি করা সম্ভব নয়।

বন দফতরের খবর, আরও কয়েকটি বাঘের গলায় এই ধরনের রেডিও কলার বাঁধার পরিকল্পনা আছে। টোপ দিয়ে পাতা হচ্ছে খাঁচাও।

আপাতত তেজী বাঘিনির ছেড়ে যাওয়া খাঁচার শূন্যতা পীড়া দিচ্ছে বনকর্মীদের। তাতে নতুন অতিথি কবে আসে, অপেক্ষায় বন বিভাগ।

Tigress Forest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy